মোঃ জয়নাল আবেদীন টুক্কু, নাইক্ষ্যংছড়ি:
সারাদেশে বর্তমান করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার সেই মুহুর্তে কক্সবাজারের রামুর গর্জনিয়া-কচ্ছপিয়া ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম,বাইশারী ও সদর ইউনিয়নে টানা ভারীবর্ষণে ও বাঁকখালী নদী ও ঘুমধুম,বাইশারীর খালে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমানার উপর দিয়ে অতিবাহিত হয়ে এসব এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় দুই লক্ষাধিক অধিক মানুষ পানি ও ঘরবন্ধী হয়ে পড়েছে। ভারি বষর্ণে ও ঢলের পানিতে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ৩টি ইউনিয়ন ও রামুর গর্জনিয়া-কচ্ছপিয়া এলাকা পানিতে নিমজ্জিত।
২৬ জুলাই সন্ধ্যা থেকে টানা বৃষ্টি হওয়ায় বুধবার সকাল থেকে এসব এলাকা প্লাবিত হয়। বন্যার পানিতে ঘুমধুম ও কচ্ছপিয়াতে মাছের প্রজেক্ট থেকে কয়েক লক্ষ টাকার মৎস্য সম্পদ ভেসে যাওয়ায়। এছাড়াও পানিতে তলিয়ে গেছে শত শত একর জমির শাক-সবজি, রোপিত অগ্রীম ফসল ও বীজতলা। আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীনের মুখে পড়েছে প্রান্তিক চাষিরা। গ্রামীণসড়ক পানিতে ডুবে থাকায় উপজেলার সাথে এসব ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। টানা ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকলে আরো বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে বাঁকখালী নদী ও ওইসব এলাকায় নদীর পানি কমতে শুরু করেছে।

তবে স্থানীয়দের মতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম,বাইশারী ও পাশ্ববর্তী গর্জনিয়া-কচ্ছপিয়া নিম্ন অঞ্চলের অবস্থা নাজুক হতে পারে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ভারি বর্ষণ ও বাঁকখালী নদী, ঘুমধুম ও বাইশারী খালে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি নাইক্ষ্যংছড়ির ৩টি ও রামু উপজেলার ২ টি ইউনিয়ন বন্যার পানি ঢুকে প্লাবিত হওয়ায় চরম খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এতে পানিবন্ধী ঘুমধুম,তুমব্রু,কোনার পাড়া সীমান্তের শূন্য রেখায় আশ্রীত রোহিঙ্গা ও বাইশারী ও সদর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম এবং রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের চাকমার কাটা,ডিক কুল নতুন তিতার পাড়া,নতুন মিয়াজির পাড়া,হাজির পাড়া,বালুবাসাসহ ২০ গ্রাম। গর্জনিয়া ইউনিয়নের ক্যাজর বিল,পশ্চিম সিকদার পাড়া,ডাক ভাংঙ্গা,টাইম বাজার,জুমছড়ি পশ্চিম জুমছড়িসহ ১০ টি গ্রাম। এসব এলাকার বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে খাদ্য ও বিশুদ্ব পানির অভাব দেখা গেছে। ওই দিন থেকে এসব এলাকায় ঘর-বাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করে তলিয়ে যায়। বাড়ি-ঘর ডুবে থাকায় শতশত মানুষ সাইক্লোন সেন্টারে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বারান্দায় আশ্রয় নেয়।
এদিকে গর্জনিয়া-কচ্ছপিয়া ও ঘুমধুমে ভয়াবহ বন্যায় খাদ্য ও বিশুদ্ব পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ঘর-বাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করায় রান্নার কাজ করতে পারছে না বানবাসি। অনেকে শুখনো খাবার খেয়ে দিন পার করছেন। আবার অনেকেই খাদ্য সংকটের কারণে অভাবে অভুক্ত থেকেছেন। বিভিন্ন গ্রামীণসড়ক গুলো পানিতে ডুবে থাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে উপজেলা শহরের সাথে। এসব ইউনিয়নে গত তিনদিন ধরে বন্ধ রয়েছে যোগাযোগ।
বেশকিছু ইউনিয়নে বানবাসি মানুষেরা নৌকা ও কলাগাছের ভেলা বানিয়ে চলাচল করছে।
স্থানীয়রা জানান, এসব এলাকায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিলেও এখনো পর্যন্ত সরকারি ভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী দূর্গত এলাকায় পৌঁছায়নি বলে বানবাসি বন্যাকবলিত মানুষেরা দাবী করেছেন। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও এবং সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানগণ তৎক্ষনাৎ শুকনো ও রান্না করা খাবার বিতরণ করতে দেখা গেছে। কচ্ছপিয়ায় আওয়ামিলীগ নেতা সোহেল সিকদার ঘুমধুমে যুবলীগ নেতা ছৈদুল বশর ও নাইক্ষ্যংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন, ব্যক্তিগত উদ্যোগে বেশ কিছু এলাকায় শুখনো খাবার ও ত্রাণ বিতরণ করলেও এসব পর্যাপ্ত নয় বলে জানান বানবাসিরা। চরম দূর্ভোগে পড়েছে ওইসব ইউনিয়নের মানুষ। গত তিনদিন ধরে এসব এলাকার শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে।
কচ্ছপিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু মোঃ ইসমাইল নোমান বলেন, তার ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা বন্যার পানিতে ডুবে রয়েছে। কৃষকের বীজতলা ও বিভিন্ন ধরণের ফসল ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, তার ইউনিয়নে ব্যক্তিগত ভাবে শুকনো ও রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। গর্জনিয়া ইউপির চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন
গর্জনিয়া ক্যাজর বিল এলাকার সবচেয়ে দুই শত বছরের পুরনো একটি মসজিদ যে কোন মুহুর্তে নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রণয় চাকমা জানান, ভারিবর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলের পানিতে পুরো উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা থেকে মানুষ সরানো হচ্ছে। তাদেরকে আশ্রয়ন কেন্দ্র গুলোতে উঠানো হচ্ছে। বুধবার থেকে পানিবন্দি গর্জনিয়া-কচ্ছপিয়া পরির্দশন ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়। রামু উপজেলা প্রশাসন থেকে গর্জনিয়া-কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে ২ টন করে ৪ টন চাউল বরাদ্দ দেওয়া হয়।

অপরদিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা (ইউএনও) বেগম সালমা ফেরদৌস বলেন গত তিন দিন থেকে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে রান্না করা খাবার বিতরণ চলছে। এছাড়াও তনি সরকারি ভাবে ৩ টন চাউল পেয়েছে ২ টন ঘুমধুম ইউনিয়নে ১ টন সদর ইউনিয়নে দিয়েছেন। আজ রাতের মধ্যে আরো কিছু ত্রাণ আসছে এ গুলো আসলে দ্রুত বন্যা কবলিত এলাকায় পাঠানো হবে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ শফিউল্লাহ বলেন,তিনি শুরু থেকে মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে রেডক্রিসেন্ট এর টিমের সাথে নিজে মাইকিং করেন। এছাড়াও বন্যা কবলিত এলাকায় রান্না করা খাবার বিতরণ, বৃহস্পতিবার ঘুমধুমে ত্রাণ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ করেন।