ইকরাম চৌধুরী টিপু, এনটিভি, কক্সবাজার:
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পক্ষ থেকে আরও ৪০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে।

গত ১ আগস্ট এই অনুদান আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) কাছে হস্তান্তর করেছে ইইউ।

আজ সোমবার ডব্লিউএফপির দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ডব্লিউএফপি এই অনুদানে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তাবিষয়ক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এই অনুদানকে স্বাগত জানিয়েছে ডব্লিউএফপি।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০২০ সালে দেওয়া প্রায় ৯৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা অনুদানের পাশাপাশি গত ১ আগস্ট দেওয়া এই অনুদান মিলিয়ে কক্সবাজারে ডব্লিউএফপির খাদ্য ও পুষ্টি কর্মসূচিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সর্বমোট অনুদান প্রায় ১৩৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। যার মাধ্যমে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাবিষয়ক কার্যক্রমে ডব্লিউএফপির অন্যতম এক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে দাঁড়িয়েছে ইইউ।

কক্সবাজারে অবস্থানরত সব রোহিঙ্গা শরণার্থী ই-ভাউচারের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা পেয়ে থাকে। যার মাধ্যমে তারা ডব্লিউএফপির খুচরা বিক্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে তাদের পছন্দমতো খাবার কিনতে পারে। এই বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে প্রধানত চাল, রান্নার তেল, ডিম, ডালসহ ফ্রেশ ফুড কর্নারে নির্ধারিত মৌসুমি ফল ও শাকসবজি সরবরাহ করা হয়। যা কক্সবাজারের ক্ষুদ্র কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ক্রয় করা হয়। স্থানীয়ভাবে এসব খাবার ক্রয় করার ফলে স্থানীয় অর্থনীতিতে প্রতি মাসে প্রায় আট কোটি ৫০ লাখ টাকা যুক্ত হয়। পাশাপাশি, স্থানীয় ক্ষুদ্র কৃষকদের কাছ থেকে এই পণ্য ক্রয়ের ফলে তা তাদের জীবিকার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখে। অন্যথায়, কোভিড-১৯ লকডাউনের কারণে তাদের উৎপাদিত পণ্যগুলো বাজারে বিক্রি করতে বেশ কষ্ট করতে হতো।

ইইউর সহায়তার মাধ্যমে কক্সবাজারে অবস্থিত শরণার্থী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে ডব্লিউএফপির পক্ষ থেকে সম্পূরক পুষ্টি-সহায়তাও দেওয়া হয়। তীব্র অপুষ্টি ও শিশুমৃত্যু ঠেকাতে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু, গর্ভবতী নারী ও সন্তানের যত্ন নেওয়া নারীদের লক্ষ্য করে ডব্লিউএফপির পুষ্টিবিষয়ক কার্যক্রম সাজানো হয়েছে। ব্ল্যাংকেট সাপ্লিমেন্টারি ফিডিং কর্মসূচির আওতায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এই ধরনের মা ও শিশুকে বিশেষায়িত পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীতে অপুষ্টির শিকার নারী ও শিশুদের ডব্লিউএফপির পক্ষ থেকে টার্গেটকৃত সাপ্লিমেন্টারি সহায়তা দেওয়া হয়।

ইইউর সঙ্গে যৌথভাবে সাজানো একটি নতুন পাইলট প্রোজেক্টের আওতায় ডব্লিউএফপির পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের যেসব শরণার্থী পরিবারে তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশু রয়েছে, তাদের টপ আপের মাধ্যমে প্রতিজন শিশুর জন্য আনুমানিক ২৫৫ টাকা করে দেওয়া হয়। যেন তারা ই-ভাউচার বিক্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে নানা রকমের তাজা শাকসবজি ও অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার কিনতে পারে।

কক্সবাজারে ডব্লিউএফপির ইমার্জেন্সি কো-অর্ডিনেটর শিলা গ্রুডেম বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন ও সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা শরণার্থী ও কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠী যখন অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছে, ঠিক সেই সময়টায় তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে ডব্লিউএফপি কৃতজ্ঞ।’ তিনি আরও বলেন, কক্সবাজারে ইইউর ক্রমাগত খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তার ফলে শরণার্থীদের মর্যাদা সুরক্ষিত হচ্ছে এবং এই অঞ্চলের স্থানীয় কৃষকদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।