শোক বার্তা

প্রকাশ: ১৫ আগস্ট, ২০২১ ১২:৩৭ , আপডেট: ১৫ আগস্ট, ২০২১ ১২:৩৯

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


আজ ১৫ ই আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস; বাঙালি জাতির ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক অধ্যায় ও মানব ইতিহাসের বর্বরতম দিন, এমন ঘটনা কেবল দেশের ইতিহাসে নয়, পৃথিবীর ইতিহাসেও বিরল।১৯৭৫ সালের শোকাবহ আগস্টের এইদিনে বাঙালি হারিয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তাঁর পরিবারের সদস্যসহ আরও অনেককে। ৪৬ তম শাহাদত বার্ষিকীতে শোকাবহ চিত্তে পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে ১৫ আগস্ট কালরাতের সকল শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
‘দ্য টাইমস অব লন্ডন’-এর ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট সংখ্যায় উল্লেখ করা হয় ‘সবকিছুসত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকে সব সময় স্মরণ করা হবে। কারণ তাঁকে ছাড়া বাংলাদেশেরবাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই’। একই দিন লন্ডন থেকে প্রকাশিত ‘ডেইলি টেলিগ্রাফ’পত্রিকায় বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের লাখ লাখ লোক শেখ মুজিবের জঘন্যহত্যাকাণ্ডকে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করবে’।ঘাতকচক্রজাতির পিতাকে হত্যা করলেও তাঁর নীতি ও আদর্শকে মুছে ফেলতে পারেনি। যতদিন বাংলাদেশথাকবে ততদিন জাতির পিতার নাম এ দেশের লাখো-কোটি বাঙালির অন্তরে চির অমলিন, অক্ষয়হয়ে থাকবে।
যার ডাকে প্রশিক্ষিত হানাদারের বিরুদ্ধে বুকচিতিয়ে দাঁড়িয়েছিল বাংলার মানুষ, নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়েছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতা- হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সেই বাঙালিকে হারানোর দিনটিফিরে এলো শোকের আবহ নিয়ে। যে বিশাল হৃদয়ের মানুষকে কারাগারে বন্দি রেখেও স্পর্শ করার সাহসদেখাতে পারেনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, অথচ স্বাধীন বাংলার মাটিতেই তাকেনির্মমভাবে জীবন দিতে হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫আগস্ট সেনাবাহিনীর একদল বিপথগামী, উচ্ছৃঙ্খল সদস্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকেই শুধুহত্যা করেনি, তার সঙ্গে হত্যা করতে চেয়েছে বাঙালির হাজার বছরের প্রত্যাশার অর্জন স্বাধীনতার মহত্তমআদর্শগুলোকেও। মুছে ফেলতে অপপ্রয়াস চালিয়েছিল বাঙালিরবীরত্বগাথার ইতিহাসও। বঙ্গবন্ধুর নৃশংসতম হত্যা- বাঙালি জাতির জন্য করুণবিয়োগগাথা হলেও ভয়ঙ্কর ওই হত্যাকাণ্ডে খুনিদের শাস্তি নিশ্চিত না করে বরংদীর্ঘ সময় ধরে তাদের আড়াল করতে কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ জারিকরেছিল বঙ্গবন্ধুর খুনি খন্দকার মোশতাক সরকার।
বঙ্গবন্ধুকে দৈহিকভাবে হত্যা করা হলেও তাঁর মৃত্যু নেই। তিনি চিরঞ্জীব।কেননা একটি জাতিরাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা এবং স্থপতি তিনিই। যতদিন এ রাষ্ট্রথাকবে, ততদিন অমর তিনি। সমগ্র জাতিকে তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রেরণায়প্রস্তুত করেছিলেন ঔপনিবেশিক শাসক-শোষক পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্রসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে। তাই চিরঞ্জীব তিনি এ জাতির চেতনায়। বঙ্গবন্ধু কেবলএকজন ব্যক্তি নন, এক মহান আদর্শের নাম। যে আদর্শে উজ্জীবিত হয়েছিল গোটাদেশ। বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্রআর ধর্মনিরপেক্ষতার দর্শনে দেশেরসংবিধানও প্রণয়ন করেছিলেন স্বাধীনতার স্থপতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালিবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।
ইতিহাসের জঘন্যতম সেইহত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে শুধু স্বাধীনতার মহান স্থপতিকেই হারায়নি বাঙালি, দীর্ঘকালেরশাসন-শোষণ থেকে মুক্ত হয়ে জাতীয় জীবনের যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছিল তাও থমকে যায়, যা বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। ‘শোক থেকে শক্তি, শোক থেকে জাগরণ’ এমন রূপান্তর প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই গড়ে তুলতে হবে জাতির পিতার চিরদিনের স্বপ্নলালিত অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা, জাতীয় শোক দিবসেএই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
কবি কামাল চৌধুরীর ভাষায়-

যেখানে ঘুমিয়ে আছ, শুয়ে থাকো
বাঙালির মহান জনক
তোমার সৌরভ দাও, দাও শুধু প্রিয় কণ্ঠ
শৌর্য আর অমিত সাহস
টুঙ্গিপাড়া গ্রাম থেকে আমাদের গ্রাম গুলো
তোমার সাহস নেবে
নেবে ফের বিপ্লবের দুরন্ত প্রেরণা।