মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া দুর্নীতি মামলার চার্জসীট (অভিযোগপত্র) আদালতে জমা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বুধবার ২৮ জুলাই দুদকের প্যানেল আইনজীবী এডভোকেট মাহমুদুল হক গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত সোমবার ২৬ জুলাই আদালতে তদন্ত কর্মকর্তা ১৩ পৃষ্ঠার এই চার্জশিট জমা দেন। চার্জসীট গ্রহনের শুনানির তারিখ চলমান লকডাউনের কারণে এখনো নির্ধারিত হয়নি বলে তিনি জানান।

দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণ’র বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতির এ মামলাটি দায়ের করেছিলেন। মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, মামলাটির তদন্ত কাজ শেষ করেছি। অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি। মামলার আসামি চুমকি কারণ’কে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছি।মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলায় সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ গ্রেফতার হওয়ার পরে থেকে পলাতক রয়েছেন মামলায় অভিযুক্ত প্রদীপের স্ত্রী চুমকি কারণ।

দুদক জানায়, একই কর্মকর্তা মামলাটি তদন্ত করে কমিশনে প্রতিবেদন পেশ করেন। পরে কমিশন প্রতিবেদনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গত ২৫ মার্চ আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়ার জন্য অনুমোদন দেয়।

চার্জশিটে প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। ঘুষ ও দুর্নীতির টাকায় অর্জিত সব সম্পদ ওসি প্রদীপ তার স্ত্রী’র নামে রেখেছেন বলেও চার্জশীটে অভিযোগ করা হয়।

দুদকে জমা দেওয়া সম্পদের বিবরণীতে তারা ১৩ লাখ ১৩ হাজার ১৭৫ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। তদন্তে দেখা গেছে, তারা ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় ছয়তলা বাড়ি, ষোলশহরের বাড়ি, ৪৫ ভরি স্বর্ণ, একটি প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস, কক্সবাজারের একটি ফ্ল্যাট ও ব্যাংক হিসাবের মালিক প্রদীপের স্ত্রী চুমকি কারণ। প্রদীপের ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থে স্ত্রী চুমকি কারণ এসব সম্পদ অর্জন করেন বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে উঠে এসেছে। এছাড়া চুমকি কারণ নিজেকে একজন মাছ ব্যবসায়ী দাবি করলেও তার মাছ ব্যবসার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি দুদকের তদন্তে। দুদকের এই মামলায় ২৯ জনকে সাক্ষী রাখা হয়েছে।

তাদের বিরুদ্ধে দুদক আইন-২০০৪ এর ২৬ (২), ২৭ (১) ধারা ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪ (২) ধারার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালতে তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল হয়।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৩১ জুলাই রাতে সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান কক্সবাজার- টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। এ হত্যা মামলায় কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর আদালতে গত ২৬ জুলাই থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত সাক্ষ্য গ্রহনের দিন ধার্য্য থাকলেও লকডাউনের কারন আদালতে স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সাক্ষ্য গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি বলে জানান-পিপি এডভোকেট ফরিদুল আলম।