কালের কন্ঠ:

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাজধানীর একটি কলেজের নারী অধ্যক্ষ এবং প্রতিষ্ঠানটির অভিভাবক ফোরামের নেতার একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। এনিয়ে চলছে তোলপাড়। তবে এটিই যে অধ্যক্ষ্য’রই ফোনালাপ তা কালের কণ্ঠের পক্ষ থেকে যাচাই করা যায়নি। ওই অধ্যক্ষেরও দাবি, ‘সুপার এডিট করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফোনালাপের একাংশ প্রকাশ করা হয়েছে।’

ফোনালাপের অডিও এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ৪ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের এই ফোনালাপ নিচে তুলে ধরা হলো-

অধ্যক্ষ : লকডাউনের মধ্যে আমি অফিস করি কি না করি কার বাপের কী? কোন … বাচ্চার কিছু যায় আসে?

অভিভাবক : না …।

অধ্যক্ষ : কোন …র বাচ্চার যায় আসে কিছু? যদি আমি অফিস না করি? আমি জানতে চাই, কোন … পোলার কী যায় আসে?

অভিভাবক : এইডি তো আপনার জিবির (গভর্নিং বডি) লোক।

অধ্যক্ষ : কোন … পোলার কী যায় আসে? আমি রাজনীতি করা মেয়ে, আমি কিন্তু ভদ্র না।

অভিভাবক : না…।

অধ্যক্ষ : আমি বলে দিলাম, আমি শিক্ষক। আমি প্রিন্সিপাল। আমি সেই দিকটায় আলাদা পরিচয়।

অভিভাবক : এইডি তো আপনের…।

অধ্যক্ষ : ওই … পোলা যদি আমার পেছনে লাগে আমি কিন্তু তার গোষ্ঠী উদ্ধার করে ছাড়ব।

অভিভাবক : না, আপনের বোধহয় ওই যে জিবির মেম্বারে এইগুলা ছড়ায় কি না দেখেন।

অধ্যক্ষ : কোন মেম্বার আর কোন মার… আমার দেখার কিন্তু বিষয় না। কোনো … বাচ্চা যদি আমার পেছনে লাগে আমি কিন্তু ওর পেছনে লাগব। আমি শুধু… না, আমি দেশছাড়া করব।

অভিভাবক : ঠিক আছে আপা। এইটা ভালো।

অধ্যক্ষ : এবং আমি অনেক সহ্য করেছি। এই কালকে সচিবের কাছে বলে এসেছি। সচিব বলেছে, মন্ত্রী তোমাকে খুব ভালোবাসে। তুমি এই জায়গায় থাকবা। আমি বলেছি, স্যার…। …তুমি এইখানে থাকবা, তুমি যোগ্য, মন্ত্রী তোমাকে পছন্দ করেছে।

অভিভাবক : আইচ্ছা।

অধ্যক্ষ : আর কোনো … বাচ্চা তদন্ত কমিটি করলে আমি কিন্তু দা দিয়ে কোপাবো তারে, সোজা কথা।

অভিভাবক : হা হা হা।

অধ্যক্ষ : আমার … আছে। আমার বাহিনী আছে। আমার ছাত্রলীগ আছে, যুবলীগ আছে, আমার যুব মহিলা লীগ আছে।

অভিভাবক : আফনে আবার…।

অধ্যক্ষ : কিন্তু কিচ্ছু লাগবে না। কাপড় খুইলা রাস্তার মধ্যে পিটাব।

অভিভাবক : আফনে আবার আগের চরিত্রে চইলা যাবেন মুকুল আফা। হা হা…।

অধ্যক্ষ : হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ যাব। যাব। আমি কিন্তু একদম, আমি কিন্তু গুলি করা মানুষ। রিভলবার নিয়া ব্যাগের মধ্যে হাঁটা মানুষ। আমার পিস্তল বালিশের নিচে থাকত। সারারাত পিস্তল আমার বালিশের নিচে থাকত। আমি কিন্তু…

অভিভাবক : আমি নাজমারে ফোন করে কইতাসি মুকুল আফা চেইতা গেসে তুমি থামাও। তোমার জিএসরে (হাসি)।

