সিবিএন ডেস্ক:
আফগানিস্তানে সরকারি বাহিনীর প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। একের পর এক এলাকা দখল করে নিচ্ছে তালেবান। দেশটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহত্তম শহরও এখন তাদের কব্জায়। কান্দাহারের রেডিও স্টেশনসহ বড় বড় স্থাপনায় উড়ছে তালেবানের পতাকা।

যেকোনো সময় রাজধানী কাবুলও দখল করে নিতে পারে তারা-এমন তথ্য দিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের (পেন্টাগন) এক কর্মকর্তা। তবে পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, হামলা নয়, তালেবান কাবুলকে অবরুদ্ধ করার চেষ্টা করছে।

এমন পরিস্থিতিতে দূতাবাস থেকে নিজেদের নাগরিকদের সরিয়ে নিতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশ।

এদিকে তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। শনিবার তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। বিভিন্ন অঞ্চল দখলের পরও এতদিন চুপ ছিলেন তিনি।

আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেন, তালেবানের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলোয় মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা খবরে আমি গভীরভাবে শঙ্কিত।

বিশেষ করে নারী ও সাংবাদিকদের অধিকার লঙ্ঘন করছে তালেবান। খবর বিবিসি, এএফপি ও ভয়েস অব আমেরিকাসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের।

আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে ১৮টির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান। রাজধানী কাবুলেরও দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে তারা। মাত্র ১১ কিলোমিটার দক্ষিণের চর আসিয়াবে অবস্থান করছে তারা। এর আগে লোগার প্রদেশের কেন্দ্র পুল-ই-আলম দখল করেছে তালেবান।

এই শহরটির সঙ্গে কাবুলের সরাসরি সড়ক রয়েছে। বালখ প্রদেশের মাজার-ই-শরিফ শহরেও তীব্র আঘাত হেনেছে তালেবান। উত্তর আফগানিস্তানের এই শহরটি একসময় তালেবানের শক্ত ঘাঁটি ছিল।

বালখ প্রদেশের গভর্নরের মুখপাত্র মুনির আহমেদ ফরহাদ জানিয়েছেন, চতুর্দিক থেকে শহরটিতে হামলা চালিয়েছে তালেবান। এর আগে বুধবার আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি মাজার-ই-শরিফ সফর করেছিলেন। শহরটি রক্ষায় তিনি সেখানকার তালেবানবিরোধী যোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেন।

আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত ইকোনমিক হাব হিসাবে পরিচিত কান্দাহার দখলে নিয়েছে তালেবান। তালেবানের হাতে হেরাত শহরেরও পতন ঘটেছে। প্রাণ বাঁচাতে সংঘাতপূর্ণ এলাকা ও শহরগুলো থেকে হাজারো সাধারণ মানুষ নিরাপদে আশ্রয়ের আশায় রাজধানী কাবুলের দিকে ছুটছে।

বাস্তুচ্যুত সাধারণ মানুষের জন্য আশপাশের দেশগুলোকে সীমান্ত খোলা রাখার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, জাতিসংঘ আফগান পরিস্থিতির ‘ঘণ্টায় ঘণ্টায়’ মূল্যায়ন করছে। রাজধানী কাবুলে সংস্থাটির কিছু কর্মীকেও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

শনিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট ঘানি বলেন, আফগানিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে পুনর্গঠনই তার সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ছিল। যুদ্ধ-সংঘাতের কারণে বাস্তুহারা হাজারো মানুষকে সহায়তার উপায় খুঁজছেন বলেও জানান তিনি।

ঘানি বলেন, আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ এবং আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করছি…আলোচনা এখনো চলছে এবং খুব শিগগিরই এর ফল জানিয়ে দেওয়া হবে।

দীর্ঘদিন পর তালেবানের বিরুদ্ধে সরব হয়ে আশরাফ ঘানি বলেন, আমি বুঝতে পারছি যে, আপনারা আপনাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। আমি আপনাদের প্রেসিডেন্ট হিসাবে আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই-অস্থিতিশীলতা, সহিংসতা এবং আমার দেশের জনগণের বাস্তুহারা হয়ে পড়া রোধ করার উপায় খুঁজে বের করব।

আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে ৭২ হাজারের মতো শিশু। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সতর্ক করে বলেছে, সংঘাতের কারণে আফগানিস্তানে চরম খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। সেখানে অচিরেই মানবিক বিপর্যয় ঘটতে পারে।

নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে শিগগিরই তিন হাজার মার্কিন সেনা আফগানিস্তানে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। তবে হোয়াইট হাউজ মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, আমরা দূতাবাস বন্ধ করছি না, এমনকি সব কর্মকর্তাকেও প্রত্যাহার করে নিচ্ছি না। আমরা কেবল এর পরিসর কমিয়ে আনছি।

যুক্তরাজ্যও সেনা পাঠিয়ে আফগানিস্তানে অবস্থানরত ব্রিটিশ নাগরিকদের ফেরত আনবে বলে জানিয়েছে। একই অবস্থা ডেনমার্ক ও নরওয়েরও। তারাও আফগানিস্তানে তাদের দূতাবাস বন্ধ করে কর্মীদের ফেরত নিতে তৎপরতা শুরু করেছে।