নুরুল কবির, বান্দরবান:
বান্দরবানের রুমার বিতর্কিত ব্রিজটিকে ‘জায়েজ’ করতে অনুমোদনের আগেই পাহাড় কেটে রাস্তায় তৈরি করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)। গত কিছুদিন যাবত ব্রিজটির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন রেখে সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এতে করে সরকারের নজরে আসে বিষয়টি। গঠন করা হয় তিন সদস্যের একটি তদন্ত দল।

তদন্ত দলটি গত রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) সরেজমিন তদন্তে যায়। এসময় তারা স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলেন। এবং যারা ব্রিজটি বাস্তবায়ন করছে সেই এলজিইডি কর্মকর্তাদের সাথেও কথা বলেন।

এসময় তিনি সাংবাদিকদের কাছেই প্রশ্ন করেন, ব্রিজটি করা কতটুকু যৌক্তিক? সাংবাদিকরা বলেন, ব্রিজ করা নিয়ে তাদের কোনো বক্তব্য নেই, তবে রাস্তা হওয়ার অনেক আগেই ব্রিজ করায় সাধারণ মানুষের প্রশ্নগুলোই সাংবাদিকরা সংবাদমাধ্যমে তুলে ধরেছেন।

এসময় এলজিইডির সিনিয়র ও রুমা এলজিইডির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী জামাল উদ্দিনও স্বীকার করেন ‘পত্র পত্রিকায় লেখালেখি হওয়ায় তারা ব্রিজটির সংযোগের জন্য রাস্তার কাজ ধরেছেন। তিনি আরও বলেন, পাহাড় কেটে রাস্তার কাজ না করলে আমরা কিভাবে রাস্তা নিব সেটা বুঝা যাবে না। তাই ম্যাপ অনুযায়ী বুঝার স্বার্থে আমরা নিজস্ব তহবিলের মাধ্যমে কাজটি শুরু করেছি। কাল পরশুর মধ্যে আমরা সেটি টেন্ডার আহ্বান করবো।

ব্রিজটি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রালয় থেকে ঘটনা তদন্তের তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি প্রধান হলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান, রাঙ্গামাটি সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক নুর নবী এবং বান্দরবান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) লুৎফুর রহমান।

রোববার দুপুরে তদন্ত দল বান্দরবানের রুমা উপজেলার রুমামুখ-গ্যালেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ সংযোগের ব্রিজটি সরেজমিন তদন্তে যান। এসময় বান্দরবান এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জিল্লুর রহমান, রুমা উপজেলা চেয়ারম্যান উহ্লাচিং মারমা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়ামিন হোসেনসহ বান্দরবান ও রুমার কয়েকজন সাংবাদিক।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তদন্ত দলের প্রধান মিজানুর রহমান বলেন, এটা সত্য যে রাস্তার টেন্ডার হওয়ার আগে ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছে। এসময় তিনি এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌলীর কাছে রাস্তার কাজের টেন্ডার হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি স্বীকার করেন রাস্তার কাজের টেন্ডার হয়নি। পত্র পত্রিকায় লেখালেখি হওয়ায় তারা রাস্তার কাজটি শুরু করেছেন।

জানা গেছে, উক্ত রাস্তার কাজের জন্য তিন কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে এক হাজার ২০০ মিটার দীর্ঘ রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে। তবে রাস্তা করতে বিশাল পাহাড় কাটা হচ্ছে। পাহাড় কাটার অনুমোদন না হওয়ার আগেই পাহাড় কাটা হচ্ছে বলে পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবান কার্যালয়ের পরিদর্শক আবদুল সালাম সোমবার দুপুর স্বীকার করে বলেন, এলজিইডি রাস্তা করার জন্য পাহাড় কাটার একটি আবেদন করেছেন, তিনি সেই আবেদন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন। তবে এখনও অনুমোদন হয়নি। পাহাড় কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে এ কর্মকতা বলেন, তিনিও লোকমুখে শুনেছেন পাহাড় কাটার কথা।

এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চার কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে রুমা মুখ-গ্যালেঙ্গা সড়কে ৬৮ মিটার দীর্ঘ ব্রিজটি নির্মাণ শুরু হয়। গত অর্থ বছরে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। তবে ব্রিজটি রাস্তা হওয়ার আগে নির্মাণ হওয়ায় অনেকেই ব্রিজটি নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এসময় তদন্ত দল প্রধান মিজানুর রহমান বলেন, সাংবাদিক ও এলাকার মানুষকে টেন্ডার কোড, ডিপিপির কোড, অফিসে যোগাযোগ করা দরকার ছিল। এগুলো যাচাই কলেই ব্রিজ ও রাস্তা নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা ষ্পষ্ট হতো। তবে তিনি সাংবাদিকদের কাছে বলেন, ব্রিজটি করা হলেও রাস্তার কাজের টেন্ডার হয়নি বলে তদন্তকালে তিনি কাগজপত্র দেখে জেনেছেন। এছাড়া ডিপিপ-তেও রাস্তার কথা আগে উল্লেখ ছিল না।

জানা গেছে, ২০০৬ সালে ১৭ কিলোমিটার এই রাস্তার আইডি দিয়ে এলজিইডি ৩০০৩ গেজেট প্রকাশ করে। আর ২০১৭ সালে আরেকটি গেজেটে একই সড়ক ২২ কিলোমিটার করা হয়।

কমিটি প্রধান মিজানুর রহমান বলেন, ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করা হবে