মনসুর আলম, রামু:
রামু উপজেলার অপহরণকারীচক্র ও ডাকাত দলের প্রধান মো. কামাল (৩৫)কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার (১৩ আগষ্ট) সন্ধ্যায় এএসআই এমিলন বড়ুয়া, এএসআই জহির উদ্দিন, এএসআই তোফাজ্জল হোসেনের নেতৃত্বে রামু থানার একটি টিম ঈদগড়ের গভীর জঙ্গলে দীর্ঘ প্রায় চার ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

ডকাত কামাল ঈদগড়ের মৃত আজিরনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ, চাাঁদাবজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অসংখ্য মামলা রয়েছে।

দক্ষিণ চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের শিল্পী জনী রাজ দে ও ঈদগড়ের নজির ফকির হত্যা মামলার তালিকাভুক্ত আসামি বলে স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে।

রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ারুল হোসাইন জানান, ডাকাত কামাল দীর্ঘদিন পলাতক। তার বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে ৫টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। আরো মামলা আছে কিনা খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছে, ডাকাত কামাল দীর্ঘদিন ধরে অপহরণ ডাকাতি ও চাঁদাবাজি করে আসছে। ঈদগড়, বাইশারীসহ পুরো পাহাড়ি এলাকায় সে শক্তিশালী বাহিনী গড়ে তুলেছে। প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে দেদারসে ঘুরে বেড়াচ্ছিল।

তার বেশ কয়েকটি ডাকাত ও অপহরণকারীর সেন্ডিকেট রয়েছে। তাদেরকে দিয়ে মানুষ অপহরণ ও চাঁদাবাজি করে প্রতিনিয়ত হয়রানি করে আসছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে আরো অনেক তথ্য।

গত ১২ মার্চ ঈদগড় স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র ইসমাইলকে অপহরণ করে গহীন জঙ্গলে নিয়ে বর্বর নির্যাতন চালিয়েছিল ডাকাত কামাল। পরে দেড় লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে উদ্ধার করে পরিবার।

১৬ এপ্রিল রাকিবুল হাসান নামের এক মাছ ব্যবসায়ীকে ব্যাংডেফা এলাকায় গাড়ি থামিয়ে ডাকাত কামালের নেতৃত্বে অজ্ঞাতনামা বেশ কয়েকজন সন্ত্রাস মিলে বেদম মারধর করে ৪৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এসময় রাকিবুল হাসান চিৎকার করলে স্থানীয়রা এগিয়ে যায়। এরপর কামাল ডাকাত তার দলবল নিয়ে পালিয়ে যায়।

করলিয়ামুরা লম্বাবিল এলাকার সৈয়দ নূর ও তার ছেলে রিদোয়ান তাদের নিজের জমিতে কৃষি কাজ করতে গিলে তাদের কাছে ১৫০০০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে ডাকাত কামাল। কিন্তু তারা ১৫০০০ টাকা দিতে না পারায় তাদের জমিতে গিয়ে কৃষি কাজ বন্ধ করে দেয়।

এদিকে ডাকাত কামালের নেতৃত্বে অস্ত্র নিয়ে সৈয়দ নূরকে খুঁজতে গেলে সৈয়দ নূর বাসায় না থাকায় তার স্ত্রীকে অস্ত্র দিয়ে দৌড়ে নিয়ে যায়‌। সৈয়দ নূরের স্ত্রী ভয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় ডাকাত দল এক রাউন্ড গুলি চালায়। এতে গুলির আওয়াজ শুনে সৈয়দ নূরের স্ত্রী রাস্তাতে পড়ে গেলে অতর্কিত এক মোটর সাইকেল এসে তার পায়ের উপর তুলে দেয়। এতে তার পায়ের জোড়া ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সৈয়দ নূরের স্ত্রী জোরে চিৎকার করলে পাশ্ববর্তী লোকজন এগিয়ে আসলে ডাকাত কামাল তার দলবল নিয়ে জঙ্গলে আত্মগোপনে যায়।

তাকে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল শেল্টার দিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত একমাস ধরে বৈদ্যপাড়া এলাকায় মাহবুব আলম মিনার নামের একজন গরুর খামারীকে ২০০০০ হাজার টাকা চাঁদা দেওয়ার জন্য হয়রানি করে আসছে। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।

এবিষয়ে মাহবুব আলম মিনার বলেন, ডাকাত কামাল বিভিন্ন সময় আমাকে ও আমার স্ত্রী সন্তানকে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে আসছে। তার হুমকিতে আতংকে দিন কাটাচ্ছি। প্রতিনিয়ত আমার বাসায় ও গরুর খামারে গিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট চালিয়েছে। বিষয়টি রামু থানাকে অবগত করছিলাম।

একই এলাকার মুজাফ্ফার আহমেদ বলেন, কামাল শীর্ষ সন্ত্রাসী ও ইয়াবা ব্যবসায়ীদের শেল্টারদাতা। তার নেতৃত্বে ডাকাতি, অপহরণ, চাঁদাবাজি এবং হত্যা সবকিছুই চলে। তার এমন ভয়ানক কর্মকাণ্ডে পুরো ঈদগড়বাসী আতংকিত।