সিনহা হত্যার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণ ৫-৮ সেপ্টেম্বর, বাদী ও সিফাতের সাক্ষ্য সমাপ্ত (ভিডিও)

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট, ২০২১ ০৭:০০ , আপডেট: ২৫ আগস্ট, ২০২১ ০৭:৩৪

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


মেজর(অব:) সিনহা হত্যা মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি পিপি এড. ফরিদুল আলম

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

চাঞ্চল্যকর মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণ আগামী ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ সেপ্টেম্বর, যথাক্রমে রোববার থেকে বুধবার পর্যন্ত একটানা ৪ দিন অনুষ্ঠিত হবে। বুধবার ২৫ আগস্ট পর পর তিন দিন মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস ও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী সাহিদুল ইসলাম সিফাতের সাক্ষ্য গ্রহণ ও আসামীদের পক্ষে জেরা শেষে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এ আদেশ দেন।

মামলাটির চার্জসীটভুক্ত প্রথম ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহনের জন্য আদালত থেকে সমন দেওয়া হলেও দীর্ঘ জেরার কারণে সকলের সাক্ষ্য নেওয়া সম্ভব হয়নি বলে জানান-কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সেরেস্তাদার এম. নুরুল কবির। তিনি আরো জানান, যে ২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে, সে ২ জন ছাড়া চার্জসীটভুক্ত ৩ থেকে ১৫ নম্বর সাক্ষীকে আদালতের ধার্যদিনে প্রথম ২ দিন ৪ জন করে এবং শেষ ২ দিন ৩ জন উপস্থিত থাকার জন্য সমন জারি করা হবে।

এদিকে, বুধবার মামলার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী সাহিদুল ইসলাম সিফাতের আদালত জবানবন্দি গ্রহণের পর ১৫ আসামীর পক্ষে তাদের আইনজীবীরা তাকে পৃথক পৃথক ভাবে জেরা করেন। মেজর (অব:) সিনহার ‘জাস্ট গো’ ডকুমেন্টারি ফ্লিম টিমের সদস্য ছিলেন সাক্ষী সাহিদুল ইসলাম প্রকাশ সিফাত। তিনি বরগুনা জেলার বামনা উপজেলার পশ্চিম শফিপুর গ্রামের নুরুল মোস্তফা হাফেজ এর পুত্র। সাহিদুল ইসলাম প্রকাশ সিফাত স্টাম্পফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ঘটনার সময় সিফাত মেজর (অব:) সিনহার গাড়িতে ছিলেন। বুধবার ২৫ আগস্ট সন্ধ্যা ৬ টায় সিফাতকে জেরা শেষে আদালতের কার্যক্রম সেদিনের মতো সমাপ্ত ঘোষনা করা হয়।

সাক্ষ্য গ্রহণকালে মামলার ১৫ জন আসামীও আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। এর আগে কড়া নিরাপত্তায় তাদের তৃতীয় দিনের মতো কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে ১৫ জন আসামীকে বুধবার সকালে আদালতে হাজির করা হয়। মামলায় কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা ১৫ আসামি হলো : বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া।প, কনস্টেবল সাগর দেব, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, পুলিশের মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।

গত সোমবার ২৩ আগস্ট সকালে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর আদালতে মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসের সাক্ষ্য প্রদানের মাধ্যমে চাঞ্চল্যকর মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক এ বিচার কার্যক্রম শুরু হয়ে বুধবার ২৫ আগস্ট পর্যন্ত চলে।

রাষ্ট্র পক্ষে মামলাটির আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) এডভোকেট ফরিদুল আলম, অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট মোজাফফর আহমদ, এপিপি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমদ শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস ও সাহিদুল ইসলাম সিফাত এর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।

সাবেক ওসি প্রদীপের আইনজীবি এডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র বেঞ্চ সহকারী (পেশকার) সন্তোষ বড়ুয়া সিবিএন-কে জানান, এ মামলায় ৮৩ জন চার্জসীট ভুক্ত সাক্ষী রয়েছে। চলতি বছরের গত ২৭ জুন ফৌজদারী দন্ডবিধির ৩০২/২০১/১০৯/ ১১৪/১২০-খ/ ৩৪ ধারায় সকল আসামীর উপস্থিতিতে মামলাটির চার্জ গঠন করা হয়।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। হত্যার পাঁচদিনের মাথায় ৫ আগস্ট সিনহার তাঁর বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নম্বর : এসটি-৪৯৩/২০২১ ইংরেজী। যার জিআর মামলা নম্বর : ৭০৩/২০২০ ইংরেজি। যার টেকনাফ মডেল থানা মামলা নম্বর : ৯/২০২০ ইংরেজি।

মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে। ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয় দুই নম্বর আসামি। মামলার তিন নম্বর আসামি করা হয় টেকনাফ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিতকে। আদালত থেকে মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয় র‍্যাব-১৫ কে।

এরপর আসামি ৭ পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় ৩ জন, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ৩ সদস্য এবং প্রদীপের দেহরক্ষীসহ আরো মোট ৭ জনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। গত ২৪ জুন মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামী কনস্টেবল সাগর দেব আদালতে আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে আলোচিত এই মামলার ১৫ আসামির সবাই আইনের আওতায় আসে।

এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় চার মাসের বেশি সময় ধরে চলা তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ৮৩ জন সাক্ষী সহ আলোচিত মামলাটির অভিযোগপত্র দাখিল করেন র‍্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম। ১৫ জনকে আসামি করে দায়ের করা অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকান্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।