এ.এম হোবাইব সজীব, মহেশখালী:
শেষ হলে বহুল আলোচিত মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ ইউপি নির্বাচন। ভোট শেষ হওয়ার আগ মূহূর্ত পর্যন্ত জনপ্রিয়তায় এনামুল হক চৌধুরী রুহুল চেয়ারম্যান টেলিফোন প্রতীক নিয়ে জয়জয়কার। কিন্তু ১৮০ ভোটের ব্যবধানে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাবেক ছাত্রনেতা এস এম আবু হায়দারের কাছে হেরে যান এনামুল হক চৌধুরী রুহুল। এই পরাজয়কে সহজে মেনে নিতে পারছে না শুভাকাঙ্খীসহ সাধারণ ভোটাররা।
ভোট গণনার পর থেকে এই জল্পনা কল্পনা নিয়ে সাধারণ ভোটারদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। শুধু সরকারের মেগা প্রকল্প এলাকার এই জনপদে নয় পাশ্ববর্তী প্রত্যন্ত ইউনিয়নে ছড়িয়ে পড়েছে। কখন এ চিন্তাধারা মানুষের মাথা থেকে থেমে যাবে তা আল্লাহ জানে।
জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল উপজেলার মাতারবাড়ী ইউনিয়নের ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলে ও পর পর দুইবার করোনার কারণে নির্বাচন স্থগিত করা হয়। এরই মধ্যে স্ব-স্ব প্রার্থীদের অর্থকড়ি শেষ হওয়ায় নির্বাচনের আমেজ অনেকটা ভাটা পড়ে। প্রার্থীরা অনেকে প্রচারণা থেকে সরে যায়।
এই অবস্থায় হঠাৎ চলতি মাসে নির্বাচনের তফসিল পুণরায় ঘোষণার সাথে সাথে প্রার্থীরা আবারও নড়চড়ে বসে। নির্বাচনের দিন স্বল্প হয়ে যাওয়ায় প্রার্থীরা নিজেদের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে রাত-দিন ভোটাদের ধারে ধারে ধর্ণা দে। পাশাপাশি নগদ অর্থকড়ি ব্যয় করতে থাকেন। নির্বাচনের দিন চেয়ারম্যান প্রার্থী এনামুল হক রুহুলের জয়জয়কার আওয়াজ শুনা গেলেও শেষ মেশ ২০ সেপ্টেম্বর সেই বহুল আলোচিত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাবেক ছাত্রনেতা এস এম আবু হায়দারের কাছে মাত্র ১৮০ ভোটে হারিয়ে গেলেন সেই সাবেক চেয়ারম্যান এনামুল হক চৌধুরী রুহুল।
এ ঘোষণার সাথে সাথে ফলাফল ঘোষণা বিলম্ব ও কারচুপি অভিযোগ এনে বিক্ষুব্ধ টেলিফোন প্রতীকের সমর্থক নারী-পুরুষ রাতে লাঠি ও ঝাড়ু মিছিল করে মাতারবাড়ী প্রধান সড়ক ৩ ঘন্টা অবরোধ করে রাখে। তখন তাঁরা নিজেরা অঝোরে কাঁদলেন অপরকেও কাঁদালেন। অল্প ভোটের ব্যবধানে তাঁদের প্রিয় মানুষ হারিয়ে যাওয়াকে কিছুতে মানতে পারছেনা তার কর্মী সমর্থকরা। তবে পরে উপজেলা থেকে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য গিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।
জনতার এই বিক্ষুব্ধ ক্ষোভে প্রমাণ করে এনামুল হক চৌধুরী রুহুলের জনপ্রিয়তা কোথায় গিয়ে বা কি কারণে হঠাৎ আটকিয়ে গেল! এ প্রশ্ম সকলের মুখে মুখে। তবে এলাকার লোকজন মনে করছেন এনামুল হক চৌধুরী রুহুল এলাকার হতদরিদ্র মানুষের উন্নয়নে তাঁর নিরন্তর প্রয়াস সব মহলেই প্রশংসা কুঁড়িয়েছেন। তাই তিনি জনতার নেতা হয়ে মানুষের কাতারে থাকবে আজীবন।
অন্যদিকে প্রচার রয়েছে খুব অল্প বয়সে নির্বাচিত চেয়ারম্যান পিচ্চি এস এম আবু হায়দার হাটি -হাটি পা পা করে স্কুল ছাত্রলীগের নাম লিখিয়ে এগিয়েছে সংগোপনে। অনেকে বলছেন প্রবল প্রতিভা আর আর অদম্য ইচ্ছা শক্তিকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারেনা। সে ফুটবেই। তেমনি আজ আবু হায়দার তার সৎ সাহস, ধৈর্য, প্রজ্ঞা আর প্রতিভার গুনে আজ এ অবস্থান সৃষ্টি করতে স্বক্ষম হয়েছে বলে মাঠে-ঘাটে প্রচার হচ্ছে। অনেকে বলছেন সাবেক চেয়ারম্যান চাচা মরহুম আলতাফ উদ্দীন মাস্টারের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে তিনি জনতার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
স্থানীয় ভোটার মোহাম্মদ সাইফুলসহ অনেক ভোটার বলেছেন, সারাদিনের নানান জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে ভাগ্য পরিবর্তন হলো আবু হায়দারের। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছি। ভোট কেন্দ্রে সহিংসতার কথা আকাশে-বাতাসে চউর হলেও তেমন বড় ধরনের ঘটনা-ঘটেনি। নির্বাচনী সহিংসতা রুখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কঠোর অবস্থান ছিল।
মাতারবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি জি এম ছমি উদ্দিন এক প্রতিক্রিয়া বলেন, আমি বলছিনা নির্বাচিত চেয়ারম্যান আমার সহকর্মী আবু হায়দার সে ফেরেস্তা, মানুষ হিসাবে মানবিক গুনাবলিতে দোষ ত্রুটি থাকবেই। তার বয়স আর পারিপার্শিক কারনে সে হয়তো কিছুটা হতে পারে সাধারন মানুষ। হতে পারে ভুল আর থমকে যাওয়া। কিন্তু তারপরও প্রতিকুলতা তাকে আটকাতে পারবেনা। যেমন পারেনি বৃটিশের মতো শক্তি কাজী নজরুল ইসলামকে দমিয়ে রাখতে। তবে এখন সরকারের পেষ্টিত ইস্যুর আসনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে তিনি আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মান রক্ষা করলেন।
অপরদিকে মাতারবাড়ীতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এসএম আবু হায়দার বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী বিদ্রোহী প্রার্থী এনামুল হক চৌধুরী রুহুল অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। পাঁচ বছর পর এ প্রতিযোগিতা হয়। এই নির্বাচনকে ঘিরে মাতারবাড়ী হেভিওয়েট ৫ জন প্রার্থী প্রতিযোগিতা করেন। তবে সকলেই ছিলে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী। লড়াই হয়েছে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ।