রাশেদুল ইসলাম:
কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী শফিউল্লা কাটা এলাকায় খতিয়ানভুক্ত ষাট বছরের ভোগদখলীয় বসতভিটা ও চাষি জমি এপিবিএন আর্মড পুলিশ কর্তৃক জোরপূর্বক দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

উল্লেখ্য, ক্ষতিগ্রস্থ জায়গার মালিকগণ গত ৩ মার্চ বুধবার কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার, জেলার আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সংশ্লিষ্টদের জায়গার দলিল সহকারে লিখিত আকারে অভিযোগ দেন৷ উক্ত অভিযোগটি পেয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট ১৬ নং ক্যাম্প সি আই সি কে জায়গার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন৷

১৬ নং ক্যাম্প সি আই সি রবিউল ইসলাম বিষয়টি সুষ্ঠ তদন্ত করে ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার বরাবরে প্রতিবেদন দাখিল করেন৷ করোনা মহামারির কারণে বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় রয়েছে৷

দীর্ঘ ছয় মাস ধরে উক্ত জায়গার বিষয়টি আইনী প্রক্রিয়াধীন থাকা সত্তেও বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) সন্ধা ৭ টার দিকে উক্ত জায়গায় এপিবিএন আর্মড পুলিশ সদস্যরা বসতভিটার মালিকদের ভেতরে বন্দী রেখে তাদের ক্যাম্প অফিস করার জন্য জায়গা দখলে নিতে অপচেষ্টা চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ করে জায়গার মালিকগণ বলেন, ক্যাম্পের ভেতরে সরকারি বহু জায়গা পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা সত্বেও আমাদের পিতার ক্রয়কৃত খতিয়ানভুক্ত ভোগদখলীয় বসতভিটা ও চাষি জমিতে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের জন্য এপিবিএন ৮ আর্মড পুলিশ উক্ত জায়গাতে সাইনবোর্ড দিয়ে দখল করে আসছে৷

অভিযোগকারীরা হলেন, থাইংখালী ৫নং ওয়ার্ডের জামতলী শফিউল্লা খাটা এলাকার আবুল বশর, নুরুল কবির, নুরুল আমিন, নুরুল হক ভূট্টো, আমিনা খাতুন, ছালেমা খাতুন, ছফুরা খাতুন, শাহিনা আক্তার, সর্বপিতা মৃত ইউছুপ আলী, মাতা দয়া বিবি৷

তারা আরো বলেন, আমরা নিম্ন স্বাক্ষরকারী এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ও নেহায়ত, দুস্থ জনসাধারণ৷ পক্ষান্তরে মায়ানমার সরকার কর্তৃক নির্যাতিত হয়ে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আগমনের ফলে আমরা স্থানীয়রা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি৷ বিশেষ করে আমাদের দীর্ঘ দিনের ভোগদখলীয় টিলা ও বাগান জায়গাতে বিভিন্ন প্রজাতির বনজ ফলজ বাগান পানের বরজ, চাষি জায়গা বিলুপ্ত হয়ে যায়৷ এমনকি আমাদের মধ্যে অনেকের ঘরবাড়ি ক্যাম্প নং ১৬ এর ঘেরার ভেতরে হওয়ায় আমাদের ছেলে মেয়েদের যাতায়াত, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান, খেলাধুলাসহ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছি।

আমাদের ভোগদখলীয় জমির পাশে আমাদের পিতা নামীয় খতিয়ানভুক্ত জোত জমি রয়েছে৷
যার আর এস খতিয়ান নং- ৪৫৪ আর এস দাগ নং- ৮১৪, ৮১৫ ও ৮১৮ এবং বিএস খতিয়ান নং- ৪২২ বিএস দাগ নং- ৬৬৩৷ এ ছাড়া ও বর্ণিত জায়গাতে আমাদের নিজস্ব নামীয় সরকার কর্তৃক গরীব ও দুস্থ জনগণের উন্নতিসাধনের লক্ষ্যে ১ একর করে সামাজিক বনায়নে অংশীদারিত্ব দেওয়া হয়৷ যার দলিল সংরক্ষিত আছে৷ জমির মালিকানা মূলে আবেদনকারীগণ গত ২ মার্চ মঙ্গলবার কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সরাসরি উপস্থিত হয়ে জেলা প্রশাসকের তথ্য ও সেবা কেন্দ্রে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পাঠান৷

যার অনুলিপি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশণার সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগণের কাছে প্রেরণ করা হয়৷

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) শাহ্ রেজওয়ান হায়াত এ প্রতিবেদককে জানান, অভিযোগের বিষয়টি আমি পেয়েছি,  যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে এপিবিএন (৮ আর্মড) পুলিশ সুপার বলেন, জায়গার প্রকৃত মালিকদের যদি কাগজপত্র থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট সিআইসি’র কাছে এসে দেখালে আমরা জায়গা ছেড়ে দেব।

৫নং পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম.গফুর উদ্দীন চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কাটা তারের ভেতরে যে সমস্ত বাংলাদেশী নাগরিক বসবাস করে আসছে তারা সরকারি নিয়ম কানুন মেনেই রয়েছে৷

যেই জায়গাগুলি সরকারি বনায়ন ছিল, রোহিঙ্গা নাগরিকগণ বাংলাদেশে প্রবেশের পর থেকে এই পর্যন্ত বাংলাদেশী নাগরিকদের অনেক ক্ষতি হয়েছে, যা ভাষায় প্রকাশ করা যায়না।

চেয়ারম্যান এম.গফুর উদ্দীন চৌধুরী আরো জানান, আমি একজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে যতটুকু জানি উখিয়া টেকনাফের বাংলাদেশী নাগরিকগণ এমনিতে ক্ষতির মুখে সেখানে স্থানীয়দের জায়গাদখল  খুবই দুঃখজনক।