প্রেস বিজ্ঞপ্তি:

[ঢাকা, ২৯ আগস্ট ২০২১]
কোভিড-১৯ এর উৎস সম্পর্কিত মার্কিন গোয়েন্দাদের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ নিয়ে উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মা ঝাওশু’র বিবৃতি নিম্নরূপ:

সম্প্রতি, মার্কিন গোয়েন্দা সম্প্রদায় কোভিড-১৯ এর উৎস সম্পর্কে একটি তথাকথিত প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তৈরি একটি মিথ্যা প্রতিবেদন। এর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি বা বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। চীনকে অপবাদ ও আক্রমণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র একটি বিবৃতিও প্রকাশ করেছে। চীনা পক্ষ এর দৃঢ় আপত্তি জানায়। এটি যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রতিবেদনের বিপরীতে অবস্থানের কথা জানিয়েছে।

আমরা বিভিন্ন সময় জোর দিয়ে বলেছি যে, কোভিড-১৯ এর উৎস শনাক্ত করা একটি জটিল বৈজ্ঞানিক বিষয়। এটি যৌথ গবেষণার মাধ্যমে সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীদের অংশগ্রহণে করা উচিৎ এবং কেবলমাত্র এভাবেই করা সম্ভব হবে। যুক্তরাষ্ট্র বিজ্ঞান ও সত্যকে উপেক্ষা করে, এর পরিবর্তে তারা এটি রাজনৈতিক কারসাজি এবং গোয়েন্দাদের দ্বারা উৎস খোঁজা নিয়ে ব্যস্ত। কোনো প্রমাণ ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্র চীনের নামে অপপ্রচার ও দোষারোপের উদ্দেশ্যে একের পর এক গল্প তৈরি করেছে। তাদের উদ্দেশ্য কোভিডের উৎস খোঁজার নামে চীনের ওপর দোষ চাপানো এবং রাজনৈতিক ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়া। কোভিডের উৎস খুঁজতে গোয়েন্দাদের নিযুক্ত করা এই বিষয়টির রাজনৈতিকীকরণের সুস্পষ্ট প্রমাণ।

উৎস খোঁজার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনকে স্বচ্ছ বা সহযোগী না হওয়ার অভিযোগ করেছে। এটি নিছক অর্থহীন কথা। উত্স শনাক্তকরণে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিকভাবে সহযোগিতার ভিত্তিকে চীন অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকে এবং এই ধরণের সহযোগিতায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। বিজ্ঞান, উন্মুক্ত থাকা এবং স্বচ্ছ নীতির ভিত্তিতে, আমরা দু’বার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বিশেষজ্ঞদের চীনে আমন্ত্রণ জানিয়েছি উৎস শনাক্তকরণ সংক্রান্ত গবেষণার জন্য। এই বছরের শুরুর দিকে, শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক এবং চীনা বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও চীনের যৌথ গবেষক দল চীনে ২৮ দিন গবেষণা চালায় এবং নির্ভরযোগ্য, পেশাদার ও বিজ্ঞানসম্মত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে একটি যৌথ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এটি উৎস শনাক্তকরণে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটি অসাধারণ ভিত্তি। আমরা উৎস শনাক্তকরণে বিজ্ঞান-ভিত্তিক প্রচেষ্টাকে সমর্থন দিয়ে আসছি এবং এভাবেই সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকবো। এই বিষয়টি রাজনৈতিকিকরণের প্রচেষ্টার আমরা তীব্র বিরোধিতা করি।

আসলে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই এই বিষয়ে স্বচ্ছ, দায়িত্বশীল এবং সহযোগীর ভূমিকা পালন করছে না। ফোর্ট ডেট্রিক বায়োল্যাব এবং দুইশো’রও বেশি বিদেশি ঘাটিতে জৈবিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যুক্তিসঙ্গত সন্দেহের জবাব দিতে যুক্তরাষ্ট্র অস্বীকার করে আসছে, সত্যকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে এবং দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে। সারা বিশ্বের কাছে যুক্তরাষ্ট্রকে এর উত্তর দিতে হবে।

উৎস শনাক্তকরণকে রাজনৈতিকীকরণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা কোন সমর্থন পায়নি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যাপক বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছে: আশি’রও বেশি দেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালককে এই রাজনৈতিকিকরণের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ জানাতে চিঠি লিখেছে, বিবৃতি দিয়েছে, অথবা কূটনৈতিক নোট পাঠিয়েছে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও চীনের যৌথ গবেষক দলের যৌথ প্রতিবেদনকে সমর্থন জানিয়েছে; উৎস শনাক্তকরণের রাজনৈতিকীকরণের বিপক্ষে একশো’রও বেশি দেশ ও অঞ্চলের তিনশো’র বেশি রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সচিবালয়ে যৌথ বিবৃতি জমা দিয়েছে; এবং ফোর্ট ডেট্রিক ঘাটির তদন্তের জন্য ২ কোটি ৫০ লাখেরও বেশি চীনা নেটিজেন একটি খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। এগুলো মানুষের ন্যায়বিচারের পক্ষে সমর্থন।

চীনা একটি প্রবাদ হচ্ছে, একটি ন্যায়সঙ্গত বিষয় প্রচুর সমর্থন পায় আর অন্যায্য বিষয় কম সমর্থন পায়। আমরা যুক্তরাষ্ট্র পক্ষকে আবারো সতর্ক করে বলতে চাই যে, উৎস শনাক্তকরণকে রাজনৈতিকিকরণ কোন ফলাফল এনে দিবে না। আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে, উৎস শনাক্তকরণে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পরিবেশকে বিষাক্ত করে অথবা বৈশ্বিক মহামারির বিরুদ্ধে বৈশ্বিক সংহতিকে অবমূল্যায়ন করে এমন কিছু করা অবিলম্বে বন্ধ করুন, এবং বৈশ্বিক মহামারি মোকাবিলায় বিজ্ঞানভিত্তিক উৎস শনাক্তকরণ ও সহযোগিতার সঠিক পথে ফিরে আসুন।