সিবিএন ডেস্ক:
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কোনো পদক্ষেপ ছাড়া দ্রুতই চরম দারিদ্র্যের মুখে পড়তে যাচ্ছে আফগানিস্তানের অর্থনীতি। অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মতো কোনো ঘটনা না ঘটে, সেখানে দারিদ্র্যের হার তো বাড়বেই, সেই সঙ্গে অভিবাসন সংকট চরমে পৌঁছাবে।

তালেবান ক্ষমতা দখলের পর আফগানিস্তান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। দ্রুত কোনো পদক্ষেপ না নিলে দ্রুতই দেশটির অর্থনীতিতে ধস নামতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। তালেবান ক্ষমতা দখলের আগে থেকেই দেশটির অর্থনীতি ভঙ্গুর অবস্থায় ছিল। হঠাৎ তালেবান নিয়ন্ত্রণ নেওয়ায় আফগানিস্তানের সম্পদ হিমায়িত হয়ে গেছে, ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেছে, বৈদেশিক সাহায্যও স্থগিত হয়ে গেছে।

এ অবস্থায় আফগানিস্তানের অর্থনীতি চরম দারিদ্র্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, তালেবানরা রাতারাতি আফগানিস্তানের পরিস্থিতি ঘুরিয়ে ফেলবে, এমন সম্ভাবনা খুবই কম। আফগানিস্তান ব্যাংকস অ্যাসোসিয়েশন ফেসবুকে ঘোষণা করে, তালেবানরা হাজি মোহাম্মদ ইদ্রিসকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। সাবেক উপ–অর্থমন্ত্রী গুল মাকসুদ সাবিত বলেন, কখনো তিনি ইদ্রিসের নাম শোনেননি। গুল মাকসুদ সাবিত বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়ায় থাকেন এবং একটি কমিউনিটি কলেজে প্রভাষক হিসেবে কাজ করছেন।

তিনি বলেন, এই ব্যক্তি তালেবান অর্থনৈতিক কমিশনে কাজ করেছেন। তিনি পাকিস্তানের একটি ধর্মীয় বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন এবং সেখান থেকেই তিনি এসেছেন। এই ব্যক্তির সম্পর্কে এতটুকুই জান আছে। এখন তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালনা করছেন। তার মনে হয় ব্যাংক পরিচালনার কোনো অভিজ্ঞতা নেই।

তালেবানরাও ইদ্রিসের অর্থনীতি বা ব্যাংকিংয়ে অভিজ্ঞতার কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। গত বুধবারে তালেবানরা ঘোষণা দেয়, সব সরকারি কর্মচারীকে আগের মতো বেতন দেওয়া হবে। আফগানিস্তানের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলেছেন, এটিই লক্ষণ যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ ছাড়া দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা সাম্প্রতিক সপ্তাহের তুলনায় আরও বেশি খারাপ হতে পারে।

১৫ আগস্ট প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির সরকার পতনের কিছুদিন পর আফগান মুদ্রার দর মার্কিন ডলারের বিপরীতে প্রায় ৮ শতাংশ কমে যায়। পরে ১৭ আগস্ট থেকে স্থানীয় মুদ্রা তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল হয়। কারণ, এটি কার্যত হিমায়িত করে রাখা হয়েছে। এখন দেশের ভেতরে বা বাইরে অর্থ স্থানান্তর করা প্রায় অসম্ভব। সরকারি কর্মচারীদের বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ব্যাংক খোলা না থাকায় দৈনিক বাণিজ্য পরিচালনাও কঠিন হয়ে পড়ছে।

বিশ্বব্যাংক অর্থ সহায়তা স্থগিত করেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এখানকার নারীদের জন্য। এর আগে ১৯৯২ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে সব কার্যক্রম বন্ধ রেখেছিল বিশ্বব্যাংক। বিভিন্ন অবকাঠামো খাতে আফগানিস্তানকে ৫৩০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। ঋণদাতা সংস্থাটি বলছে, আফগানিস্তানের অর্থনীতি নগদ অর্থের ওপর নির্ভরশীল, এখানকার ১০ শতাংশ মানুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে। অর্থনীতির পুরোটাই বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল।

গুল মাকসুদ সাবিত বলেন, কোনো ব্যবসায়িক কার্যক্রম হচ্ছে না, মানুষের কাছে নগদ আছে, কিন্তু ব্যাংক এটি ধরে রেখেছে। তিনি বলেন, অধিকাংশ আফগানিই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, তারা ভোগান্তিতে। তিনি বলেন, দারিদ্র্য চরমে থাকবে। যদি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মতো ঘটনা না ঘটে, সেখানে দারিদ্র্যের হার তো বাড়বেই, সে সঙ্গে অভিবাসন সংকট চরমে পৌঁছাবে।

কাবুল পতনের পর থেকে দেশের ভেতরে বা দেশের বাইরে অর্থ স্থানান্তর অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। দুটি কোম্পানি, যার মাধ্যমে মানুষ সাধারণত টাকা পাঠায়, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন আর মানিগ্রাম, আফগানিস্তানে কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, কেউ চাইলেও এখন আফগানিস্তানে ব্যবসা করতে পারবেন না। এ ছাড়া তালেবানকে আফগানিস্তানের বৈধ সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি, যার অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ থাকা তহবিলের অর্থ তারা ব্যবহার করতে পারবে না