তোফায়েল আহমদ

সঙ্গী হারিয়ে হাহাকার করছে বন্য হাতির দল। সন্ধ্যা হলেই তারা জড়ো হচ্ছে বৈদ্যুতিক ফাঁদ পেতে মাদি হাতি হত্যার স্থানটিতে। তাদের বিক্ষিপ্ত ডাকে বিষাদের সুর টের পাচ্ছে এলাকাবাসী। ক্রুদ্ধ আচরণও করছে সঙ্গী হারানো হাতির দলটি। গত মঙ্গল ও বুধবার রাতে কক্সবাজারের রামুতে বৈদ্যুতিক ফাঁদে পেতে হাতি হত্যার পর মাটিচাপা দেওয়া স্থানটিতে এমন ঘটনা ঘটেছে।

কক্সবাজারের দক্ষিণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. হুমায়ূন কবির গতকাল বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পরিকল্পিত ও পৈশাচিক হাতি হত্যার ঘটনাটির পর পাহাড়ের হাতিগুলো সত্যি একদিকে বেদনায় কাতর হয়ে পড়েছে, অন্যদিকে ক্রোধেও জ্বলছে। গত দুই রাতে হাতিগুলো ঘটনাস্থলের আশপাশের অনেক ধানক্ষেত এবং পানের বরজ তছনছ করে দিয়েছে।’

উপজেলার খুনিয়পালং ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গাইনপাড়ার ধানক্ষেতে গত সোমবার বৈদ্যুতিক ফাঁদ পেতে একটি বন্য হাতিকে হত্যা করা হয়। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে হাতিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে টুকরা করে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়।

এলাকাবাসী জানায়, গাইনপাড়াসহ আশপাশের গ্রামের মানুষ গত দুই রাত নির্ঘুম কাটিয়েছে। হাতির পাল তাদের হারানো সঙ্গীকে ঘটনাস্থলে তন্নতন্ন করে খুঁজে চলেছে। কমপক্ষে ১৪-১৫টি হাতি মঙ্গল ও বুধবার পুরো রাত কাটিয়েছে ওই স্থানে। যেখানে হাতিটিকে টুকরা করে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছিল, সেখানকার মাটি আলগা করে মরদেহের টুকরাও তুলে ফেলে তারা।

স্থানীয় বাসিন্দা মোস্তাক আহমদ বলেন, ‘বন্য পশুগুলো যেভাবে দুই রাত ধরে সঙ্গিনীর জন্য কান্না করছে, তাতে আমরা গ্রামবাসীরাও এখন লজ্জিত, ব্যথিত।’ তিনি জানান, লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, একটি বাচ্চা হাতির আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়। বাচ্চাটি হত্যার শিকার হওয়া মাদি হাতির বাচ্চাই হবে হয়তো।

একটি বন্য পশু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানুষকে নতুন করে শিক্ষা নিতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন এলাকার ইউপি সদস্য জয়নাল উদ্দিন বাবুল। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামানও এ কথায় সহমত পোষণ করেন।

ধোয়া পালং বন রেঞ্জ কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন জানান, অবিশ্বাস্য রকমের ঘটনা এটি। তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাতে মাদি হাতিটি পুঁতে রাখার স্থানটি লণ্ডভণ্ড করে হাতির দল। সেটি পরদিন ঠিকঠাক করা হলেও বুধবার রাতে একই ঘটনা ঘটায় শোকাহত, ক্রুদ্ধ হাতির দল। তিনি বলেন, সবচেয়ে ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, হাতির দল প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য গ্রামের ঘরবাড়িতে চড়াও হবে কি না। এ জন্য এলাকার এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি), বনকর্মী, বন জায়গীরদার ও গ্রামবাসী নিয়ে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, কক্সবাজারের দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া-টেকনাফ বনাঞ্চলে গত দেড়-দুই বছরে ১২ থেকে ১৫টি হাতির জন্ম হয়েছে। হাতির বিচরণক্ষেত্র সীমিত হয়ে পড়েছে। ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার বসতির কারণে হাতির একটি করিডর বন্ধ হয়ে পড়েছে। রামুতে সেনানিবাস স্থাপনের কারণেও বন্ধ হয়ে পড়েছে আরেকটি করিডর। এ কারণে অনেক সময় জনবসতিতে নেমে আসছে হাতির দল। এ ব্যাপারে প্রতিনিয়ত এলাকায় সচেতনতা কর্মসূচি চলছে বলে জানান তাঁরা।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার রাতে হাতি হত্যার ঘটনায় জড়িত প্রধান আসামি কৃষক নজির আলমকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা করছে পুলিশ।

– কালেরকন্ঠ