বার্তা পরিবেশকঃ
কক্সবাজার সদরের ইসলামাবাদের এক আওয়ামী লীগ নেতার অত্যাচার-নির্যাতন থেকে বাঁচতে আকুতি জানিয়েছেন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা। জীবন ও মানসম্মান রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও কামনা করেছেন তিনি।
রবিবার (২৫ জুলাই) দুপুরে ঈদগাঁওতে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী সেতারা বেগম।
এ সময় তিনি অমানবিক নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
সেতারা বেগম প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল শুক্কুরের স্ত্রী ও পোকখালী ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সেতারা বেগম জানান, স্বামী আবদুল শুক্কুর ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে মারা যান। তাদের সংসারে দুই সন্তান রয়েছে। হাজারো প্রতিকুলতার মাঝেও তিনি সন্তান দুটিকে মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। তার মেয়ে মোহসিন আরা হেনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তাদের রয়েছে স্বামীর রেখে যাওয়া লবণ মাঠ। যাতে বর্ষা মৌসুমে মৎস্য চাষ করেন। তার স্বামী দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম সমবায় সমিতি “গোমাতলী সমবায় কৃষি ও মোহাজের উপনিবেশ সমিতির ৯৭ নম্বর সদস্য ছিলেন।
সেতারা বেগম তার জীবন সংগ্রামের কথা বলতে গিয়ে বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার স্বপক্ষের ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একটি রাজনৈতিক দল। তার স্বামীরা স্বাধীনতা সংগ্রাম করলে কি হবে? এই দলে যে এখনো খন্দকার মোশতাক বা রাজাকারের বংশধররা রয়ে গেছে। তা নিজ চোখে না দেখলে ও নিজে রুদ্ধশ্বাস সময় পার না করলে বুঝা যাবে না।
ইসলামাবাদ ইউনিয়ন ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি বশির আহমদ ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা তার একমাত্র ছেলে সাজ্জাদুল করিমকে হত্যার জন্য কয়েকদিন আগে তাদের ঘর ঘেরাও করে। তার ছেলে বেলাল, তার ভাই শফি, শফি জাফরের ছেলে দিদার ও রাকিব উল্লাহ সহ ডাকাত দলের সদস্যরা মিছিল সহকারে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধকে কটূক্তি ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। তিনি প্রতিবাদ করলে অস্ত্রধারীরা তার শ্লীলতাহানীর চেষ্টা চালায়। এসময় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি কেরোসিন লাগিয়ে তার ঘর পুড়িয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়। তার সন্তানকে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে বশির বাহিনী। বিষয়টি তিনি ঈদগাঁও থানা কর্তৃপক্ষকে অবগত করলে ঘটনাস্থল থেকে বশির ও তার সাথে থাকা নূর মোহাম্মদ আনসারী থানার দিকে ছুটে যায়। থানায় বসেই সে তার পুরো বাহিনীকে তার ঘরে তাণ্ডব চালাতে বলে।
মুক্তিযোদ্ধার এ অসহায় স্ত্রীর দাবি, বশিরের নেতৃত্বে দুইজন মানুষ খুন হয়। কালোটাকা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ক্ষমতার জোরে সে দীর্ঘদিন এসব হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিয়ে রেখেছে। স্বামী হারা ঐ পরিবারগুলো এখনো বিচারের আশায় বসে আছে। খুনের শিকাররা হচ্ছেন আক্তার হোসেন ও শফিউল আলম। বশির ও তার ভাই মিলে এ দু’জনকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি সেতারার। ঘটনার ব্যাপারে এলাকার হাজার হাজার লোকজনকে জিজ্ঞেস করলে তারা প্রকাশ্যে না হলেও গোপনে সাক্ষ্য দেবেন। কারণ প্রকাশ্য সাক্ষ্য দিলে ওই হাইব্রিড নেতারা তাদেরকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেবে।
লিখিত বক্তব্যে সাবেক এ মহিলা মেম্বার অভিযোগ করেন যে, বশির বাহিনীর লোকজন এখন তাঁর একমাত্র পুত্র সন্তানকে খুন করবে বলে প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে। গত ২৪ জুন ও সন্ত্রাসীরা তাদের বাড়ি ভাঙচুর করেছিল। তখন পুলিশ নীরব ভূমিকায় ছিল। এখনো পুলিশ কিছু করবে বলে মনে হয় না।
তিনি উল্লেখ করেন যে, বশির বাহিনীর সদস্যরা মরহুম ডুলা ফকির (রাহঃ) মাজারের জমি দখলসহ মারকাজে আমেনার পাশের বাড়ি ও জবরদখল করে বিক্রি করে দেয়। প্রকৃত মালিক হাফেজ শফিককে তারা ঘরছাড়া করে। তিনি হতাশার সুরে বলেন, তার জমি জমার দরকার নেই। সব বশিরকে দিয়ে দেয়া হোক। তারপরও যেন তিনি বাপহারা সন্তান কে নিয়ে স্বাধীন দেশে শান্তিতে বসবাস করতে পারেন। তার দাবি এ হাইব্রিড নেতা কয়েক বছর আগেও যুবদল কর্মী ছিল। তার নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল শহীদ জিয়া স্মৃতি সংসদ।
সংবাদ সম্মেলনে সেতারার পুত্র, মৎস্য ও লবণ ব্যবসায়ী সাজ্জাদুল করিম ও তার চাচাতো ভাই, লবণ ব্যবসায়ী মফিদুল ইসলাম সহ অন্য ভুক্তভোগীরা উপস্থিত ছিলেন।
ভুক্তভোগীরা বশিরকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার ও বশির বাহিনীর লোকজন থেকে প্রাণ বাঁচাতে মানবতার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।