মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় উভয় পক্ষ ন্যায় বিচার পেতে মিডিয়া ট্রায়াল বন্ধ করতে হবে। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এ হত্যাকান্ড নিয়ে মিডিয়া যেভাবে প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে, তা মোটেও কাম্য নয়। বিচার কার্যক্রম চলাবস্থায় আদালতের বাইরে অহেতুক এ ধরনের মিডিয়া ট্রায়াল ন্যায় বিচারকে ব্যাহত করতে পারে।

চাঞ্চল্যকর মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার অন্যতম আসামী বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এর প্রধান কৌশুলী এডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত এ মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসের দেওয়া সাক্ষ্যের বিপরীতে প্রদীপের পক্ষে বাদীকে জেরা করে মঙ্গলবার ২৪ আগস্ট কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে বের হওয়ার সময় আদালতের বারান্দায় গণমাধ্যমকে এ কথা বলেন।

এডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত আরো আরো বলেন, আসামী প্রদীপ কুমার দাশ এর পক্ষে বাদীকে জেরা করার সময় মিডিয়া ট্রায়াল এর বিষয়টি বিজ্ঞ বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর নজরে আনেন। এসময় বিজ্ঞ বিচারক বলেন, মিডিয়া ট্রায়ালে প্রভাবিত হয়ে বিচারকগণ যদি বিচারের রায় দিতেন, তাহলে হত্যা সহ বিভিন্ন গুরতর অপরাধের মামলায় বিভিন্নসময়ে আসামীরা কখনো বেকসুর খালাস পেতোনা।

এডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত আরো বলেন, কোন ফৌজদারী মামলার আসামী চুড়ান্ত বিচারের রায়ে দন্ডিত না হওয়া পর্যন্ত কখনো অপরাধী সাব্যস্ত হননা। বিচারের আগে আসামী শুধু অভিযুক্ত ব্যক্তি হিসাবে গণ্য হন।

এডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত আবারো দৃঢ়তার সাথে বলেন, বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ কোনভাবেই সিনহা হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত নয়। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাকে এ মামলায় জড়ানো হয়েছে।

গত সোমবার ২৩ আগস্ট সকালে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর আদালতে বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসের সাক্ষ্য প্রদানের মাধ্যমে চাঞ্চল্যকর মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
সোমবার আদালতে শুরু হওয়া সাক্ষ্য গ্রহন একটানা আরো একদিন অর্থাৎ আগামীকাল বুধবার ২৫ আগস্টও চলবে। এ মামলায় ৮৩ জন চার্জসীট ভুক্ত সাক্ষী রয়েছে।

২৪ আগস্ট সাক্ষ্য গ্রহণকালে মামলার ১৫ জন আসামীও আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। এর আগে কড়া নিরাপত্তায় কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে ১৫ জন আসামীকে মঙ্গলবার সকালে আদালতে হাজির করা হয়। মামলায় কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা ১৫ আসামি হলো : বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া।প, কনস্টেবল সাগর দেব, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, পুলিশের মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।

মামলাটির চার্জসীটভুক্ত প্রথম ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহনের জন্য আদালত থেকে সমন দেওয়া হয়েছে বলে জানান কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সেরেস্তাদার নুরুল কবির। প্রতিদিন ৫ জন করে সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করার কথা থাকলেও সাক্ষীদেরকে দীর্ঘ জেরার কারণে এ তিনদিনে সকলের সাক্ষ্য নেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা।