মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। সেদিন ছিলো বুধবার। উখিয়া উপজেলার রত্নাপালং ইউনিয়নের পূর্ব রত্মাপালং বড়ুয়া পাড়ায় রাতে এক নৃশংস হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। খুন হয় একই পরিবারের ৪ জন। খুনের পর দীর্ঘ পুরো দু’বছর অতিবাহিত হয়েছে। এ চাঞ্চল্যকর ফোর মার্ডার ঘটনায় দায়েরকরা মামলায় কোন আসামী সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। আদালতে দেওয়া হয়নি মামলার চার্জশীট। কোন অগ্রগতি হয়নি-এ আলোচিত খুনের বিচার প্রক্রিয়াপূর্ব প্রাথমিক কার্যক্রমের।

এ চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডে নিহত ৪ জন হলো-সৌরভ বড়ুয়া প্রকাশ রোকেন বড়ুয়ার মা সখী বালা বড়ুয়া (৬৫), রোকেন বড়ুয়ার স্ত্রী মিলা বড়ুয়া (২৫), রোকেন বড়ুয়া ও মিলা বড়ুয়ার শিশু পুত্র রবিন বড়ুয়া (৫) এবং রোকেন বড়ুয়ার ভাতিজি ও শিপু বড়ুয়ার সন্তান সনি বড়ুয়া (৬)। এ ৪জনকে জবাই করে কে বা কারা রাত্রে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের পর দীর্ঘ ২ বছর অতিবাহিত হলেও এ পৈচাশিক হত্যাকান্ডে দায়েরকৃত মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা পিবিআই এখনো পর্যন্ত ঘটনার ন্যুনতম ক্লু বের করতে পারেননি।

এবিষয়ে ২৬ সেপ্টেম্বর উখিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নম্বর : ৪৭/২০১৯, যার জিআর মামলা নম্বর : ৪৭৮/২০১৯ (উখিয়া) ধারা : ফৌজদারি দন্ড বিধি : ৩০২ ও ৩৪। মামলায় নিহত মিলা বড়ুয়ার পিতা ও রোকন বড়ুয়ার শ্বশুর শশাংক বড়ুয়া বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার এজাহারে সুনির্দিষ্ট কাউকে আসামী করা হয়নি, আসামী অজ্ঞাত হিসাবে মামলার এজাহারে উল্লেখ রয়েছে।

মামলাটির এ পর্যন্ত ৫ জন তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রথম আইও হলেন, উখিয়া থানার এসআই মোহাম্মদ ফারুক হোসেন, দ্বিতীয় আইও ছিলেন-উখিয়া থানার তৎকালীন ওসি (তদন্ত) নুরুল ইসলাম মজুমদার। ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর মামলাটি কক্সবাজার জেলা পুলিশ থেকে পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন)-কে হস্তান্তর করা হয়। পিবিআই থেকে প্রথমে ইন্সপেক্টর পুলক বড়ুয়াকে আইও নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০২০ সালের জুন মাসে আবার আইও পরিবর্তন করে ইন্সপেক্টর কৈশনু মার্মাকে চতূর্থ নম্বর আইও নিয়োগ দেওয়া হয়। বর্তমানে নতুন একজন আইও মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পালন করছেন। মামলাটির পাঁচ পাঁচজন আইও পরিবর্তন হলেও, ঘটনার দীর্ঘ দু’বছর অতিবাহিত হলেও মামলাটির একজন আসামীও এ পর্যন্ত সনাক্ত করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থা।

মামলায় রোকেন বড়ুয়ার ভাই শিপু বড়ুয়ার স্ত্রী রিপু বড়ুয়া, রোকেন বড়ুয়ার ভায়রা ভাই অসীম বড়ুয়া এবং তাদের নিকটাত্মীয় উজ্জ্বল বড়ুয়াকে সন্দেহজনকভাবে গ্রেপ্তার করা হলেও তার তিনজনই ইতিমধ্যে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

তারা আদালত থেকে জামিন নিতে গিয়ে মামলার বাদী শশাংক বড়ুয়া গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনই ঘটনার সাথে সংপৃক্ত নয় এবং তাদের জামিন পেতে বাদী শশাংক বড়ুয়া’র কোন আপত্তি নেই মর্মে বাদী আদালতে উপস্থিত হয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এজন্য গ্রেপ্তার হওয়া সন্দেহজনক আসামীরা দ্রুত আদালত থেকে জামিন লাভ করেছে বলে জানান, পিপি এডভোকেট ফরিদুল আলম।

জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম আরো বলেন, মামলাটির চার্জশীট না হওয়ায় মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তত করা যাচ্ছেনা। চার্জশীট দাখিলের বিষয়ে আইও আদালত থেকে এ পর্যন্ত ১১ বার সময় নিয়েছেন।

উখিয়ার চাঞ্চল্যকর এই ফোর মার্ডার মামলা সম্পর্কে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কক্সবাজার জেলা সভাপতি এডভোকেট দীপংকর বড়ুয়া পিন্টু-দীর্ঘ ২ বছরেও এ হত্যাকান্ডের প্রকৃত আসামীকে সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে না পারায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। চার্জশীট প্রদানে দীর্ঘসুত্রিতা স্থানীয়দের মাঝে আস্থার সংকট তৈরি করবে। যা হবে খুবই দুঃখজনক। এডভোকেট দীপংকর বড়ুয়া পিন্টু বলেন, ন্যায় বিচারের স্বার্থে তদন্তের দায়িত্বে থাকা পিবিআই’কে এ মামলাটির রহস্য উদঘাটনে আরো বেশি তৎপর হওয়া উচিত।

উখিয়ার রত্নাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুল আলম চৌধুরী বলেন, প্রথম দিকে এ চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের ক্লু উদঘাটনে কক্সবাজার জেলা পুলিশ বেশ তৎপর ছিলো। তারা দিনরাত পরিশ্রম করেছেন। মামলাটির তদন্তভার পিবিআই কে দেওয়ার পরও তদন্তে গতি ছিলো। এখন তদন্ত কার্যক্রম অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে। চেয়ারম্যান খায়রুল আলম চৌধুরী আরো বলেন, সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের মতো এ মামলাটি চার্জশীট প্রদানে দীর্ঘ সুত্রিতা পরিহার করে প্রকৃত খুনীদের আইনের আওতায় আনার আহবান জানান।

এ মামলার তদন্তে অগ্রগতির বিষয়ে জানার জন্য কক্সবাজার পিবিআই’র দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সাথে অনেক যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।