সিনহা হত্যার বাদী শারমিন শাহরিয়ারের আংশিক জেরা মঙ্গলবার

প্রকাশ: ২৩ আগস্ট, ২০২১ ০৫:৫৮ , আপডেট: ২৩ আগস্ট, ২০২১ ০৬:১৪

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


মেজর (অব:) সিনহা হত্যা মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার (মাঝে), পিপি এড. ফরিদুল আলম (ডানে) ও এড. এসমিকা (বামে)।

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

চাঞ্চল্যকর মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস এর সাক্ষ্য ও জেরা আংশিক শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার ২৪ আগস্ট মামলার আসামী লিয়াকত আলী, প্রদীপ কুমার দাশ ও লিটন মিয়ার পক্ষে তাদের আইনজীবীরা বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসকে জেরা করবেন। সোমবার ২৩ আগস্ট বিকেল সাড়ে টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসকে আসামীত্রয়ের পক্ষে অবশিষ্ট জেরা মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু করার আদেশ দিয়ে সিনহা হত্যা মামলার কার্যক্রম সাময়িক মুলতবী ঘোষনা করেন এবং দিনের অন্যান্য কার্যক্রমে চলে যান। মামলার অবশিষ্ট ১২ জন আসামীর পক্ষে বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসকে সোমবার জেরা সম্পন্ন করা হয়।

এর আগে বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস তার সাক্ষ্যতে বলেন-সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের নির্দেশে বরখাস্ত হওয়া ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে হত্যার উদ্দ্যেশে গুলি করে। সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ঘটনাস্থলে এসে গুলিবিদ্ধ মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের মৃত্যু নিশ্চিত করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে এ হত্যাকান্ডের বিস্তারিত বিবরণ জেনে ২০২০ সালের ৫ আগস্ট আদালতে এ মামলা দায়ের করেন বলে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর আদালতে সাক্ষ্য প্রদানকালে বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস জবানবন্দি দেন।

সোমবার ২৩ আগস্ট শুধুমাত্র চাঞ্চল্যকর মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ মামলার মামলার বাদী ও নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ সাক্ষ্য দেন। রাষ্ট্র পক্ষে মামলাটির আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) এডভোকেট ফরিদুল আলম, অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট মোজাফফর আহমদ, এপিপি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমদ শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস এর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।

প্রসিকিউসন পক্ষ বাদী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস এর সাক্ষ্য গ্রহণ করার পর আসামী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট মোহাম্মদ জাকারিয়া, এডভোকেট আলহাজ্ব শামসুল আলম, এডভোকেট দিলীপ দাশ প্রমুখ তাঁকে একে একে জেরা করেন। ৩ জন আসামীর পক্ষে জেরা করার জন্য তাদের আইনজীবীরা আদালতে সময় প্রার্থনা করেন। এ তিন জন আসামীর পক্ষে মঙ্গলবার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসকে জেরা করার আদেশ দেন জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল ।

সাক্ষ্য গ্রহণকালে মামলার ১৫ জন আসামীও আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। এর আগে কড়া নিরাপত্তায় কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে ১৫ জন আসামীকে সোমবার সকালে আদালতে হাজির করা হয়। এ মামলার কার্যক্রম মুলতবী করার পর আসামীদের কড়া নিরাপত্তায় কক্সবাজার জেলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

এর আগে আদালতে সমন দেওয়া ৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩ জন সাক্ষী যথাক্রমে বাদী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস, পিতা-বীর মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ খান, মেজর (অব:) সিনহার ‘জাস্ট গো’ ডকুমেন্টারি ফ্লিম টিমের সদস্য সাহিদুল ইসলাম প্রকাশ সিফাত, টেকনাফের মিনাবাজারের কাজী ঠান্ডা মিয়ার পুত্র মোহাম্মদ আলী সমন পেয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য সোমবার সকালে আদালতে হাজিরা দেন। মঙ্গলবার ২৪ আগস্ট হাজিরা দেওয়া বাকী ২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যও আদালতে নেওয়া হবে।

অপরদিকে, সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য সমন জারি করা টেকনাফের শামলাপুরের ডা. মৃত ফজল করিমের পুত্র মোঃ আবদুল হামিদ এবং শামলাপুরের মৃত নুরুল ইসলামের পুত্র মোঃ ইউনুচ আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন।

সোমবার আদালতে শুরু হওয়া সাক্ষ্য গ্রহন একটানা আরো ২ দিন ২৪ ও ২৫ আগস্ট, যথাক্রমে মঙ্গলবার ও বুধবারও চলবে। মামলাটির চার্জসীটভুক্ত প্রথম ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহনের জন্য আদালত থেকে সমন দেওয়া হয়েছে বলে জানান কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সেরেস্তাদার নুরুল কবির। প্রতিদিন ৫ জন করে সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করার কথা থাকলেও দীর্ঘ জেরার কারণে সোমবার তা সম্ভব হয়নি।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র বেঞ্চ সহকারী (পেশকার) সন্তোষ বড়ুয়া সিবিএন-কে জানান, চলতি বছরের গত ২৭ জুন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল মামলাটির চার্জ গঠন করে সাক্ষ্য গ্রহনের দিন ধার্য্য করে আদেশ দিয়েছিলেন। তিনি আরো জানান, এ মামলায় ৮৩ জন চার্জসীট ভুক্ত সাক্ষী রয়েছে।

চলতি বছরের গত ২৭ জুন ফৌজদারী দন্ডবিধির ৩০২/২০১/১০৯/ ১১৪/১২০-খ/ ৩৪ ধারায় সকল আসামীর উপস্থিতিতে মামলাটির চার্জ গঠন করা হয়। তার আগে গত ১০ জুন আসামি বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কক্সবাজার জেলা কারাগারে নিয়ে আসা হয়।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। হত্যার পাঁচদিনের মাথায় ৫ আগস্ট সিনহার তাঁর বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নম্বর : এসটি-৪৯৩/২০২১ ইংরেজী। যার জিআর মামলা নম্বর : ৭০৩/২০২০ ইংরেজি। যার টেকনাফ মডেল থানা মামলা নম্বর : ৯/২০২০ ইংরেজি।

মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে। ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয় দুই নম্বর আসামি। মামলার তিন নম্বর আসামি করা হয় টেকনাফ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিতকে। আদালত থেকে মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয় র‍্যাব-১৫ কে।

এরপর আসামি ৭ পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় ৩ জন, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ৩ সদস্য এবং প্রদীপের দেহরক্ষীসহ আরো মোট ৭ জনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। গত ২৪ জুন মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামী কনস্টেবল সাগর দেব আদালতে আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে আলোচিত এই মামলার ১৫ আসামির সবাই আইনের আওতায় আসে।

এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় চার মাসের বেশি সময় ধরে চলা তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ৮৩ জন সাক্ষী সহ আলোচিত মামলাটির অভিযোগপত্র দাখিল করেন র‍্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম। ১৫ জনকে আসামি করে দায়ের করা অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকান্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলায় কারাগার থেকে আদালতে আনা ১৫ আসামি হলো: বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া।প, কনস্টেবল সাগর দেব, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, পুলিশের মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।