নিজস্ব প্রতিবেদক:

পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নে আবারও স্লুইচ গেট দিয়ে নদী থেকে পানি ঢুকিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে পেকুয়া সদর ইউনিয়নের প্রায় এক হাজার একর জমির আমনের রোপন করা ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

স্থানীয় একটি স্বার্থান্বেষী মহল কৃষকের ধানি জমিতে মাছ চাষ করার জন্য নদী থেকে পানি ঢুকিয়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। প্রতিবাদে বুধবার বিকাল ৪টায় পেকুয়া সদর ইউনিয়নের শতশত কৃষক কৃষাণী নন্দীর পাড়া ষ্টেশনে প্রধান সড়কে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করে দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন।

পেকুয়া সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ মেহের নামা বাজার পাড়ার কৃষক ফিরোজ আহাম্মদ জানান; কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি মঙ্গলবার ও বুধবার পেকুয়া সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ মেহের নামায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫ নং স্লুইচ গেট দিয়ে মাছ ধরার জন্য নদী থেকে লোকালয়ের ধানি জমিতে পানি ঢুকিয়েছে।

এ কারণে পেকুয়া সদরের প্রায় ১ হাজার একর জমির আমনের রোয়া পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ওই প্রভাবশালী ব্যক্তিদেরকে গ্রেফতারে করে আইনের আওতায় আনার জন্য বুধবার বিকাল ৪টার দিকে নন্দীর পাড়া চৌমুহনী ষ্টেশনে কৃষকরা মানব বন্ধন করেছে।

প্রায় ১ কিলোমিটার জুড়ে অনুষ্ঠিত ওই মানববন্ধনে শতশত কৃষক কৃষানী উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন শেষে কৃষকরা পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাছেম বিল্যাহ’র কাছে গিয়ে কৃষকরা ওই স্লইচ গেট রক্ষণাবেক্ষণ কমিটির লোকজনের বিরুদ্ধে ব্যববস্থা নেওয়ার দাবী জানান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন বলে কৃষকদের আশ্বস্থ করেছেন।

হরিণাফাড়ির কৃষক মোহাম্মদ হোসেন জানান; এ বছরের জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে স্লুইচ গেট রক্ষণাবেক্ষণ কমিটির লোকজন কৃষকের ধানি জমিতে মাছের চাষ করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৬৪/২বি পোল্ডার বেড়িবাঁধের বিভিন্ন স্লুইচ গেট দিয়ে পানি ঢুকিয়ে কৃত্রিম জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে।

একই মাসের শেষের দিকে টানা বর্ষণে পেকুয়ায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। পেকুয়া সদরের পশ্চিম ছিরাদিয়া এলাকায় মানার বাপের খাল নামে একটি খালে অন্য একটি স্বার্থান্বেষী মহল অবৈধভাবে বাঁধদিয়ে সরকারী খাল চিংড়ি ঘের বানিয়ে নেওয়ায় ওই পাশের ৩৭ নং স্লুইচ গেট দিয়ে বন্যার পানি বের হতে পারেনি।

এতে পেকুয়া সদর ইউনিয়নে থেকে বন্যার পানি বের হতে প্রায় ১৮/২০দিন সময় লেগে যায়। এত দীর্ঘ সময় কৃষকের আমনের রোয়া পানি নিচে তলিয়ে থাকায় পেকুয়া ইউনিয়নের কৃষকের বীজতলা সম্পূর্ণ ভাবে বিনষ্ট হয়ে গেছে। বন্যার পর এখন কৃষকরা দেরীতে হলেও বাইরে থেকে অধিক মূল্যে আমনের চারা কিনে এনে আমনের রোয়া কাজ করেছে। কোন কোন কৃষক টাকার অভাবে চারা কিনতে না পেরে নতুন করে স্বল্প মেয়াদী ধানের বীজ তলা তৈরী করেছেন।

এ অবস্থায় মঙ্গলবার ও বুধবার ওই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ৩৫ নং স্লুইচ গেট দিয়ে নদী থেকে পানি ঢুকিয়ে কৃষকদের সদ্য রোপিত আমনের রোয়া পানির নিচে তলিয়ে দিয়েছে। এতে পেকুয়া সদরের শতশত কৃষক আবার নতুন করে হতাশায় পড়েছেন।

স্থানীয় কৃষক মোজাফ্ফর আহমদ বলেছেন, যারা নদী থেকে পানি ঢুকিয়ে কৃষকের ক্ষতি করেছে তাদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা না হলে কৃষকরা নতুন করে আন্দোলনের কর্মসূচী দিবেন।

অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পেকুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতা অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক মাষ্টার শাহ আলম, আওয়ামীলীগ নেতা বদি আলম মেম্বার, ফিরোজ আহমদ মেম্বার, নন্দীর পাড়ার আবুল হাসেম মাঝি সহ শতশত কৃষক কৃষাণী।