অধ্যক্ষ : হ্যাঁ। নাজমা আমারে বলসে। যে কেউ তরে ডিস্টার্ব করলে আমারে খালি বলিস। আমার নাজমাও লাগবে না। নাজমার গ্রুপের শুধু মেয়ে আমারে পরশু দিন অফিসে বসছিল, পরে আমারে বলতেছে আপা, আসবেন আমরা কাপড় খুইলা রাস্তার মধ্যে রাইখা পিটাব তারে। তার এত দুঃসাহস আপনার বিরুদ্ধে কথা বলে, আর আপনাকে ডিস্টার্ব করে। ঘরের থেকে টাইনা বাইর কইরা রাস্তার মধ্যে পিটাইয়া কাপড় খুইলা ফেলাব। আমার সম্পর্কে লেখে, আমার ঢাকা পতেঙ্গা ফেয়ারেল গলিতে চাইনিজ খাবার খাওয়াইসি। আর আমার সম্পর্কে লেখে, প্রিন্সিপাল অফিস করে না। কোন কুত্তার বাচ্চার মায়ের কোনে লিখেছি আমি। আমি আমার অফিস করি সচিবকে বইলা। করোনার মধ্যে, করোনার মধ্যে এই। করোনার মধ্যে আমার বারান্দার অফিসে আমি দরজা খুলে বসে থাকি, আমার চেয়ার টেবিল নিয়ে। আমি অফিসে গিয়ে রাউন্ড দিয়ে চলে আসি কর্মচারীরা ঠিকমতো আছে কি না। করোনার মধ্যে অফিসের নিয়ম নাই। আমাকে নিষেধ করছে, সারা বাংলাদেশ যে করোনার মধ্যে তোমরা লকডাউনের মাঝে অফিস খোলা রাখবে না, তাহলে করোনা ছড়াবে। কোন … বাচ্চার কী যায় আসে? কোন …র বাচ্চার কী যায় আসে? আমি অফিসে না গেলে …বাচ্চারা … বাচ্চারা কি আমার জায়গাটায় মজা পায়? কোন … বাচ্চারা চায় যে আমি অফিসে বইসা অফিস করি, তাদের অফ করেন। …র বাচ্চা।

অভিভাবক : ঠিক আছে আপা।

অধ্যক্ষ : আমি রাজনীতি করা মেয়ে।

অভিভাবক : আমি তো আছি, আফনে এত…।

অধ্যক্ষ : আমি কিন্তু শিক্ষা ক্যাডারে আসছি…।

অভিভাবক : আফনের চাইর নাম্বার গেইটের অপজিটে হইল আমার বাসা। এত চিন্তা করেন ক্যান? আমার দুই মিনিট লাগব যদি…।

অধ্যক্ষ : আমি কোনো চিন্তা করি না। কারণ, আমি নিজেই শক্তিশালী। কোনো… কথায় আমি চলি না। কোনো… বাচ্চার কথায় আমি চলি না। আমি নিজেই কিন্তু শক্তিশালী। দলটার আমি প্রেসিডেন্ট ছিলাম। মনে রাইখেন এই দলটা এখন সরকারে। যতদিন এই দলটা আছে ততদিন আমার পাওয়ার আছে। আমি কিন্তু … বাচ্চাদের লেংটা করে রাস্তার মইধ্যে পিটাইতে পারব। আমার লাগবে না আমার দলের মেয়েদের ডাকলে দলের ছেলেও লাগব না। মেয়েরাই ওর চুল-দাড়ি ছিঁইড়া প্যান্ট খুলে নামাইয়া দিবে। আমার সম্ভবত তিন সপ্তাহ যেন দাঁড়াতে সাহস না পায়। আমি কিন্তু কোনো অন্যায়ের সাথে বসবাস করি না, এইডা মনে রাইখেন।

অভিভাবক : তয় নাসির যে…।

অধ্যক্ষ : আমার নামে যে লেখে … বাচ্চারে আমি অনেক সহ্য করছি।

অভিভাবক : তয় নাসির যে…।

অধ্যক্ষ : সচিব স্যারকে বলছি, অসভ্যরা আমার পেছনে লাগে, আমারে আপনি ঢাকা বোর্ডে পোস্টিং দিয়ে দেন। স্যার বলছে, মন্ত্রী তোমাকে পছন্দ করে। আমাকে যেহেতু ধরতে গেলে থাকতেই হবে তাহলে কুত্তার বাচ্চাদের সাথে লইড়াই আমি থাকব।

অভিভাবক : না… নাসির যে এত চিল্লাচিল্লি করল আপনি নাসিররে কিছু কইলেন না ক্যান?

অধ্যক্ষ : কোনো নাসিররে আমি চিনি না। নাসিররে কী বলব তা আমি বুঝি। কেউ যেন আমার পেছনে লাগে না আপনি নিষেধ কইরে দিয়েন। আপনার সঙ্গে যারাই বলবে নিষেধ করে দিবেন।

অভিভাবক : না, তা তো বলবই। আফনে রোববারে ইস্কুলে আইলে আমারে একটু ফোন কইরেন।

অধ্যক্ষ : স্কুল করব কি না করব তা আমার এখতিয়ার, আমি বসব কি না বসব। আমি সচিবকে বলছি, সচিব স্যার- আমি বাসায় বসে অফিস করি। বলে, যে বাসাটা দেওয়া হইসে বাসায় বইসা অফিস করবা। যখন সুবিধা অফিসে যাবা এখন করোনার মধ্যে। তুমি এই নিয়া চিন্তা কইরো না। আমরা অফিস করি না মাসে একবার-দুবার আসি জরুরি মিটিং থাকলে। আর … বাচ্চারা সারাক্ষণ কয় আমি অফিসে যাই না, অফিসে যাই না।

ফোনালাপের বিষয়ে অধ্যক্ষ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সুপার এডিট করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফোনালাপের একাংশ প্রকাশ করা হয়েছে।’