মোঃ নিজাম উদ্দিন, চকরিয়া:
চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারায় অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে ১৪ বছর ধরে বহাল থাকা মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে। মসজিদের জমিতে কমিটির স্বজনরা চুক্তিনামা ছাড়াই বহুতল মার্কেট নির্মাণ করেছে। মুসল্লী ও এলাকাবাসী কারণ জানতে চাইলে কোনপ্রকার প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন না স্বঘোষিত কমিটির লোকজন।
ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পশ্চিম মাইজপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমিটি নিয়ে এমনই চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বিগত ১৪ বছর আগে ৫নং ওয়ার্ডের এই মসজিদে স্বঘোষিত কমিটি গঠন করে ৭নং ও ৯নং ওয়ার্ডের একাধিক ব্যক্তি। কমিটির শীর্ষ পদে দায়িত্ব থেকে তাদের স্বেচ্ছাচারিতায় মসজিদ পরিচালনা করে আসলেও ইতোমধ্যে বেশকিছু অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এনিয়ে স্থানীয় মুসল্লীদের মাঝে চলছে তীব্র প্রতিক্রিয়া।
স্থানীয় মাইনুল এহসান চৌধুরী জানান, আমি কক্সবাজারে থাকলেও মসজিদের প্রয়োজনীয় খরচাদিতে সহযোগিতা করে আসছি। আমাদের পিতা ও দাদা এ মসজিদ নির্মাণে জমি দান করেছে। কিন্তু সম্প্রতি মহাসড়ক কিনারায় প্রায় ৫০ শতক মসজিদের জমি নিয়ে আত্মসাতের চেষ্টা চলছে। এলাকাবাসীর কাউকে না জানিয়ে কমিটির লোকজনের স্বজনরা এ জমিতে ভবন নির্মাণ করেছে। এ নির্মাণ বিষয়ে মসজিদের স্বপক্ষে কোনপ্রকার চুক্তিপত্রও করা হয়নি। এ কমিটির সবাই আজীবন কমিটিতে থাকবে বা সবাই শতশত বছর বাঁচবে এ নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারেনা। এ নিয়মে পরবর্তীতে এ জমি মসজিদের আয়ত্তে থাকবে মনে হয় না!
অপরদিকে এলাকাবাসী সুত্রে আরো জানা গেছে, এসব জমি ১৪ বছর ধরে বর্তমান থাকা এই মসজিদ কমিটির স্বজনদের নিরানব্বই বছর মেয়াদে মৌখিক চুক্তিতে হস্তান্তর করা হয়েছে।
মসজিদের জমিতে মার্কেট নির্মাতাদের মধ্যে নুর বকস নামের এক ব্যবসায়ী জানান, মসজিদ কমিটির সাথে আমাদের লিখিত কোন চুক্তিপত্র হয়নি এবং কোনপ্রকার জামানত টাকাও দিইনি। ভবন নির্মাণের যা খরচ হয়েছে সেখান থেকে প্রতি মাসে দোকান ভাড়া বাবদ কেটে দেয়া হবে। কোন একসময় নির্মাণ কাজের খরচ সমান-সমান হয়ে গেলে এরপর থেকে মসজিদ কমিটিকে দোকান ভাড়া দেয়া হবে।
এ বিষয়ে পশ্চিম মাইজপাড়া জামে মসজিদের অর্থ সম্পাদক নুরুল আমিন জানান, শুক্রবার জুমার টাকা ছাড়া কোন টাকা আমার কাছে জমা নাই। মসজিদের আয় ব্যায়ের কোন হিসেব আমার কাছে নেই। এ পর্যন্ত কমিটির কেউ আমাকে কোন টাকা-পয়সা জমা দেননি। এনিয়ে কথা তুললে বিগত জুমার নামাজে আমাকে নাজেহালের শিকার হতে হয়েছে।
স্থানীয় পশ্চিম মাইজ পাড়ার বাসিন্দা নজির হোছাইন জানান, এ মসজিদে ১৪ বছর আগে আমার পিতা সভাপতি ছিল। তিনি অবসর নেয়ার পর সেই এই ৫নং ওয়ার্ডের মসজিদে কমিটির দায়িত্ব পালন করছেন ৭নং ও ৯নং ওয়ার্ডের লোকজন। বর্তমানে এ কমিটির আত্মসাতের অহরহ তথ্য প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে। তিনি এই অনিয়ম ও আত্মসাতের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ ও মসজিদ সংশ্লিষ্ট ৫টি সমাজের ২ জন করে নিয়ে পুনঃ কমিটি গঠনের দাবি জানান।
এবিষয়ে পশ্চিম মাইজপাড়া জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ নেজাম উদ্দিন সওদাগরের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সংযোগ পাওয়া যায়নি।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইসহাক জানান, মসজিদের জমিতে ভবন নির্মাণকারীদের সাথে চুক্তি হয়েছে। তবে তিনি এ সংক্রান্ত কোনপ্রকার চুক্তিনামা দেখাতে পারননি।
এ নিয়ে যেকোন সময় সংঘর্ষের আশঙ্কায় রয়েছে মসজিদের সাধারণ মুসল্লিরা। তাই তদন্ত সাপেক্ষে এর আইনগত প্রতিকার চেয়ে উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে।