অন্তর দে বিশাল :

কক্সবাজার শহর – খুরুশকুল সড়কে হটাৎ করে সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া দ্বিগুণ গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের।
এমনিতে রোদ-বৃষ্টি, ঝড়-তুফান-কুয়াশার কারণে ভাড়া বেড়ে যাওয়া চিরাচরিত রেওয়াজ সড়কটিতে।

তবে মাস ছয়েক জুড়ে একটা প্রথা চালু করেছেন সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালকরা। খুরুশকুল থেকে কক্সবাজার শহরে আসতে হলে গুনতে হবে আগের ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণ। তারউপর দীর্ঘদিন ধরে সন্ধ্যা হলেই ভাড়া বৃদ্ধি করে ফেলে সিএনজির চালকেরা। এ সময় ভাড়া বেশি দিয়ে যাত্রীদের চলাচল করতে এক প্রকার বাধ্য করেন তারা।

একাধিক ভুক্তভোগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা যায়, খুরুশকুল হতে কক্সবাজার শহরের দূরত্ব ১ কিলোমিটার, খুরুশকুল টাইম বাজার হতে ৩ কিলোমিটার, আগের ভাড়া ২০ টাকা হলেও তা এখন বৃদ্ধি করে ৩০ টাকা করেছে সিএনজি অটোরিকশা চালকেরা।
খুরুশকুলের যে প্রান্ত হতে সাধারণ যাত্রীরা সিএনজিতে উঠুক না কেন ভাড়া গুনতে হচ্ছে আগের তুলনায় ১০/২০ টাকা পর্যন্ত।
যা নিয়ে প্রতিনিয়ত যাত্রীদের সাথে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হচ্ছে চালকেরা।
সন্ধ্যার পরও এই চিত্র আরো ভয়াবহ আকারে ধারণ করে সড়কটিতে। সড়কটিতে বিকল্প যানবাহন হিসেবে টমটম চালিত ইজিবাইক থাকলেও প্রতিনিয়ত ইজিবাইকের সড়ক দূর্ঘটনার ফলে তা এড়িয়ে চলে সাধারণ মানুষ।
সন্ধ্যার পর যাত্রীরা সিএনজি অটোরিকশাকে একমাত্র যানবাহন হিসেবে চলাচল উপযোগী মনে করায় যাত্রীদের একপ্রকার জিম্মি করে আদায় করে দ্বিগুণ এর চেয়ে অধিক ভাড়া। প্রয়োজনে রাত গড়িয়ে সকাল হবে, তবুও তারা মনমতো ভাড়া না হলে যাত্রী নিয়ে যাবেন না। এ নিয়ে সড়কে চলাচলরত হাজারো যাত্রীর অভিযোগ থাকলেও বিষয়গুলার প্রতি কর্ণপাত করে না সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

শহরের পাশ্ববর্তী ইউনিয়ন হওয়ায় খুরুশকুলের প্রায় একতৃতীয়াংশ লোকজন জীবিকার তাগিদে ও নানা প্রয়োজনীয় কাজে প্রতিনিয়ত আসা যাওয়া করে শহরে।
আর নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে সচেতন ও সাধারণ যাত্রীরা একমাত্র পরিবহন হিসেবে সিএনজি অটোরিকশাকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করে থাকে, সেই সুযোগ কে কাজে লাগিয়ে ভাড়া নিয়ে চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে চালকেরা।

এনিয়ে খুরুশকুলের একাধিক সিএনজি অটোরিকশার চালকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, আগের তুলনায় ভাড়া ১০ টা বৃদ্ধি করা হয়েছে, আপনারা দেখতেছেন শহরের প্রবেশ মুখে পুরো সড়কের অবস্থা কতটা খারাপ। আগে যেখানে আমাদের শহরের আসা যাওয়া করতে ১৫/১৬ মিনিট লাগতো এখন সেটা দ্বিগুণ হয়েছে। প্রায় জায়গায় চাঁদা দেওয়া লাগে। আমরা যারা ভাড়া নিয়ে গাড়ি চালায় সন্ধ্যা কিংবা রাতে মালিককে ৪০০/৫০০/৬০০ টাকা দিয়ে দিতে হয়। এক প্রকার বাধ্য হয়ে এই ভাড়া বাড়াতে হয়েছে আমাদের।

সন্ধ্যা হলে ভাড়া তার অধিক হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তারা জানান,আসলে খুরুশকুলে যে পরিমাণ সিএনজির সংখ্যা বৃদ্ধি হয়েছে তা সারাদিন চলাচল করলেও সন্ধ্যা হলেই গ্যারেজে ঢুকে পড়ে। যার কারণে সংকট সৃষ্টি হয় সিএনজির। কাকে উঠিয়ে কাকে নামাবো, তাই আমরা ইচ্ছে মত ভাড়া দাবি করি। এখানে আমাদের কিছু করার থাকে না।

খুরুশকুলের দক্ষিণ হিন্দু বাসিন্দা, পলাশ দে নিজের ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখেন,
বাজারঘাটা থেকে খুরুশকুল টাইম বাজার ২০ টাকা থেকে এখন ৩০ টাকা ৩ কি.মি আর বাজার ঘাটা থেকে রামু চৌমুহনী ৫০ টাকা ১৬ কি.মি।খুরুশকুলের সি এন জি, বিমানের তৈল দিয়ে চলে তার জন্য ৩০ টাকা ভাড়া?

একই ইউনিয়নের টাইম বাজার এলাকার ৮ নং ওর্য়াডে সম্ভাব্য মেম্বার প্রার্থী মোঃ আনোয়ার হোসেন লেখেন,খুরুশকুল-বাজার ঘাটা সিএনজি ভাড়া বৃদ্ধি সংক্রান্তে কর্তৃপক্ষ নিরব কেন? কোন অপ্রীতিকর ঘটনা হলে দায়ী কে নেবে?

খুরুশকুল এলাকার প্রভাবশালী এক রাজনীতিবিদের মতে, অবাক হওয়ার মত কাজ হচ্ছে, সি এন জি ড্রাইভারদের কাজ থেকে মাসিক মাসোয়ারা পোষাকদারী কিছু বাহিনী ,প্রতিদিন পৌর কর্তৃপক্ষের নজরানা ,শ্রমিক ইউনিয়নের নজরানা, বাজার ঘাটা,খুরুশকুল রাস্তার মাথায় নজরানা শ্রমিক ভাইয়েরা যাবে কোথায়?যারা সি এন জি শ্রমিক ভাইদের কাজ থেকে নজরানা নেই তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন। আশা করি ভাড়া এমনে কমে যাবে।

সচেতন মহলের মতে, সিএনজি অটোরিকশা চালকেরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ভাড়া বৃদ্ধি করে থাকেন। না হলে হটাৎ করে কেন ভাড়া বৃদ্ধি করা হচ্ছে? শহরের সাথে এত দূরত্ব কম হতেও কেন বা খুরুশকুলের মানুষ তাদের কাছে জিম্মি হবে। স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় সিএনজি চালকরা বেশি ভাড়া আদায় করছেন।

এই বিষয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন রায় জানান,
ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে বিষয়টি শুনছি। অভিযোগ পেলে নিশ্চয়ই যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।