আজিজুল আম্বিয়া

যদিও চিকিৎসা মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম একটি উপাদান হিসাবে বিবেচিত । কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের বিরাট অংশ এই সুবিধা শতভাগ ভোগ করতে পারছেন না কিছু অসৎ আর কুচক্রী মহলের কারণে। তাই গুমরে গুমরে কাঁদে বাংলার গরিব দুঃখী মানুষের অন্তর। কিন্তু কিছুই করার নেই। ক্ষমতা তাঁদের হাতে নাই যে তারা দিন বদলাতে পারেন। তাই তারা বড় অসহায়। তাই আজকে আমি লিখছি তাঁদের হয়ে মহান আল্লাহতায়ালা আমাকে লেখার সুযোগ করে দিয়েছেন এই জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই আল্লাহকে।

এখন প্রায়ই শোনা যায় চিকিৎসার জন্য মানুষ হাসপাতালে যাচ্ছে কিন্তু সেখানে হাসপাতালের বিল এত বড় হয় তখন পরিশোধ করার ক্ষমতা অনেকে হারিয়ে ফেলেন। আর শেষ পর্যন্ত মৃত মানুষের লাশটি নিতে টাকার জন্য ব্যর্থ হয়েছেন অনেক আত্মীয় স্বজনরা। দেশের কিছু নামিদামি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তির সময়ে সর্বনিম্ন ৩৫ হাজার টাকা গুনতে হয় রোগীকে। পরবর্তীতে চিকিৎসা করান আর না করান এ টাকা ফেরত দেওয়া হয় না। হার্টের রিং এ আরেক বড় ব্যবসা। কারণ এর নির্দিষ্ট দাম কিংবা কোনটা কোন রিং বা এর সঠিক মূল্য কত? এরকম কিছু সরকার থেকে প্রচার কিম্বা আইন করা হচ্ছে না বলে মানুষকে বোকা বানিয়ে টাকা লুটছেন হাসপাতালের মালিকরা। আর সিজারিয়ান হচ্ছে দরিদ্র থেকে মধ্যবিত্ত মানুষের কাছ থেকে পয়সা হাতিয়ে নেওয়ার একটি সহজ কৌশল। কারণ সরকার এ বিষয়ে কোন নিয়ম বা আইন করছেন না তাই ডাক্তার আর হাসপাতাল এই দুই শ্রেণীর কিছু মানুষরূপি অমানুষেরা অপ্রয়োজনে ও মানুষের পেট কেটে ক্ষতি করছেন মানবদেহের। আর হাতিয়ে নিচ্ছেন মানুষের পকেটের টাকা।

ওষুধের দাম নিয়ে মানুষ ঠকানো নতুন কিছু নয়। নীরব সবাই আলাপ-আলোচনা আছে বাজারে কিন্তু সরকারকে এখনো কোন নিয়ম করতে দেখা যায়নি ঔষধের গায়ে দাম লিখে দেওয়ার। এ কারণে কখনো ১০ টাকার ওষুধ কিনতে হচ্ছে ১০০ টাকায়। ডাক্তারদের ওষুধ লিখাতে কিংবা রিপোর্ট দেওয়াতে কোন নির্দিষ্ট আইন নেই। এই কারণে সামান্য সর্দি কাশির জন্য ডাক্তার দেখাতে গেলে ও ডাক্তার অনেক সময় দিয়ে দেন অনেক টেস্টের তালিকা এতে রোগীকে ও বাধ্য করানো হয় তাঁর পছন্দের হাসপাতালে টেস্ট করানো জন্য। সেখানে তাঁর কমিশন থাকে তাই তিনি এসব করছেন নির্লজ্জভাবে। এই ছাড়া আমরা জানি ভালো ডাক্তার রোগ বুঝে ওষুধ দেন তাই তুলনামূলকভাবে ওষুধ কম লিখেন।তাতে রোগী কম টাকাতে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।

