আমাদের প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বর্তমান দখলদার কর্তৃপক্ষের বরাতে গত ০১/০৯/২০২১ ইং তারিখ একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠাকালীন ট্রাস্টের সেক্রেটারি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা লায়ন মো: মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে জঘন্য মিথ্যাচারপূর্বক শাক দিয়ে মাছ ঢাকার প্রয়াস চালানো হয়েছে।
তৎপ্রেক্ষিতে গতকাল ০২/০৯/২০২১ ইং তারিখ ট্রাস্টের সদস্যগণ এক যৌথ বিবৃতি প্রদান করেছেন। বিবৃতিতে তারা বলেন, জবরদখলদার গোষ্ঠী যখন কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিকে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা, সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে তখন মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এর সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা নিজেদের অধিকার-উচ্চশিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সংঘবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অপবাদ দেয়া হয়েছে, যা সিবিআইইউর ইতিহাসে ন্যাক্কারজনক অধ্যায় সৃষ্টি করেছে। যারা স্বত:স্ফূর্ত ছাত্র আন্দোলনকে নাম সর্বস্ব, কাগুজে ও অনিবন্ধিত বলেছেন, তারা চরম অজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন।
কারণ, অবৈধ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জন্য নিবন্ধন লাগে না-দেশের নাগরিক হলে চলে আর নাগরিকদের এই বাক্ স্বাধীনতা সকলের সাংবিধানিক অধিকার। প্রকৃতপক্ষে যারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে গায়ের জোরে বিশ্ববিদ্যালয় দখল করেছেন তাদের নামে এ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসিতে নিবন্ধিত হয়নি; ১৫/০৯/২০১৩ ইং তারিখ শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ০৬/১০/২০১৩ ইং তারিখ ইউজিসি লায়ন মো: মুজিবুর রহমানের নামেই এ বিশ্ববিদ্যালয় নিবন্ধন দিয়েছে- এ মর্মে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকদের কাছে সকল ডকুমেন্ট উপস্থাপন করা হয়েছে।
ট্রাস্টিগণ দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলেন, গত ০২/০৬/২০২০ ইং তারিখ দখলে নেয়ার পর জনাব সালাহ উদ্দীন আহমদ কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে যত নিয়োগ দিয়েছেন সবই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নীতিমালা-২০১০ এর নিয়োগ বিধিমালা অনুসারে অবৈধ। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় সালাহ উদ্দীন গং কর্তৃক গঠিত ট্রাস্টের পক্ষ হতে ভিসি ও ট্রেজারার নিয়োগে কোন প্যানেল শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা ইউজিসি বরাবর প্রেরণ করতে পারেন না। তাছাড়া ১৮/০২/২০২১ ইং তারিখের পরে অন্যকোন নিয়োগ প্রদান করে থাকলেও তা আদালত অবমাননার সামিল হবে।
তথাপি তিনি নিজের দল ভারী করার জন্য অযোগ্য, অনভিজ্ঞ ও অসৎলোকদের এখানে চাকুরি দিয়ে চলেছেন। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে তিনি একেএম গিয়াসুদ্দীন নামের বেসরকারি কলেজের একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক (যিনি অবসরে যাওয়ার একবৎসর পূর্বে তার কলেজ সরকারি করা হয় এবং তিনি অধ্যক্ষ হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন)কে ‘প্রফেসর ও একাডেমিক এডভাইজার’ এবং ডিরেক্টর, সেন্টার ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন।
বিষ্ময়কর ব্যাপার যে, ওই শিক্ষক ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ হতে ২য় শ্রেণীতে অনার্স এবং মাস্টার্স পাশ করেছেন। কিন্তু ২৫/০১/২০১৫ ইং তাং স্বাক্ষরিত ইউজিসির শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা অনুসারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক পদের যোগ্যতা হিসেবে পিএইচডি ডিগ্রি/সমমান ডিগ্রিসহ শিক্ষাজীবনে কমপক্ষে ২টিতে ১ম শ্রেণী/বিভাগ/এ গ্রেড থাকতে হবে। তন্মধ্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রির যেকোন একটিতে ১ম শ্রেণী/বিভাগ/এ গ্রেড থাকতে হবে। অভিজ্ঞতা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়/সমমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১২ বছরের অভিজ্ঞতা তন্মধ্যে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে ৫ বছরের অভিজ্ঞতা এবং কমপক্ষে ১৫টি প্রকাশনা যার মধ্যে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে ৭টি থাকতে হবে। এতদ্ব্যতীত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ নেই। এছাড়া ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নীতিমালা-২০১০ অনুসারে ‘একাডেমিক এডভাইজার’ নামে কোন পদের অস্তিত্ব কোথাও নেই। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে একদিনও শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা না থাকা এবং পিএইচডি ডিগ্রি ও দেশী-বিদেশী জার্নালে পর্যাপ্ত প্রকাশনা ব্যতিরেখে এ শিক্ষককে সালাহ উদ্দীন আহমদ তার লুটপাটের সহযোগী হিসেবে অধ্যাপক ও একাডেমিক এডভাইজার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন এমনকি তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৭ বছর পর ১৪/১০/২০২০ ইং তারিখ অবৈধভাবে সৃষ্ট ট্রাস্টের সেক্রেটারি হিসেবেও তাকে নিয়োগ দিয়েছেন।
