গত ২ আগস্ট মুজিবুর রহমান ও তার স্ত্রী কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও এর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মলেন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান জনাব সালাহউদ্দিন আহমদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য সচিব জনাব এ কে এম গিয়াসউদ্দিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন ড. খান সরফরাজ আলী, ডিরেক্টর ফিন্যান্স জনাব জসীম উদ্দিন সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেজ ক্ষুন্ন করার জন্য কাল্পনিক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত যে কদাকার. কুৎসিৎ ও আপত্তিকর ভাষায় আক্রমণ করেছেন তা সম্পূর্ণ শিষ্টাচার বর্জিত। উক্ত সাংবাদিক সম্মেলনে জনাব মুজিবুর রহমানসহ অন্যান্যদের যে বক্তব্য, আমরা তার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

আমরা স্পষ্টতই বলতে চাই, বিজ্ঞ আদালত, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসি’র নির্দেশনার বাইরে আমাদের কোনো অবস্থান নেই। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। জনাব মুজিবুর রহমান গং এর আগেও দেশের কিছু সংবাদ মাধ্যমে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা প্রসঙ্গে বিভ্রান্তিমূলক নানা তথ্য দিয়ে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল এবং এখনো চালিয়ে যাচ্ছে। মূল ঘটনা হচ্ছে জনাব মুজিবুর রহমান গং বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে গা ঢাকা দিয়েছিল এবং এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য বর্তমানে নানা চল- চাতুরীর আশ্রয় নিচ্ছে।শিক্ষামন্ত্রণালয় ও ইউজিসি আইন ও নিয়ম প্রতিপালনের মাধ্যমে এই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয়ে উত্তরোত্তর এর সুনাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ইর্ষান্তিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেজ নষ্ট করে কক্সবাজারবাীর প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই উপহারকে ম্লান করার জন্য তিনি এই অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে কক্সবাজার জেলাসহ দেশবাসীকে একাধিকবার এ সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে প্রকৃত তথ্য প্রদান করা হয়েছে।

কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বা সিবিআইইউ কক্সবাজার জেলার একমাত্র উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ২০১৩ সালে উখিয়ার জনসভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগ তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ও দেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্ব জনাব সালাহ্ উদ্দিন আহমেদ সিআইপি কে কক্সবাজারে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের নির্দেশ দেন। সে মোতাবেক ২০১৪ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করে।প্রথম ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা জনাব সালাহ উদ্দিন আহমেদ এবং এতে জনাব মুজিবুর রহমানকে সেক্রেটারি করা হয়। মূলত জনাব সালাহউদ্দিন আহমদ মুজিবুর রহমানকে সাচিবিক দায়িত্ব প্রদান করেন। এই সুবাদে উক্ত মুজিবুর রহমান নানা কূট কৌশলের আশ্রয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালটিকে বগলদাবা করে তার হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে ওঠে পড়ে লেগে যায়। জনাব সালাহউদ্দিন আহমদের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ীক কাজে ব্যস্ত থাকার সুযোগকে তিনি পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে জনাব সালাহ উদ্দিন আহমদের পরামর্শ উপেক্ষা করে ২০১৪-২০২০ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা বিষয়ে একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার অপচেষ্টা অব্যাহত রাখেন। এ ধারাবহিকতায় জনাব মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান জনাব সালাহউদ্দিন আহমদের অগোচরেতার আত্মীয়-স্বজন অর্থাৎ তার স্ত্রী, ভাই, ভায়রাদের নিয়ে একটি সম্পূর্ণ পারিবারিক ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে। এ ট্রাস্টি বোর্ডে মুক্তিযুদ্ধেরস্বপক্ষের কাউকে অন্তর্ভুক্ত করা দূরে থাক, কক্সবাজার এলাকার কোনো গন্যমাণ্য ব্যক্তিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তার নিকট আত্মীয়-স্বজন, স্বাধীনতা বিরোধী এবং অযোগ্যলোকদের নিয়ে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করায় ইহা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও জয়েন্ট স্টক কোম্পানীর অনুমতি লাভে ব্যর্থ হয় এবং রেজিস্ট্রেশন পায়নি। এছাড়া জনাব মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ্যতাহীন শিক্ষক নিয়োগ ও যোগ্যতাহীন ছাত্র ভর্তি করার বেআইনী কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেওয়ায় শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয়টি ভাবমূর্তি সংকটে পড়ে যায়। এক পর্যায়ে মুজিবুর রহমান অর্থ আত্মসাৎ শুরু করেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন নানা বিষয়ে আপত্তি দেয়।মুজিবুর রহমান কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোটি কোটি টাকার আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন প্রেরিত তদন্ত কমিটির কাছে উন্মোচিত হয়। তৎকর্তৃক বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম ও অসঙ্গতির বিষয়সমূহ আরো বিশদভাবে খতিয়ে দেখার জন্য মঞ্জুরি কমিশনের তদন্ত টিম বোর্ড অব টাস্টিজের চেয়ারম্যান জনাব সালাহউদ্দিন আহমদকে পরামর্শ দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারারকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলে ট্রেজারার নিজে বাদী হয়ে মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় অর্থ আত্মসাতের মামলা দায়ের করেন, যা বর্তমানে বিচারধীন রয়েছে। উক্ত মুজিবুর রহমান ইউজিসি ও মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ব্যতিরেকে বিশ্ববিদ্যারয়ের এফডিআর এর টাকা সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করায় চেয়ারম্যান জনাব সালাহউদ্দিন আহমদ বাদী হয়ে মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম পাঁচলাইশ থানায় অপর একটি মামলা দায়ের করেছেন। যা এখন বিচারাধীন রয়েছে।

