সিবিএন ডেস্ক:

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ফলে কক্সবাজারে যে পরিমাণ গাছ কাটা হয়েছে সেই গাছগুলো প্রতি হেক্টর এলাকা থেকে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ পাউন্ড কার্বন শোষণ করতে পারতো। ফলে বর্তমানে ওই এলাকার প্রতি হেক্টর আকাশে সমপরিমাণ কার্বন জমাট হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। বনবিভাগ বলছে, বর্তমানে কক্সবাজারে ৮ লাখ ৪২ হাজার ৫০৪ দশমিক ৬৮ মেট্রিক টন কার্বন জমাট হয়েছে। কক্সবাজারের মহেশখালী, হাতিয়া, কুতুবদিয়া সহ বেশ কয়েকটি এলাকা ব্যাপক ঝুঁকিতে রয়েছে।

বহু মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তু হয়ে পড়ছে। কক্সবাজার শহরে ‘কুতুবদিয়া পাড়া’ নামক এলাকায় বহু সংখ্যক মানুষ স্থান্তরিত হয়েছে। যাদের সকলেই তাদের মূল বাসস্থান ‘কুতুবদিয়া’ হতে পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বাসস্থান হারিয়ে এ পাড়ায় জলবায়ু উদ্বাস্তু হিসেবে বাস করছে। বিভিন্ন সমীক্ষায় অনুমান করা হয়েছে, প্রতি ২ সেন্টিমিটার সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে উপকূলীয় তটরেখা গড় ২-৩ মিটার স্থলভাগের দিকে অগ্রসর হলে ২০৩০ সাল নাগাদ মূল ভূ-খন্ডের ৮০ থেকে ১২০ মিটার পর্যন্ত অতিক্রম করবে এবং কালক্রমে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ তম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। একই সাথে হারিয়ে যাবে দেশের সব চেয়ে বড় পর্যটন কেন্দ্র, যা বিদেশে দেশের পরিচিতি আনে এবং অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখে।এছাড়া বিশ্ব ব্যাংকের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, কক্সবাজার জেলার মানুষের জীবনযাত্রার মান ১৮ শতাংশের নিচে নেমে যাবে। কারণ সংঘাতের মুখে মিয়ানমার থেকে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার আগমনে জেলার জীববৈচিত্র্য ঝুঁকির মধ্যে আছে।” পর্যটন নগরী কক্সবাজার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছিলেন শারমিন আক্তার।”

সমুদ্রের খুব কাছাকাছি পর্যটন নগরী হিসেবে খ্যাত কক্সবাজার জেলায় বেড়ে উঠা বিবিএ ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার ফ্রাইডে ফর ফিউচার আন্দোলনের সাথে সক্রিয় ভাবে কাজ করছেন। তিনি ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস নেটওয়ার্ক এর প্রশিক্ষণ নিয়ে জলবায়ু সুবিচার আদায়ে সক্রিয় ভাবে নানা ধরনের প্রচারণা ও মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

শারমিনের মতে বাংলাদেশে জলবায়ু সংকট বলতে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে যে অস্থায়ী কিংবা স্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, তার যাবতীয় চুলচেরা বিশ্লেষণ।

জলবায়ু পরিবর্তন এর প্রভাব ব্যখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন বাংলাদেশে একাধারে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা সমস্যা, হিমালয়ের বরফ গলার কারণে নদীর দিক পরিবর্তন, বন্যা ইত্যাদি সবগুলো দিক দিয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রাও অনেক বেশি। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে, ধানের ফুল আসার সময় থেকে বীজ বের হওয়ার মাঝখানের সময়টুকুতে প্রয়োজনের তুলনায় বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় টি-আমন জাতের ধানের উৎপাদন কমে আসছে।সেখানে পানির অভাবে জমিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় ইতোমধ্যেই সুন্দরবনের সুন্দরী গাছে আগামরা রোগ ব্যাপক মাত্রায় দেখা দিয়েছে। এছাড়াও রয়েছে, সুপেয় পানির অভাব, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাস, অস্বাভাবিক তাপমাত্রা, মরুকরণ ইত্যাদি।

তার জন্ম এবং বেড়ে উঠা র কক্সবাজার যেরকম ছিলো এখন তিনি উপলব্ধি করেন কক্সবাজার সেই অবস্থাতে নেই ।কক্সবাজারের ছোট-বড় রাস্তাঘাট, সমুদ্র সৈকতের সার্বিক অবস্থা, সমুদ্র নির্ভর মানুষের জীবনমান ইত্যাদি দেখে তার মনে শুধু প্রশ্ন জাগতো যে “এগুলো এতো অসচেতন কেনো? সেই প্রশ্নের উত্তর খুজতে গিয়ে জলবায়ু রক্ষার জন্য কাজ করার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। ২০২০ সালে তার এক বন্ধুর মাধ্যমে ইয়ুথনেটের কথা জানতে পারেন।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের কাজকর্ম দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ইয়ুথনেট যুক্ত হয়ে জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব সম্পর্কে নিজের জ্ঞ্যান কে সমৃদ্ধ করেছেন।

জলবায়ুযোদ্ধা হিসেবে তাদের কথা কে বিশ্বনেতাদের কাছে পৌছে দিতে বিভিন্ন দিবসে স্ট্রাইক, ওয়াক ফর সারভাইভাল র‍্যালি করেন। সমুদ্র সৈকত কে দূষণ মুক্ত রাখতে প্লাস্টিক ওয়েস্ট বিন তৈরি তে সহায়তা সহ বিভিন্ন দূর্যোগে খাবার বিতরণ এবং করোনা সচেতনতা বৃদ্ধি জন্য মানুষকে সচেতন করতে ক্যাম্পেইন এবং পরিবেশ বান্ধব মাক্স বিতরণ ইত্যাদি প্রোগ্রামে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

একজন জলবায়ু অধিকার কর্মী হিসেবে তার দাবি মানুষকে বুঝতে হবে যে, প্রকৃতিকে জয় করে নয় বা পরিবেশকে ধ্বংস করে নয়; বরং প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে মিলেমিশে, অনাদিকাল ধরে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তার যে সহজাত নিয়মের মধ্য দিয়ে চলমান রয়েছে, তাকে মান্য করেই তাদের বেঁচে থাকতে হবে। নইলে বার বার পরিবেশ ও প্রকৃতির প্রতিশোধের মুখোমুখি হতে হবে সমগ্র মানব জাতিকে।