সরফরাজ আলী খাঁন নামে একজনকে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে ডিনের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। অথচ এ ব্যক্তি লোক প্রশাসন বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স করেছেন, যে লোক কিনা কখনো কোন ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেননি, তিনি কি করে ডীন হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয় বোধগম্য নয়।
ইউজিসি শিক্ষক নিয়োগ বিধি মোতাবেক তার এ পদে নিয়োগ লাভের কোন যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নেই মর্মে ১৯/১২/২০২০ ইং তারিখ একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ বেরিয়েছে।
এভাবে মাওলানা বেলাল নূর আজীজী, শামীমুল ইসলাম পাপেলসহ আরো অনেককে যোগ্যতা-অভিজ্ঞতা ছাড়াই নিয়োগ বোর্ড গঠন, সার্কুলার ও নিয়োগ পরীক্ষা ব্যতিরেখে অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
ট্রাস্টিগণ বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, প্রতিবাদে আমাদের ট্রাস্টি বোর্ডের সেক্রেটারী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা লায়ন মো: মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করা হয়েছে।
স্থায়ী ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় স্থানান্তরের জন্য জমি ক্রয়পূর্বক সেখানে স্টিল স্ট্রাকচারের ভবনও নির্মাণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় দখল করে নেয়া না হলে এতদিন স্থায়ী ক্যাম্পাসে হয়ত শিফট হওয়া সম্ভব হতো। বিশ্ববিদ্যালয়ে দখলদারি নিষ্কন্টক করার জন্য ট্রাস্ট সদস্যদের বিরুদ্ধে সালাহ উদ্দীন আহমদ যে দুটি মামলা করেছেন তা ছিল ষড়যন্ত্রমূলক ও প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাড ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে দিবালোকের মতো সত্য বিষয়ে মিথ্যাচার কেবল জ্ঞানপাপী অসূরের দ্বারাই সম্ভব। লায়ন মো: মুজিবুর রহমান কখনো পলাতক নন, তিনি নিয়মিত অফিস করছেন এবং দখলদার সিন্ডিকেট থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পূনরুদ্ধারে অহর্নিশ পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। যে ট্রাস্টি বোর্ডের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় সেটি বহাল থাকা সত্ত্বেও একই নামে অন্য আরেকটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন সম্পূর্ণ অন্যায় ও অবৈধ।
ইউজিসি দখলদারদের কর্মকান্ড সম্পর্কে জ্ঞাত আছে বলেই একবছরের জন্য সিবিআইইউতে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখতে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে।
কক্সবাজার জেলায় উচ্চশিক্ষার এ আয়োজন জাতির জনক বন্ধবন্ধু তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে বাদ-প্রতিবাদ, মামলা-মোকাদ্দমা, ছাত্র অসন্তোষ-মানববন্ধন-বিক্ষোভ এগুলো আমরা দেখতে চাই না। কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকতে পারে। কিন্তু আদালতে প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তাকে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না।
অভিযুক্ত ব্যক্তির বিচার হতে পারে কিন্তু তার সম্পদ কেড়ে নেয়া সুস্পষ্ট জুলম- এটা গর্হিত কাজ।
আমাদের ট্রাস্টের সদস্যগণ সবাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। ‘শিক্ষা নিয়ে গড়ব দেশ-শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’ মন্ত্রে উজ্জীবিত। আমাদের অধিকাংশ ট্রাস্টির পিতা হলেন স্বাধীনতার স্থপিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত থেকে পদকপ্রাপ্ত সাবেক এএসপি বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত এ.এস.এম আতাউর রহমান এর পরিবারভূক্ত, যারা বর্তমানেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সেক্টরে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।
পক্ষান্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দখলদার সালাহ উদ্দীন আহমদ কোন্ পরিবার থেকে এসেছেন-তা সবাই জানেন। অতএব বিএনপি-জামাত তকমা লাগিয়ে দখলদারি স্বত্ত্ব পাকাপোক্ত করার দিন শেষ; যথাযথ কর্তৃপক্ষ সবই অবগত আছেন।
পর্যটন নগরীর সম্ভাবনাময় একমাত্র এ বিশ্ববিদ্যালয়টি রক্ষায় দলমত নির্বিশেষে সবাই সোচ্চার ভূমিকা পালন করবেন- এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন প্রতিষ্ঠাকালীন সকল ট্রাস্টি সদস্য।

প্রেস সচিব
কক্সাবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ট্রাস্ট