কিন্তু এখন অনেক অসাধু ডাক্তার আছেন, দেখা যায় ওষুধের নাম দিয়ে প্রেসক্রিপশনকে গদ্য খাতা বানিয়ে ফেলেন। রোগীর কাছে টাকা আছে কি না সেদিকে খেয়াল না রেখে চলছে তাঁদের এই অনৈতিক কাজ । আর অনেক সময় ভালো কোম্পানির ওষুধে কমিশন কম তাই মানসম্মত নয় এমন কোম্পানির ওষুধ ও লিখতে দেখা যায় বাড়তি টাকার লোভে। কারণ একটাই কোম্পানি উনাকে কমিশন দিচ্ছে। তাই সরকারের নির্দিষ্ট নিয়ম নীতির ওভাবে প্রতিনিয়ত টাকা হারাচ্ছেন জনগণ । এ ছাড়া ডাক্তারের ভিজিট সরকার কর্তৃক নির্দিষ্ট না থাকায় ইচ্ছেমতো বিভিন্ন ডাক্তার ১ হাজার থেকে শুরু করে দুই তিন হাজার টাকা এবং কোথাও আরও বেশি টাকা নিচ্ছেন উনারা । প্রতিবাদ করলে চিকিৎসা বঞ্চিত হওয়ার ভয় আছে। তাই নীরবে সহ্য করা ছাড়া উপায় নেই। অথচ সরকার যদি একটা নির্দিষ্ট আইন করতেন তাহলে বাড়তি ভিজিট, টেস্ট বাণিজ্য, ওষুধের কমিশন বাণিজ্য, রিং বাণিজ্য , ইনসুলিন বাণিজ্য , ওষুধের মূল্যের অসমতা, হাসপাতালের নিয়ম বহির্ভূত বিলের সমাধান হত। কিন্তু আমরা সবাই জেনেও বসে আছি কেউ এদিকে খবর নিচ্ছি না বা রাখার দরকার মনে করছি না।আর সেই সুযোগে প্রতারকরা হরহামেশা আমার দেশের জনগণের পকেট খালি করে নিয়ে যাচ্ছে। যাদের উপর এই গুরু দায়িত্ব তারা কি কিছু করছেন? যদি করতেন? তবে বন্ধ হচ্ছে না কেন এসব অনিয়ম। তাহলে কী আমরা ধরে নিব উনারা লাভবান হচ্ছেন কোন ভাবে আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমার বাংলা মায়ের সন্তানরা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার সুস্থ নেতৃত্বে কোভিড এর ভ্যাক্সিন আমরা পেয়েছি খুব অল্প সময়ে । যেখানে অনেক উন্নত জাতি এখনো পায় নাই । এটা আপনার বিচক্ষনতা । তাই অনুরোধ করছি আপনি নজর দিন এই দিকে। এই অনিয়ম বেশি দিন চলতে পারে না । জনগণ আপনার আশায় বসে আছে। আর আইনজীবীদের বলছি শ্রদ্ধার সাথে অনেক কথা বলতে পারি আমরা কিন্তু এ বিষয়ে কী আমরা বিচারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারি না ? যদি মাননীয় আদালত কোন প্রজ্ঞাপন জারি করেন এই মর্মে, মানুষের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ কেন হচ্ছে , আর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে জবাবদিহির ভিতরে নিয়ে আসেন। এবং সরকারকে এ বিষয়ে আন্তরিকতার পরিচয় দিতে আহবান করেন। তাহলে তো এর সমাধান আরও সহজ হত অনেকের অভিমত। আর ভুক্তভোগিরা এই কষ্ট থেকে মুক্তি পেত।

বাংলাদেশের অনেক হাসপাতালে রোগীর সঠিক সেবা কিংবা চিকিৎসা হলেও বিশাল অংশেই হচ্ছে না বলে ভুক্তভোগীরা মনে করেন। বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালে ডাক্তারের সিরিয়ালে ও অনিয়ম পরিলক্ষিত হয় মাঝে মাঝে। এক শ্রেণীর দালালদের দাপটের কারণে রোগীর আত্মীয়স্বজন রোগীকে দেখতে হলে ও অনেক জায়গাতে টাকা দিতে হয় প্রহরীকে, ডাক্তার যে ওষুধ দেয় সেটি সরকার দিলেও অসাধু কিছু কর্মচারীর কারণে রোগীকে তা কিনে আনতে হয় অনেক জায়গায়,দীর্ঘদিন কাজ করা কিম্বা রাজনৈতিক ক্ষমতার কারণে অনেক কর্মচারী কিম্বা কর্মকর্তা ঠিকমত কাজ করেন না কিন্তু বেতন আর সুবিধা ঠিকমতো নিচ্ছেন ,এই সমস্যা গুলো অনেক পুরনো হলেও সব সময় চোখে পড়ে। কিন্তু সরকার যদি একটি বিভাগ খুলেন তারা বিদেশের মতো ছদ্মবেশে কিংবা রুগীর কাছ থেকে তথ্য নিয়ে শুধু রিপোর্ট করবেন কী রকম চিকিৎসা হচ্ছে এবং মানুষ এই চিকিৎসার উপর কতটুকু সন্তুষ্ট ইত্যাদি এবং সাথে যদি পাবলিক মতামত ও সংগ্রহ করা হয় তাহলে এই অনিয়ম সহজেই বের হয়ে আসবে আর সমাধান ও সহজ হবে। এবং দোষীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হবে সরকার । যদিও এখন সরকারি কড়াকড়ির কারণে ডাক্তারদের চেম্বারে ডাক্তাররা এখন থাকছেন তা শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। না হয় গরিব রোগীরা ভালো চিকিৎসা পাবেন না। আর তখন কিছু ডাক্তার এবং প্রাইভেট হাসপাতাল মালিকরা হবেন লাভবান। আর সাধারণ মানুষের কপালে থেকেই যাবে দুর্গতি। আমাদের দেশের প্রায় সবকটি হাসপাতালের ওয়ার্ড আর কেবিনগুলো ঠিকমতো পরিষ্কার হয় না তাই রোগী আরও রোগী হয়ে যায়। কখনো আসে রোগী এক রোগ নিয়ে,হাসপাতালে কিন্তু অপরিষ্কারের জন্য এসে হয়ে যায় ডেঙ্গুর মতো আরেকটি রোগ। এই হল আমাদের হাসপাতাল গুলির চিত্র । তাই জনগণ একটা সুস্থ স্বাস্থ্যনীতি চায় যাতে মানুষ এসব হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে পারে । আর এই হয়রানি থেকে মুক্তি দিতে পারেন কেবল বাংলার মানুষের আশা ভরসার আশ্রয়স্থল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারণ আপনি মৃত্যকেও ভয় পান না তাই যত বড়ই দুর্নীতিবাজ হউক না কেন আপনার সামনে অনেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে অতীতে। তাই আপনার উপর জাতির অনেক আশা যে, আপনি আবশ্যই কিছু করবেন । আরেকটি কথা আমাদের দেশে বৃদ্ধ মানুষের নানা হয়রানি হতে হয় যাদের কেউ নেই প্রধানমন্ত্রী মহোদয়। তাঁদের দেখভাল করার কেউ থাকে না তাই তাঁদের কেয়ার হয় না ঠিকমতো। আপনি জানেন তাঁদের যাওয়ার জায়গা নেই, তাই তাঁদের জন্য যদি শেখ মুজিব কেয়ার সেন্টার করতে পারেন । তাহলে সারাজীবন আপনি মানুষের দোয়া ও ভালোবাসা পাবেন । আর এ কারণে লন্ডনের মতো জিপি সিস্টেম এবং কেয়ার হোম চালু করতে পারেন । দেশের সব মানুষের ডাটা থাকবে জিপি সেন্টারে । কারণ তখন মানুষ দেশের আইন অনুযায়ী সরকারি সেবা পেতে তাঁদের নাম জিপিতে নিবন্ধন করবে। আর মানুষ দেশের যে কোন জায়গা থেকে ডাক্তার দেখাতে পারবে অসুস্থ হলে। এবং তাঁর রোগ সম্পর্কে ডাক্তার হাসপাতালের রেকর্ড থেকে মিনিটেই পেয়ে যাবেন সব তথ্য। দেশের সব জিপিতে রোগী ডাক্তারের সিরিয়াল সকালে ফোন করে নিতে পারবেন। ইমারজেন্সি উপর নির্ভর করে পাবেন কাঙ্ক্ষিত ডাক্তার ।তখন নিয়মই বলে দিবে কী করতে হবে ? সব ধরনের টেস্ট হবে সরকারি ল্যাব এ , সরকারের রাজস্ব বাড়বে। হারিয়ে যাবে দালালচক্র। এখানে ক্ষমতার অপব্যবহারের আর সুযোগ থাকবে না। সরকারি ফার্মেসিতে থাকবে সব ধরনের ওষুধ। সেখান থেকে নিয়ে আসবে রুগীরা। যারা গরিব তাড়া ফ্রি পাবেন ওষুধ। আর আইন এর কারণে ডাক্তার ও ওষুধ লিখতে পারবেননা সরকারি নিবন্ধনের বাহিরের কোম্পানির। তখন জবাবদিহিতা থাকবে শেষ হবে কমিশন বাণিজ্য। এ ছাড়া প্রেগন্যান্ট মহিলাদের জন্য যদি লন্ডনের মতো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যদি বার্থ সেন্টার করা যায়। তাহলে সেখানে নরমাল বাচ্চা প্রসব করানো হবে যদি কোন বড় অসুবিধা না হয়। আর তখন সিজারিয়ান বন্ধ হয়ে যাবে। বাঁচবে মানুষের টাকা আর সুন্দর দেহ। হার্টের রিং, ডায়বেটিক রুগীদের ইনসুলিন সব যদি সরকারি হাসপাতালের মাধ্যমে রোগীকে দেওয়া হয় তবে গরিবেরা পাবে ফ্রিতে আর ধনীরা কিনবেন সারা দেশে নির্ধারিত মূল্যে । আর তখন মূল্যের অসমতা দূর হবে চিরতরে । এবং লাইফ সাপোর্ট মেশিন থাকবে সরকারি হাসপাতালে তাহলে সব বাণিজ্য বন্ধ হতে বাধ্য ।মানুষ যে কোন ইমারজেঞ্চিতে ৯৯৯ কল করলে সরকারি এম্বুলেন্স মানুষের ঘর কিংবা যেখান থেকে ডাকবে সেখানে চলে আসবে। প্রশ্ন আসতে পারে এত টাকা আমরা পাব কেমনে? পদ্মা সেতু যদি আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করতে পারি তাহলে এখানে এত টাকা লাগবে না কারণ আমাদের অনেক কিছু করা আছে শুধু নিয়ম করতে হবে। তাছাড়া ব্যাংক, বিদ্যুতের বিল,বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই টাকা জনগণের কাছ থেকে উঠানো সম্ভব। এছাড়া জিপিতে নাম নিবন্ধনের সময় ও একটা ফি নিতে পারেন সরকার। কাজটি সুচারু ভাবে করার জন্য একটি টিম লন্ডনে যেতে পারেন ব্যাপক ধারনার লাভের জন্য। যদি আন্তরিকতা থাকে তবে সব সম্ভব হয় তা দেখিয়ে দিয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের মাধ্যমে । তাই আমার অনুরোধ আপনি শেখ মুজিব কেয়ার কিংবা শেখ মুজিব স্বাস্থ্যনীতি করে মানুষের উপকার করবেন প্রিয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয় । আর এই কাজটি করতে পারলে জাতি বড় উপকৃত হয় এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই ।

লেখক ও কলামিস্ট
Azizul.ambya@yahoo.co.uk