দীর্ঘ সাত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সচিব থাকাকালীন মুজিবুর রহমান বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোট কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। মুজিবুর রহমানের এসব অপকর্র্মের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থিত্ব যখন হুমকির সম্মুখীন, তখন বিশ্ববিদ্যালয়টির ও উদ্যেক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা জনাব সালাহ উদ্দিন আহমদ বিশ্ববিদ্যালয়টির হাল ধরেন। বৈশ্বিক এই ক্রান্তিকালেও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী তার স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ূ মঞ্জুরি কমিশন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় অবগত আছেন। জনাব সালাহ উদ্দিন আহমদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমসহ অন্যান্য কার্যক্রমে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন জনাব সালাহ্ উদ্দিন আহমেদ প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অনুযায়ী পরিচালনার উদ্যোগ নেন এবং বোর্ড অব ট্রাস্টিজ পুনর্গঠিত করেন। তিনি কক্সবাজার জেলার বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, পৌরসভার মেয়র, সাবেক এম পি, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি প্রতিনিধিত্বমূলক ট্রাস্ট গঠন করেন যা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেয়েছে এবং রেজিস্ট্রেশনের পর্যায়ে আছে। ট্রাস্টি বোর্ড স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য কক্সবাজার শহরে স্থান নির্বাচন করার উদ্যোগ নিয়েছেন এবং সহসাই তা নিশ্চিত করা হবে। মঞ্জুরি কমিশনের শর্ত পূরণের অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যায়ের জন্য এফ ডি আর করা হয়েছে। কোচিং হোম নয় বরং একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে হিসেবে সি বি আই ইউ কে গড়ে তোলার সকল প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।

একাডেমিক যোগ্যতার ভিত্তিতে এসোসিয়েট প্রফেসর নিয়োগ করা হয়েছে এবং মঞ্জুরি কশিশন এই নিয়োগ গ্রহণ করেছে। অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংখ্যা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে পদ বিজ্ঞাপিত করা হয়েছে। অচিরেই শিক্ষক নিয়োগদান সম্পন্ন হবে। বাংলাদেশ সম্পর্কে গবেষণা ও নানা বিষয়ে সেমিনার করার জন্য ‘সেন্টার ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে ও একটি প্রবন্ধ সংকলন “ঐতিহ্য” প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখ্য যে, একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দিয়ে চিঠি প্রদান করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা পর্ষদ যেমন ফিন্যান্স ও সিন্ডিকেট পূনর্গঠন করা হয়েছে। ২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সাথে সঙ্গতি রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি ‘সার্ভিস রুল’ করা হয়েছে এবং ০১জুন ২০২১ সাল থেকে তা কার্যকর করা হয়েছে। এছাড়া মালয়েশিয়ার একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা, গবেষণার আদান প্রদান ও ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুযোগ রেখে একটি MoU বা Memorandum of Understanding সম্পাদন করা হয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিবিআইইউ একটি কোচিং সেন্টারের চরিত্র নিয়ে পরিচালিত হয়েছে যা কোন ক্রমেই কাম্য ছিল না। মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বেশ কিছু দূর্নীতির মামলা চলমান রয়েছে। আশা করা যায় কিছু সময়ের মধ্যেই এ বিষয়ে যথাযথ সমাধান আসবে এবং দুর্নীতির জন্য আদালত যথাযোগ্য শাস্তি বিধান করবে।

পরিশেষে আমরা বলতে চাই পারিবারিক ও বিতর্কিত ট্রাস্টি বোর্ডের পরিবর্তে, কক্সবাজার জেলার মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি ও শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ, বরেণ্য শিক্ষাবিদ, মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের সমন্বয়েগঠিত বর্তমান বোর্ড অব ট্রাস্টিজ কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে মানসম্মত উচ্চ শিক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলে ২০৪১ সাল নাগাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশকে যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন সে লক্ষ্য অর্জনে দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তুলতে আমরা বদ্ধ পরিকর। এই লক্ষ্যে আমরা সর্বস্তরের মানুষের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করি।

সিবিআইইউ এর পক্ষে
কুতুবউদ্দিন
জনসংযোগ কর্মকর্তা।

তারিখঃ ০৪/০৮/২০২১ খ্রিঃ