নির্বাচনে প্রাণহানি-সহিংসতা কেন?

আবু মোর্শেদ চৌধুরী: স্থানীয় সরকারপদ্ধতির নির্বাচনে (পৌরসভা ও ইউপি) দলীয় প্রতীক থাকতে নেই। খুনাখুনি, সংঘর্ষ অথবা সহিংসতার মূল কারণ এটি। দলীয় প্রতীক সংসদীয় নির্বাচনে ব্যবহৃত হলে সমস্যা নেই। কিন্তু স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহারের কারণে সঠিক ও যোগ্য নেতৃত্ব উঠে আসতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়।
দলীয় প্রতীক ব্যবহারের কারণে বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পাটির কেউ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। এখন নির্বাচনী মাঠে বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের সমর্থক প্রার্থী। কেউ দলের মনোনীত, কেউ দলের বিদ্রোহী। দলীয় প্রতীক না থাকলে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত হতো। এখন আওয়ামী লীগের একক প্রার্থীর বিরুদ্ধে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে নামায় দলীয়ভাবে কোন্দলের সৃষ্টি হচ্ছে, নেতা-কর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত। এসব সামাল দিতে গিয়ে কিংবা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় অথবা বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষ সমর্থন করায় দলের ১১ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ৪ জন নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। ফল হয়েছে উল্টো, বহিষ্কৃত ব্যক্তিরা চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে নেমেছেন। এতে সংঘাত হানাহানিতে রূপ নেয়।
অন্যদিকে সরকারদলীয় প্রতীক নিয়ে যাঁরা মাঠে নেমেছেন, তাঁদের প্রতি অন্যান্য সেবা প্রদানকারী সংস্থা কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্বলতা থাকে। এ কারণে সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না। স্থানীয় সরকার নির্বাচনপদ্ধতিতে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ বাতিল করা হলে এ ধরনের গন্ডগোল কিংবা হানাহানি এড়ানো যায়।

ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র, দলীয় কোন্দল আর সংঘাতপূর্ণ নির্বাচনের কথা আগাম পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে। এরপরও বিভিন্ন কেন্দ্রে হানাহানির ঘটনা কীভাবে দেখছেন?

আবু মোর্শেদ চৌধুরী: নির্বাচনে হানাহানির ঘটনা ঘটবে, সে খবর সবার জানা ছিল। প্রশাসন মোটামুটিভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল, কিন্তু তা পর্যাপ্ত ছিল না। প্রশাসন অনেক সময় তৃণমূলের অবস্থা বুঝতে পারে না। বিশেষ করে ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায়ের নির্বাচনের ক্ষেত্রে সঠিক অ্যাসেসমেন্ট করতে পারে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতারও অভাব আছে। অজপাড়াগাঁয়ে কোন ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া যায়, অথবা দুর্গম উপকূলীয় এলাকায় সহিংসতার ঘটলে কী করতে হবে—সে বিাষয়ে আগাম কোনো ধারণা বা প্রস্তুতি থাকে না তাদের। আর নির্বাচনের জন্য পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও র‌্যাব যে নিরাপত্তা দেয়, তা পর্যাপ্ত নয়। গ্রামপর্যায়ে দ্রুত যাতায়াতের ব্যবস্থাও নাজুক। তা ছাড়া নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের নিয়ে শুধু নির্বাচনী আইনবিষয়ক আলোচনা হয়; অথচ তা হওয়া উচিত ছিল জনগণকে নিয়ে সহিংসতা বর্জনে সহাবস্থান নিশ্চিত করা নিয়ে। তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে।ভোটারের অভিযোগ, নির্বাচনে কালোটাকার ছড়াছড়ি হয়েছে বেশি। এ জন্য এত সংঘাত–হানাহানির ঘটনা। আপনার কী মত?

ভোটারের অভিযোগ, নির্বাচনে কালোটাকার ছড়াছড়ি হয়েছে বেশি। এ জন্য এত সংঘাত–হানাহানির ঘটনা। আপনার কী মত?

আবু মোর্শেদ চৌধুরী: কালোটাকার ছড়াছড়ি চলছে বেশ। যেহেতু কক্সবাজার অন্যান্য জেলার তুলনায় ব্যতিক্রমী, এখানে ইয়াবা কারবার, চোরাচালান ও হুন্ডি থেকে প্রচুর কালোটাকা অর্জন করে অনেকে রাতারাতি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। পুলিশের হাতে আত্মসমর্পণকারী অনেক ইয়াবা কারবারিও নির্বাচনে লড়ছেন। তাঁদের নিয়ন্ত্রণ কিংবা কালোটাকার ব্যবহার রোধ করা খুবই কঠিন। সংসদীয় নির্বাচনে প্রার্থীদের সম্পদ ও আয়–ব্যয়ের হিসাব হলফনামামূলে দাখিল করতে হয়। এখানে সে সুযোগ নেই। একজন ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীর সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা খরচের কথা বলা আছে , কিন্তু কেউ কেউ কোটি টাকাও খরচ করে ফেলেছেন। এসব ধরার লোক নেই। আমার জানামতে, কালোটাকার ছড়াছড়ি বন্ধ না হওয়ায় সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। যেমন একজন প্রার্থী কালোটাকায় ভোট কিনলে, অন্য প্রার্থীরা বসে না থেকে বিকল্প পথে জয়লাভের চেষ্টা চালাবেন—এটাই স্বাভাবিক। এতে সংঘর্ষ, গোলাগুলি, হানাহানি, ব্যালট ছিনতাই বা লুটের ঘটনা ঘটতেই পারে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে কালোটাকা রোধের বিকল্প নেই।