ইমাম খাইর, কক্সবাজার:

৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা কোর্সকে ৩ বছরে রূপান্তরে কমিটি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এমন সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক ও হঠকারি। মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্ত আত্মঘাতি, যা পুরো ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিবে। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের ন্যায্য অধিকার আইনী জটিলতায় আটকে রাখা হয়েছে। দক্ষতাকে থামিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে।

বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র শিক্ষক পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদ কক্সবাজার জেলা শাখার মানববন্ধনে বক্তাগণ এসব কথা বলেন।

সংগঠনের সভাপতি রিটেন চামকার সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনে বিক্ষুব্ধ প্রকৌশলীগণ বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে এ শিক্ষার প্রতি মেধাবী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন; জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কর্মক্ষেত্রে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারগণ অবমূল্যায়িত হবেন, দেশ বিদেশের কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি বাধাগ্রস্ত হবে, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের যোগ্যতা নিয়ে কর্মক্ষেত্রে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে।

সদস্য সচিব মো. জালাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় সভায় বক্তারা আরো বলেন, ডিগ্রি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের সাথে এডুকেশনের পার্থক্য ৩ বছর হওয়ায় চাকরির একধাপ নিচে বেতন ও মর্যাদা নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হবে মর্যাদা হারাবে এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের চেয়ে নিম্ন মানের হয়ে যাবে।

আন্তর্জাতিক মানের ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সকে ৩ বছরে রূপান্তরে অযৌক্তিক ও আত্মঘাতি উদ্যোগ বন্ধ, বিএনবিসি-২০২০ এর জনস্বার্থ বিরোধী সংজ্ঞা ও ধারা উপধারা সংশোধন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার সীমাহীন সংকট সমাধান ও ছাত্র শিক্ষক পেশাজীবীদের পেশাগত সমস্যা সমাধান এবং প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত ও নির্দেশিত ৪ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন- গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান, সংগঠনের উপদেষ্টা শহীদুল ইসলাম, যুগ্ম সদস্য সচিব জাকিয়া সুলতানা ও উপদেষ্টা হেলাল মোর্শেদ সোহাগ। বিভিন্ন অফিসে কর্মরত  ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা কেন্দ্রীয় সংগঠনের ডাকা এই কর্মসূচীতে অংশ গ্রহণ করেন।

মানববন্ধন শেষে তারা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অর্থমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী এবং গৃহায়ন ও গণপূর্তি মন্ত্রীর নিকট চারদফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি প্রেরণ করেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাধারণ) এর মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান।

দাবিসমূহ হলো-
১. একাধিক জাতীয় কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদিত চলমান ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সকে হ্রাস করে ৩ বছরে রূপান্তরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অযৌক্তিক ও আত্মঘাতি উদ্যোগ অবিলম্বে বন্ধ এবং ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এই কোর্স আধুনিকায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

২. প্রধানমন্ত্রীর ২০১৮ সালের সদয় নির্দেশনা ও সরকারের আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশের আলোকে বিএনবিসি-২০২০ এর জনস্বার্থবিরোধী সংজ্ঞা ও ধারা-উপধারা সংশোধনণ এবং আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশের আলোকে ঢাকা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ সংশোধনপূর্বক গেজেট প্রকাশ করতে হবে।

৩. প্রধানমন্ত্রীর সদয় প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের স্পেশাল ইনক্রিমেন্ট প্রদান, পদোন্নতির কোটা ৫০ শতাংশে উন্নীতকরণ, সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা, পেট্রোবাংলা করপোরেশন ও বিদ্যুৎ বিভাগের বিভিন্ন কোম্পানিতে ডিগ্রি ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার অনুপাত ১:৫ রেখে জনকল্যাণে অর্গানোগ্রাম প্রণয়ন, সকল বিদ্যুৎ কোম্পানিতে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতি প্রদানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা, প্রাইভেট সেক্টরে কর্মরত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের ন্যূনতম বেতন নির্ধারণ ও পদবী প্রদান এবং শুধু চাকুরির উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করতে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারি সহযোগিতা প্রদান করতে হবে।

৪. পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও টিভিইটি প্রতিষ্ঠানসমূহের শিক্ষক স্বল্পতা, শ্রেণিকক্ষ, ল্যাব, ওয়ার্কসপ সংকটসহ শিক্ষকদের পদোন্নতি ও শিক্ষক-কর্মচারীদের দ্বিতীয় শিফট ও দুর্যোগকালিন সময়ে দায়িত্ব পালনের সম্মানি প্রদান, STEP প্রকল্পের শিক্ষকদের নিয়মিতকরণ ও বেতন, পদোন্নতি প্রদান এবং ছাত্র ছাত্রীদের বৃত্তি ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং ভাতা বৃদ্ধিসহ ২৯টি ইমার্জিং টেকনোলজির বেকার ডিপ্লোমা গ্রাজুয়েটদের কর্মসংস্থানের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করতে হবে।