আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শুরু হতেই তালেবানের অগ্রযাত্রা দেখে কয়েকটি দেশের জোট বিশেষ একটি ঘোষণা দিয়েছিল। তাতে বলা হয়েছে, সামরিক শক্তি খাটিয়ে কাবুল দখল করা হলে তালেবানকে স্বীকৃতি দেয়া হবে না। তালেবান খুব সুন্দরভাবেই বিষয়টি এড়িয়ে চলেছে। শুধু কাবুল নয়, এর আগে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ- কান্দাহার, মাজার-ই-শরীফ, জালালাবাদেও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে কোনো ধরনের রক্তপাত ছাড়াই।

তালেবানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কাবুলে ঢোকার পরিকল্পনা তাদের ছিল না। কিন্তু কাবুলের কাছাকাছি এসে তারা দেখতে পায়, কাবুল প্রশাসন পালিয়ে গেছে। সে সময় স্থিতিশীলতা বজায় রাখতেই তারা কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়। আলজাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাতকারে তালেবানের সাংস্কৃতিক কমিশনের আবদুল কাহার বলখি এসব কথা জানান।

তালেবানের এমন পরিচ্ছন্ন দখল-নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি পাল্টে যায়। ফলে তালেবানের দিকে নয়, সমালোচনার তীর চলে যায় আশরাফ ঘানির সরকার অথবা যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। একে একে তালেবানের সঙ্গে কাজ করার ঘোষণা দেয় রাশিয়া, চীন, পাকিস্তান, এমনকি ব্রিটেনও। তালেবান প্রশ্নে মাথা না-ঘামানোর বার্তা দেয় চীন। রাশিয়ার ভাষ্য, তালেবান আফগানিস্তান দখল করে নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের মতামত আফগানিস্তানের ওপর চাপিয়ে দেয়া উচিত নয়। শর্তসাপেক্ষে তাদেরকে সহযোগিতার কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্রও। সৌদির ভাষ্যও অনেকটা একই রকম। ইরানও নিরাপদ অবস্থান বজায় রাখছে।

সরকার গঠনে সংলাপ প্রক্রিয়াকে সমর্থন জানিয়েছে ওআইসি। অর্থাৎ সরকার গঠনের আগেই মোটামুটিভাবে স্বীকৃতি পেয়ে যাচ্ছে তালেবান। বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক পরাশক্তিগুলো এভাবে সমর্থন করায় স্বাভাবিকভাবেই শক্তিশালী হয়ে উঠছে তারা। অভ্যন্তরীণ কিছু ব্যাপারেও ক্রমশ নিজেদের অবস্থান খোলাসা করছে। সব মিলিয়ে গুছিয়ে উঠছে তারা।

কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বিপদে পড়ে গেছে নয়াদিল্লি। আঞ্চলিক প্রতিবেশী হওয়া সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত পরিষ্কার কোনো অবস্থান নিতে পারেনি তারা। এমনকি আফগানিস্তান থেকে ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপদে বাড়ি ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা, আফগান পুনর্গঠনে ভারতের আগের বিনিয়োগে প্রশংসা করার কারণে ঢালাওভাবে তালেবানের সমালোচনা করার পথও বন্ধ হয়ে গেছে।

আঞ্চলিক ভূরাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ আফগানিস্তানের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখা খুবই জরুরি। তাছাড়া দেশটিতে প্রচুর ভারতীয়র কাজ করার সুযোগ আছে, বিনিয়োগ করার সুযোগ আছে-সেগুলোও হাতে রাখা প্রয়োজন। তাই তালেবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে মোদি সরকারের সামনে।

সব মিলিয়ে উভয় সংকটে পড়া ভারত এখন খুবই নিঃসঙ্গ। প্রথমে নয়াদিল্লির ধারণা ছিল, তালেবানের উত্থানে সবাই মিলে বাধা দেবে। কিন্তু তালেবান যেমন ঘোষণা করেছে, তারা ২০ বছর আগের তালেবান তারা নয়, তেমনি সার্বিক পরিস্থিতিও এই দুই দশকে অনেকখানি পাল্টেছে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে অন্যরা এখন তালেবানের হাতে হাত রেখে চলছে। কিন্তু দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে নিঃসঙ্গ ভারত ইতোমধ্যেই তালেবানের কাছ থেকে অনেকখানি দূরে সরে গেছে। ফলে সম্পর্কের রসায়ন নিয়ে বাড়ছে আতঙ্কও।

সূত্র: আনন্দবাজার।