শাহেদুল ইসলাম, কুতুবদিয়া:

কুতুবদিয়া উত্তর ধূরুং ইউনিয়ন পরিষদের উত্তর পাশে পরিত্যক্ত একটি ভবনে ঝুকি নিয়ে বসবাস করে আসছে ছয় সদস্যের একটি পরিবার। ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা কল্যাণ কেন্দ্র ভবনটি জরাজীর্ণ হওয়ায় কর্তৃপক্ষ পরিত্যক্ত ঘোষিত হলে পরিবারটি সেখানে আশ্রয় নেন। জরাজীর্ণ ভবনটি যে কোন সময় দূর্ঘটনা ঘটার আশংকা আছে ।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার উত্তর ধূরুং ইউনিয়ন পরিষদের উত্তর পাশে রাস্তার পূর্ব পাশে জরাজীর্ণ ঝুকিপূর্ণ ভবনটি এক সময় ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা কল্যাণ কেন্দ্র ছিল। পরিত্যক্ত ভবনের অনেক জায়গায় ধসে পড়ার চিহ্ন, ছাদ থেকে পানি পড়া বন্ধ করতে ভবনে পলিথিনের ছাউনি, রাতে ঘুমানোর জন্য কক্ষের মধ্যে কাপড় আর বাঁশ ও কাঠ দিয়ে আলাদা কক্ষ তৈরি , বারান্দায় পাশে অস্থায়ী ভাবে তৈরি চুলা দিয়ে রান্না করা হয় তাদের খাবার। ভবনটি ব্যবহারের অযোগ্য হলে কর্তৃপক্ষ পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। সেই ভবনে অটোরিকশা চালক শামশুল আলম বসবাস করে আসছে স্ত্রী সাজেদা বেগমসহ পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছয়জন। তাদের চার সন্তান। ৩ জন মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান। শামশুল আলম সারাদিন রিকশা চালিয়ে আয় করেন দৈনিক ৩শ টাকা। সেই টাকায় তাদের সংসার চলে।
বেড়ীবাঁধের পাশে ঘর করে কোন রকম চলছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে বেড়ীবাঁধ বিলীন হলে সরকার আবারও বেড়ীবাঁধ নির্মাণের জন্য কাজ শুরু করে। তার আর কোন জমি জায়গা নেই। শেষ সম্বলটুকুও বেড়ীবাঁধের কারণে কোন ক্ষতিপূরণ ছাড়া ছাড়তে হলো তার সেই বসতভিটা। অবশেষে তৎকালীন জনপ্রতিনিধিরা এ পরিত্যক্ত ভবনে স্থান করে দেয়। সাথে আরও ৩ পরিবার ছিল। তাদের আর্থিক অবস্থা সচল হলে অন্যত্র চলে যায়। কিন্তু ভাগ্যে পরিবর্তন হয়নি শামশুল আলম।
অটোরিকশা চালক শামশুল আলমের স্ত্রী সাজেদা বেগম জানান, তাসমিন (২২), তাওহিদ (১৯) ইয়াছমিন (১৫) ও শাবনুর (১৩) এবং স্বামী শামশুল আলমসহ ছয়জন সদস্য খেয়ে, না খেয়ে চলছে সংসার। তাদের বসতভিটা সাগরে বিলীন হওয়ায় এক যুগের বেশী সময় ধরে ঘরহারা হয়ে বাস করে আসছে উত্তর ধুরুং ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনে। জীবন যুদ্ধে মাথা গোঁজার ঠাঁই নাই বলে তারা এ পরিত্যক্ত ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন। এসময় তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে একখন্ড মাথা গোঁজার ঠাঁই চান।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মনসুর রাব্বি জানান, যেকোন মুহুর্তে ধসে পড়তে পারে এ পরিত্যক্ত ভবন। চলে যাওয়ার জন্য বার বার বলা হলেও মাথা গোঁজার আশ্রয় না থাকার কারণে কোথায়ও যেতে পারছে না। প্রশাসনের কাছে জানানো হয়েছে, যাতে তাদের থাকার একটি ঘর যেন ব্যবস্থা করা হয়।
এ বিষয়ে উত্তর ধূরুং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ.স.ম. শাহরিয়ার চৌধুরী জানান , সাগরে বসতভিটা হারিয়ে বিগত প্রায় একযুগের বেশি সময় ধরে এ অসহায় অটোরিকশা চালক শামসুল আলম পরিবারের ৬ সদস্য নিয়ে ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা কল্যাণ কেন্দ্রের পরিত্যক্ত ভবনে থাকার অনুমতি নিয়ে ছিলেন। ভবনটি তখন মোটামুটি বসবাসের উপযোগী ছিল। কিন্তু বর্তমানে ভবনটি নাজুক অবস্থায় রয়েছে এবং যেকোন মুহুর্তে ধসে পড়তে পারে। তাই দ্রুত পরিবারটিকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। এসময় তিনি স্থায়ীভাবে তাদের জন্য কিছুই করা যায়নি বলে জানান।