ছোটন কান্তি নাথ :

আদালতের নির্দেশে কক্সবাজার জেলা কারাগারের অভ্যন্তরেই অবশেষে বিবাহকার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে সেলিনা বেগম ও দিদারুল ইসলাম দম্পতির। কাজীর উপস্থিতিতে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী কাবিননামা সম্পাদন এবং সাক্ষ্যগণের উপস্থিতিতে মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার দিকে কক্সবাজার জেলা কারাগারের জেল সুপার নেছার আলম এই বিয়ের আয়োজন করেন। এ সময় উভয় পরিবারের কয়েকজন সদস্যও উপস্থিত ছিলেন।

এই বিয়েতে সম্পাদিত কাবিননামায় দেনমোহর হিসেবে ধার্য্য করা হয় ৬ লক্ষ টাকা। তন্মধ্যে দুই লক্ষ টাকা নগদ পরিশোধ করা হয় এবং চার লক্ষ টাকা বাকী রাখা হয়।

সেলিনা বেগমের কৌঁসলী চকরিয়া জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের আইনজীবী মো. মিজবাহ উদ্দিন আদালতের নির্দেশে কক্সবাজার জেল সুপার নেছার আলম এই বিয়ের আয়োজন সম্পন্ন করেন বলে সিবিএনকে নিশ্চিত করেছেন।

আইনজীবী মিজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘আদালতের বিজ্ঞ বিচারকের নির্দেশে ভুক্তভোগী সেলিনা বেগম ও দিদারুল ইসলাম দম্পতির ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী কাজীর উপস্থিতিতে বিয়ে সম্পাদন হওয়ার মধ্য দিয়ে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল একটি সংসার। এই ধরণের একটি মামলা আমি পরিচালনা করতে পেরে পেশাগতভাবে নিজেকে অনেক ধন্য মনে করছি। একইসাথে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি চকরিয়া চৌকি আদালতের বিজ্ঞ বিচারক রাজীব কুমার দেব স্যারের প্রতি। কেননা মাননীয় আদালতের বিচারকের বিচক্ষণতায় অল্প সময়ের মধ্যে যুগান্তকারী এই আদেশ হয়েছে। এতে আমার মক্কেল সেলিনা বেগম ন্যায়বিচার তথা স্ত্রীর স্বীকৃতি পেয়েছেন। অপরদিকে তিনমাসের দুগ্ধপোষ্য সন্তান তামিমও পিতৃ পরিচয় পেয়ে গেছে।’

প্রসঙ্গত-গতকাল সোমবার চকরিয়া উপজেলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক রাজীব কুমার দেব একটি যুগান্তকারী আদেশ দেন। আদেশে সেলিনা বেগম নামের অসহায় মহিলা স্ত্রীর স্বীকৃতি এবং সেলিনার সাথে দিদারুল ইসলামের শারিরিক সম্পর্কের ফলে জন্ম নেওয়া তিনমাসের সন্তানও পিতৃ পরিচয় পেয়ে যায়।

একইসাথে দণ্ডবিধি-৪৯৩ এর মামলার এই আদেশে বিচারক আসামী দিদারুলকে জামিন দিয়ে নির্দেশ দেন জেল সুপারের উপস্থিতিতে কক্সবাজার কারাগারে বিয়ের আয়োজন করে আসামী দিদারুল ইসলাম প্রকাশ শকুর সাথে মামলার বাদী সেলিনা বেগমকে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বিয়ে পড়াতে। এর পর দিদারুলকে মুক্তি দিয়ে আদালতকে বিষয়টি অবহিত করতে। সেই নির্দেশনা মোতাবেক মঙ্গলবার বিকেলে বিয়ের কার্যক্রম সম্পন্ন হয় এবং দুই পরিবারের সদস্যরা নবদম্পতিকে কারাফটকে বরণ করে বাড়ি ফেরে।

সূত্র জানায়, চকরিয়ার ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ঢেমুশিয়া বাজার পাড়ার আকতার আহমদের কন্যা সেলিনা বেগমকে (২৫) বিয়ের আশ্বাস দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে পালিয়ে যায় একই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের খাসপাড়ার মোহাম্মদ কালুর ছেলে দিদারুল ইসলাম প্রকাশ শকু (৩৫)। এর পর চকরিয়ার বাটাখালী এলাকায় জনৈক গিয়াস উদ্দিনের ভাড়া বাসায় তুলে পাঁচমাস ধরে শারিরিক সম্পর্ক গড়ে তুলে। এইসময়ে সেলিনা বিয়ের কাবিননামা সম্পাদন করতে চাপ দেয় দিদারুলকে। কিন্তু দিদারুল ভাড়া বাসায় সেলিনাকে ফেলে নিরুদ্দেশ হয়ে পড়ে।

এই অবস্থায় সেলিনা স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে ২০২০ সালে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসহ মামলা করেন (সিআর-৮১৯/২০২০, দণ্ডবিধি-৪৯৩) উপজেলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে। বিজ্ঞ বিচারক সেলিনার অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।

আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। প্রতিবেদনে উঠে আসে সেলিনা এবং দিদারুলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে শারিরিক সম্পর্ক হয়। এতে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন সেলিনা বেগম। বিষয়টি আদালত আমলে নিয়ে আসামী দিদারুল ইসলাম প্রকাশ শকুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করলে সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করলে আদালতে তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেন।