এম.আর মাহামুদ:
অবশেষে চকরিয়া পৌর নির্বাচন শান্তিপূর্ন ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। জনগণের ভোটে পূণরায় বর্তমান মেয়র আলমগীর সাহেব আগামী ৫ বছরের জন্য ক্ষমতা নবায়ন করেছে। এককথায় বলতে হয় চকরিয়া পৌরবাসী ভাগ্যবান। ভোটের দিন কোন ধরণের সহিংস ঘটনা ছাড়া নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এজন্য প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। এক্ষেত্রে প্রশাসন ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে ধন্যবাদ না জানানোটা অকৃতজ্ঞতাই হবে।

চকরিয়া ও পেকুয়ার ২৪টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন সামনে অনুষ্ঠিত হবে। ওইসব ইউনিয়নের নির্বাচন যেন পৌরসভার নির্বাচনের মত হয় সে প্রত্যাশায় ভোটারেরা অপেক্ষার প্রহর গুনছে। আমরা চাই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। এধরণের নির্বাচনে কেউ হেরে গেলেও মনকে প্রবোধ দেয়া যায়। গত ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় ২ জনের প্রাণহানিসহ বেশ কিছু ব্যক্তি আহত হয়েছে। কিন্তু চকরিয়ার পৌরসভার নির্বাচনে তেমন কোন ঘটনা ঘটেনি। কেউ নিহত হয়ে মর্গে যায়নি। আবার কেউ আহত হয়ে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য হাজির হয়নি। এটা চকরিয়াবাসীর জন্য বড়ই পাওনা।

নির্বাচনে হার-জিত থাকবে। গণতন্ত্রের সুফল যেমন আছে অনেক ক্ষেত্রে কুফলও পরিলক্ষিত হয়। যেমন একজন সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতায় যোগ্য ব্যক্তির ভোট ও অক্ষর জ্ঞানহীন ব্যক্তির ভোটের মূল্য সমান। কোন কোন ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের কারণে অযোগ্য ব্যক্তি নির্বাচিত হয়। তার একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ অভিবক্ত চকরিয়ার ১নং ইউনিয়ন। সেখানে আওয়ামীলীগের প্রার্থী ছিলেন সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত একজন মানুষ গড়ার কারিগর, তিনি পরাজিত হয়েছিলেন একজন অক্ষরজ্ঞানহীন বহু মামলার আসামীর কাছে। যা আমার বিবেকে বার বার নাড়া দিয়েছিল। যে সমাজে জ্ঞানী ও যোগ্য ব্যক্তির কদর নেই সেই সমাজে যোগ্য ব্যক্তির জন্ম গ্রহণ করাই অপরাধ। অবশ্য নির্বাচনের পরে তিনি না ফেরার দেশে চলে গেছেন।

হয়তো ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে চকরিয়া-পেকুয়ার ২৪ টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে চকরিয়া পৌরসভা ও পেকুয়ার টৈটং ইউনিয়নের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে কোন দলের কোন প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছে তা দেখার বিষয় নয়। দেখার বিষয় হচ্ছে ইউনিয়ন বাসীর সেবায় আত্মনিয়োগ করতে পারে এমন ব্যক্তি নির্বাচিত হচ্ছে কিনা?

আসল কথা হচ্ছে- চকরিয়া পৌর নির্বাচনে দ্বিতীয় বারের মত মেয়র নির্বাচিত হয়ে আলমগীর চৌধুরী পৌর নির্বাচনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। চকরিয়া পৌরসভা হওয়ার পর থেকে কোন মেয়র দ্বিতীয়বারের মত নির্বাচিত হয়নি। মেয়র মহোদয়ের কাছে বিনীত ভাবে বলব, আপনি প্রথমবার নির্বাচিত হওয়ার পর পৌর এলাকার অনেক রাস্তাঘাট উন্নয়ন করেছেন। তবে বিশাল পৌরসভায় অনেক রাস্তাঘাট এখনো চলাচল অনুপযোগী রয়েছে। আশাকরি আপনার বর্তমান সময়ের মধ্যে এসব সড়ক উন্নয়নের মুখ দেখবে।

অপরদিকে পৌরসভার প্রধান সমস্যা পৌর সদর চিরিংগার যানজট। যানজটের কারণে প্রতিনিয়ত পৌরসভা ও পৌরসভার বাহির থেকে আসা লোকজন চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। অসুস্থ ব্যক্তিকেও যথাসময়ে হাসপাতালে পৌছাতে সমস্যা হচ্ছে। একই ভাবে চকরিয়ার যে কোন প্রান্তে অগ্নিকান্ডের সুত্রপাত হলে ফায়ার ব্রিগেডদের গাড়ী পৌছতে পৌছতে বাড়ী বা দোকানপাট পুঁড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। মহাসড়কের আশপাশে ভাসমান দোকান ও ইজি বাইক, টমটম, অটো রিক্সা, ম্যাজিক গাড়ী, লোকাল বাস ও দুর পাল্লার বাসের অপ্রয়োজনীয় কাউন্টার সরানো জরুরী হয়ে পড়েছে। এসব সমস্যা সমাধান কল্পে সাবেক মেয়র ও বর্তমান জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব জাফর আলম লাঠি হাতে নিয়ে রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু আজ সেই তৎপরতা অনেকটা অনুপস্থিত। আমি বলব “শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে।”

পৌর মেয়রের সাথে উপজেলা প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, উপজেলা চেয়ারম্যান ও মাননীয় সংসদ সদস্যসহ সম্মিলিত ভাবে একটু আন্তরিক হলে চকরিয়াবাসী যানজটের ঝঞ্জাল থেকে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে।