মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

চাঞ্চল্যকর মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার আরো ৩ জন সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহন ও আসামীদের পক্ষে জেরা সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার ২০ সেপ্টেম্বর তৃতীয় দফায় সাক্ষ্য গ্রহনের প্রথম দিনে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর আদালতে এসব সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন করা হয়।

রাষ্ট্র পক্ষে মামলাটির আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) এডভোকেট ফরিদুল আলম, অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট মোজাফফর আহমদ, এপিপি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমদ সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। এসময় বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস এর আইনজীবী এডভোকেট মোহাম্মদ মোস্তফা, এডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, এডভোকেট মাহবুবুল আলম টিপু, এডভোকেট ফারজানা, এডভোকেট ছৈয়দুল ইসলাম, এডভোকেট এসমিকা প্রমুখ আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

সোমবার প্রথমে আদালতে সাক্ষ্য দেওয়া আবদুল হামিদ (৩৮) টেকনাফের শামলাপুরের পুরান পাড়ার মৃত ফজল করিমের পুত্র। তিনি শামলাপুরের এপিবিএন চেকপোস্ট এলাকায় ভ্যানগাড়ী নিয়ে ভাত বিক্রি করতেন। সাক্ষ্য প্রদানকালে তিনি পুরো হত্যাকান্ড প্রত্যক্ষ করেছেন বলে আদালতে জবানবন্দী দেন।

আসামীদের পক্ষে আদালতে এডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত, এডভোকেট দিলীপ দাশ, এডভোকেট শামশুল আলম, এডভোকেট মমতাজ আহমদ (সাবেক পিপি) এডভোকেট মোহাম্মদ জাকারিয়া, এডভোকেট চন্দন দাশ, এডভোকেট এম.এ বারী, এডভোকেট ওসমান সরওয়ার শাহীন, এডভোকেট মোশাররফ হোসেন শিমুল প্রমুখ সাক্ষী আবদুল হামিদ’কে জেরা করেন।

আবদুল হামিদ’কে জেরা শেষ হলে আদালতে উপস্থিত থাকা সাক্ষী ফিরোজ মাহমুদ ও মোহাম্মদ শওকত আলী’র সাক্ষ্যকে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামী পক্ষের আইনজীবীদের আদালতে আবেদনের প্রেক্ষিতে উভয় সাক্ষীকে টেন্ডার করা হয়। অর্থাৎ পূর্ববর্তী সাক্ষী আবদুল হামিদ আদালতে যে সাক্ষী ও জেরার জবাব দিয়েছেন, ফিরোজ মাহমুদ ও মোহাম্মদ শওকত আলী’র সাক্ষ্য ও জেরা অনুরূপ বলে গণ্য করা হয়। সাক্ষী ফিরোজ মাহমুদ টমটম চালক এবং সাক্ষী শওকত আলী দিনমজুর।

এনিয়ে সোমবার পর্যন্ত এই মামলার মোট ৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন করা হলো।
মঙ্গলবার ২১ সেপ্টেম্বর তৃতীয় দফায় দ্বিতীয় দিনের মতো এই মামলার অন্য সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা করা হবে।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সেরেস্তাদার এম. নুরুল কবির জানান-সোমবার ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একটানা ৩ দিন সাক্ষ্য দিতে আদালতে উপস্থিত থাকার জন্য চার্জশীটের ২৯ নম্বর পর্যন্ত আরো মোট ২৩ জন সাক্ষীকে সমন দেওয়া হয়েছিলো। তারমধ্যে ৪ জন সাক্ষী সোমবার আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। সাক্ষীরা যথারীতি আদালতে উপস্থিত থাকলেও আসামীদের পক্ষে সাক্ষীদের দীর্ঘ জেরার কারণে সমন দেওয়া সকল সাক্ষীদের সাক্ষ্য নির্ধারিত দিনে গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছেনা বলে জানান-এপিপি ও কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমদ।

এর আগে দু’দফায় মোট ৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন করা হয়। যাঁরা আগে সাক্ষ্য দিয়েছেন, তারা হলো-মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস ও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী সাহিদুল ইসলাম সিফাত, মোহাম্মদ আলী, মোহাম্মদ আমিন, মোহাম্মদ কামাল হোসেন ও হাফেজ শহীদুল ইসলাম।

সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত সাক্ষ্য দিতে যাদের সমন দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন-মেজর (অব:) সিনহার মা মোছাম্মৎ নাসিমা আক্তার, মেজর (অব:) সিনহার ‘জাস্ট গো’ ফ্লিম টিমের সদস্য শিপ্রা দেবনাথ, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরী, ডা. রনধীর দেবনাথ, সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান প্রমুখ বলে জানান-সেরেস্তাদার এম. নুরুল কবির।

সোমবার থেকে সাক্ষ্য গ্রহণকালে মামলার ১৫ জন আসামীকেও কড়া নিরাপত্তায় আদালতে হাজির করা হয়। মামলায় কারাগার থেকে এনে আদালতে যে ১৫ আসামিকে হাজির করা হবে, তারা হলো : বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া।প, কনস্টেবল সাগর দেব, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, পুলিশের মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।

গত ২৩ আগস্ট সকালে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর আদালতে মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসের সাক্ষ্য প্রদানের মাধ্যমে চাঞ্চল্যকর মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক এ বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।