প্রথমআলো :

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনের বদলি স্থগিতে কোনো আদেশ দেননি হাইকোর্ট।

‘দুদক কর্মকর্তা শরীফের বদলি আদেশ স্থগিত’ নিয়ে পূর্বকোণ ও স্থানীয় কয়েকটি দৈনিকে আসা খবর আদালতের নজরে আনা হলে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ কথা বলেন। একই সঙ্গে আদালত দুদককে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমে রিজয়েন্ডার দিতে বলেছেন। দুদক আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেছেন, এটি আরেক দুর্নীতি—এটি তদন্ত করেন।

ওই বদলির আদেশ বাতিল ও ‘রোহিঙ্গাদের এনআইডি জালিয়াতি’ বিষয়ে যাতে শরীফ প্রতিবেদন দিতে পারেন—সে বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যানের কাছে করা আবেদন নিষ্পত্তি চেয়ে করা রিটটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নামের এক সংগঠনের চকরিয়া উপজেলা শাখার সভাপতির রিটটি করেছিলেন, যিনি ১৮ জুলাই দুদক চেয়ারম্যানের কাছে ওই আবেদনটি করেন।

‘আপনার বদলি না হওয়ার এত আগ্রহ কেন?’
রিটটি আজ আদালতের কার্যতালিকার নয় নম্বর ক্রমিকে ছিল। ক্রম অনুসারে বিষয়টি এলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, গত ৩০ জুন হাইকোর্টে রিট সরাসরি খারিজ হয়। অথচ এই বেঞ্চ বদলির আদেশ স্থগিত করেছেন বলে স্থানীয় তিনটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। পূর্বকোণ ও কক্সবাজার নিউজে খবরটি এসেছে। ২৯ জুলাই আদেশ দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আদালত বলেন, রিট খারিজ করা হয়েছিল মনে আছে।

নথিপত্র থেকে জানা যায়, এর আগে দুদকের চট্টগ্রাম-২ জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনকে এক চিঠিতে পটুয়াখালী জেলা কার্যালয়ে বদলি করা হয়।

শুনানিতে রিট আবেদনকারীর আইনজীবী আশানুর রহমান বলেন, আগের রিটটি ছিল বদলির আদেশ চ্যালেঞ্জ করে। দুদক চেয়ারম্যানের কাছে করা আবেদন নিষ্পত্তি চেয়ে এই রিটটি।

আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘আপনার বদলির না হওয়ার এত আগ্রহ কেন ? সরকারি আদেশ হয়েছে, বদলিযোগ্য চাকরি।’
তখন আশানুর রহমান বলেন, যেহেতু উনি (শরীফ) তদন্ত শেষ করেছেন, এটি বদলির বিষয় নয়।

আদালত বলেন, ‘দুদক কাকে দিয়ে তদন্ত শেষ করবে, কাকে দিয়ে করবে না—এটি দুদকের বিষয়। যে আবেদন দিয়েছেন, তাতে প্রমাণ হয় আপনি আগ্রহ নিয়ে মামলাগুলোর তদন্ত করতে চান। আদালত কোনো আদেশ দেননি, অথচ পূর্বকোণে আসল কীভাবে যে, আমরা স্থগিতাদেশ দিয়েছি ?’
তখন আশানুর রহমান বলেন, আইনজীবী হিসেবে লড়তে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানা নেই।

আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, এত আগ্রহ দেখানো উচিত না। হয়তো আপনি ভালো কর্মকর্তা। ভালো ভালো তদন্ত করেছেন। এ কারণে আপনাকে বদলি করা যাবে না, আপনি তদন্ত সম্পূর্ণ করবেন—এমন আরজি নিলে পুরো তদন্ত প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন।

আইনজীবী আশানুর রহমান বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা (শরীফ) করোনায় আক্রান্ত, তদন্তও শেষ। রিট আবেদনকারী চাচ্ছেন, রিলিজের আগে উনি যাতে কমিশনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারেন—এই আবেদন নিয়ে রিটটি।
আদালত বলেন, কোনো অর্ডার দেওয়া হবে না। এতে প্রক্রিয়াগত ত্রুটি হবে।

শুনানির এই পর্যায়ে ভার্চ্যুয়ালি আদালতে যুক্ত হন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম। তাকে উদ্দেশে করে আদালত বলেন, তদন্ত কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। নিয়মিত বেঞ্চ থাকাকালে গত ৩০ জুন এতে হস্তক্ষেপ করেনি। দুদকে একটি আবেদন দেওয়া হয়েছে, তা নিষ্পত্তি চেয়ে এখন রিট নিয়ে এসেছে।

শুনানির এই পর্যায়ে দৈনিক পূর্বকোণে প্রকাশিত প্রতিবেদন পড়ে শুনিয়ে আইনজীবী রাকিবুল হাসান বলেন, আইনজীবী মাজহারুল হকের স্বাক্ষরিত হাইকোর্টের আদেশের কপি থেকে এই তথ্য জানা গেছে। আদালত বলেন, মাজহারুল হক কে ?
দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খানের উদ্দেশে আদালত বলেন, দুদকের পক্ষ থেকে রিজয়েন্ডার দেবেন যে, আদালত এ ধরনের কোনো স্থগিতাদেশ দেননি। দুদকের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে বা স্থানীয়ভাবে রিজয়েন্ডার দেবেন।
তখন খুরশীদ আলম খান বলেন, অফিশিয়ালি ইনফর্ম করে দিচ্ছি এ ধরনের কোনো অর্ডার হয়নি।

দুদক আইনজীবীকে আদালত আরও বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট পত্রিকা অফিসে যোগাযোগ করে কোন মাজহারুল ইসলামের প্যাডে দিয়েছেন, তা পরবর্তী দিন আদালতে পাঠিয়ে দেবেন। এটি আরেক দুর্নীতি—এটি তদন্ত করেন।

এ সময় রিট আবেদনকারীর আইনজীবী আশানুর রিটটি উপস্থাপন না করার কথা বলেন। তখন আদালত বলেন, ডিলিট (কার্যতালিকা থেকে বাদ) করে দিচ্ছি।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, নিয়মিত আদালত খুললে বিষয়টি এই বেঞ্চে উপস্থাপন করা হবে। এ ধরনের জালিয়াতি যদি সত্যিকার অর্থে হয়ে থাকে, তাহলে ব্যবস্থা নিতে হবে।

তখন আদালত বলেন, পত্রিকায় এসেছে, এইভাবে পত্রিকায় আসবে—এটি ঠিক না।
আইনজীবী আশানুর রহমান বলেন, একজন আইনজীবী এ ধরনের মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে পত্রিকায় দিলে তা দুর্ভাগ্যজনক।

আদালত বলেন, ‘আমরা কোনো অর্ডার দিইনি। শুনে বলেছি, কোনো অর্ডার দিতে পারব না। তাই ডিলিটেড। পরে কার্যতালিকা থেকে রিটটি বাদ দেওয়া হয়।’
আশানুর রহমানের উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘নিজে নিজে চার্জশিট দেওয়ার জন্য এত আগ্রহী হয়ে গেলেন কেন ? আইনের মধ্যে থেকে সবকিছু করতে হবে। আপনি চাকরি করেন। দুর্নীতি দমন কমিশন একটি প্রতিষ্ঠান, তার নিজস্ব স্বাধীনতা আছে—এগুলো তো মানতে হবে। তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে আপনি বলতে পারেন না যে, চার্জশিট দেওয়া পর্যন্ত সময় দেন।’