আতিকুর রহমান মানিক:
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির খামখেয়ালীপনার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে গ্রাহকরা।
ঠুনকো অজুহাতে যখন তখন ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ রাখা যেন একপ্রকার রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে রেকর্ড পরিমান বিদ্যুৎ উৎপাদনের ফলে দেশে কোন বিদ্যুৎ ঘাটতি নেই। কিন্তু এর কোন সুফল পাচ্ছেনা জেলার পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকগন।
চলমান বর্ষা মৌসূমে একটু বৃষ্টি হলেই বৃষ্টির অজুহাতে বিদ্যুৎ লাইনগুলো বন্ধ রাখা হচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে। তাই বৃষ্টি হলেই বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়াকে “বৃষ্টি প্যাকেজ” নামকরন করেছেন রসিক গ্রাহকরা।
গত কয়েকদিন আগে থেকে শুরু হওয়া একনাগাড়ে ঝড় বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলের দূর্যোগকালীন সময়েও প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন গ্রাহকগন।
কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন ঈদগাঁও উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের বিদ্যুৎ গ্রাহক আবরার জানান, একটু বৃষ্টি শুরু হলেই বিদ্যুৎ চলে যায়। অভিনব এ “বৃষ্টি প্যাকেজ” থেকে পরিত্রাণ চান তিনি।
চকরিয়া উপজেলার খুটাখালীর গ্রাহক এরশাদ জানান, চলতি বর্ষাকালীন সময়ে সামান্য ঝড়-বৃষ্টি-বাতাসের অজুহাতে ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ বন্ধ রেখে লোডশেডিং করাকে “বৃষ্টি প্যাকেজ” নামে নামকরণ করেছে সাধারণ গ্রাহকরা। পল্লী বিদ্যুৎ কর্তাদের এই তুঘলকি কান্ডের প্রতিকার চান তিনি।
উখিয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সরওয়ার আলম শাহীন বলেন, কয়েকদিন আগে থেকে শুরু হওয়া মাঝে-মধ্যে সামান্য বাতাস ও হালকা বৃষ্টির অজুহাতে প্রায় সময় বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করে রাখছেন পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা। অজুহাত হিসেবে বলা হচ্ছে, ঝড়-বাতাসের পর সঞ্চালন লাইন চেক করার কথা। প্রায় প্রতিদিনই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এভাবে লোডশেডিং করা হচ্ছে।
মহেশখালী পৌরসভার বিদ্যুৎ গ্রাহক আমির খান বলেন, বৃষ্টি শুরু হলেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়। একটু পর বৃষ্টি থেমে যায়। কিন্ত বিদ্যুৎ আর আসেনা।
হাট বাজারের চেয়ে গ্রামাঞ্চলের গ্রাহকরাই এর শিকার হচ্ছে বেশি। সারাদিনে গড়ে কয়েক ঘন্টাও বিদ্যুত থাকছেনা। এতে গ্রাহক ভোগান্তি চরমে উঠেছে।
ভ্যাপসা গরমে বিদ্যুৎ বিহীন অবস্থায় বলতে গেলে আলু সিদ্ধ হচ্ছেন সর্বস্থরের জনগণ।
টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপ এলাকার আলী হোসেন বলেন, ক্রমাগত বিদ্যুৎ আসা-য়াওয়ার ফলে ফ্রিজ, এসি, কম্পিউটার ও টেলিভিশনসহ অপরাপর বিদ্যুতনির্ভর যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
ঈদগাঁও উপজেলার জালালাবাদ পূর্ব ফরাজী পাড়ার গৃহিনী পারভীন বলেন, বর্ষাকালে ঝড়-বৃষ্টিতো হবেই, কিন্তু এর অজুহাতে ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিং কাম্য নয়।
লোডশেডিংয়ে অভিনব এ বৃষ্টি প্যাকেজ সম্পর্কে জানতে চাইলে কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুত সমিতির জেনারেল ম্যানেজার আক্তারুজ্জামান লস্কর বলেন, জেলায় তিন লক্ষ আশি হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে।
প্রতিটি উপজেলায় একটি করে ৩৩ কেভি ফিডার ও সাব ষ্টেশন থেকে একটা করে ফিডারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে ঝড় বৃষ্টির ফলে লাইন ফল্ট করলে সরবরাহ বিঘ্নিত হয় বলে জানান তিনি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে ত্রুটি দেখা দিলে দ্রুত মেরামতের জন্য পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রয়োজনীয় লোকবল নেই।ফলে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারন করেছে।
ঈদগাঁও এলাকার সচেতন গ্রাহকরা জানান, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) থেকে ১৯৯৪ সালে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি উক্ত এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্হা ও সঞ্চলন লাইন অধিগ্রহন করে।
মূলত এরপর থেকেই বিদ্যুতের ইউনিট মূল্য বৃদ্ধি, মিটার ভাড়া ও ডিমান্ড চার্জসহ আজগুবি বিভিন্ন সারচার্জ আদায় করে গ্রাহক হয়রানি করে আসছে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।
ভুক্তভোগী গ্রাহকরা বলেন, “বৃষ্টি প্যাকেজ” পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের খাম-খেয়ালীপনারই ফসল। এটা বন্ধ না হলে সর্বস্তরের জনগনকে সাথে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।