চট্টগ্রাম সংভাদদাতা:
ঈদুল আজহা উপলক্ষে তিনদিন নগরজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গরুর হাট ও ঈদ জামাতের নিরাপত্তা সহ জনগণের জানমাল রক্ষায় তিন স্তরের নিরাপত্তার ছক তৈরি করেছে পুলিশ-র‌্যাব।

বন্দরনগরীর নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ, বাড়ানো হয়েছে চেকপোস্ট ও টহল। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনাসহ সব স্থানে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। নগরীর বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও গাড়ি তল্লাশি করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এদিকে প্রতিবছরই ঈদের কয়েকদিন আগে অপরাধ কর্মকাণ্ড তুলনামূলক বেড়ে যায়। ঈদের ছুটিতে সবাই গ্রামে চলে গেলে ফাঁকা নগরে অপরাধ সংঘটিত হয়। বিশেষ করে পশুর হাট এবং আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মলম-অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা বেড়ে যায়। পাশাপাশি ঈদুল আজহার সময় চামড়া সন্ত্রাস ও পশুর হাটে চাঁদাবাজিসহ বেশকিছু অপরাধী চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে।

ফলে ঈদের আগে-পরে নিরাপত্তায় শঙ্কা দেখা দেয়। এবার ঈদ মৌসুমে এসব অপরাধীদের ঠেকাতে সাদা পোশাকে এবং ভার্চুয়ালি নজরদারি বাড়ানোসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ ও বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কন্ট্রোল রুম, থানা কিংবা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর সহযোগিতা নিতেও নাগরিকদের অনুরোধ জানানো হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।

পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার বিপুলসংখ্যক সদস্যের সমন্বয়ে চট্টগ্রাম নগর ও জেলার বিভিন্ন থানায় নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। এ নিরাপত্তা বলয় কয়েক স্তরের। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকছে। বাড়ানো হয়েছে বাড়তি নজরদারি। চেকপোস্টে সন্দেহভাজন ব্যক্তি, গাড়ি, ও ম্যানুয়াল চেকিংয়ের মাধ্যমে তল্লাশি করা হবে বলে জানিয়েছেন সিএমপির কর্মকর্তারা।

ঈদের ছুটিতে আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধের লক্ষ্যে নগরে মোবাইল পেট্রল, ফুট পেট্রল ও চেকপোস্ট বসিয়ে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে পুলিশ ও র‌্যাব।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নগরের আগ্রাবাদ ব্যাংকপাড়ায় পুলিশের নজরদারি থাকছে। ঈদের আগের দিন ও ঈদের দিন অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে। বিভিন্ন মার্কেট, বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার ও আড়তের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে স্পর্শকাতর স্থান, সড়ক, স্থাপনা, মার্কেট, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশনে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব। ডাকাত, ছিনতাইকারী ও অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের ধরতে পুলিশ ও র‌্যাবের বিশেষ টিম মাঠে সক্রিয় রয়েছে। কোরবানির ঈদের সময় চামড়া সন্ত্রাস বেড়ে যায়। চামড়া কেনাবেচার ক্ষেত্রে কেউ যাতে সিন্ডিকেট তৈরি করে জোর-জবরদস্তি করতে না পারে সে জন্য পুলিশ কঠোর অবস্থানে থাকবে।

সিএমপির মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আরফাতুল ইসলাম বলেন, করোনার বাধা উপেক্ষা করে বরাবরের মতো এবারও অনেকেই শহর থেকে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাচ্ছেন। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সিএমপি কমিশনার ইতিমধ্যে সব ইউনিটকে ঈদের আগে-পরে এবং ঈদের ছুটিতে নজরদারি বাড়াতে নির্দেশনা দিয়েছেন। এছাড়া কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে কোনো ধরনের সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজি ও জবরদস্তি যেন না হয় সেজন্য পুলিশ কঠোর অবস্থানে থাকবে। পোশাকে টহল পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন রেখে নগরের প্রতিটি এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে বন্দরগরীতে তিন স্তরের নিরাপত্তা থাকবে। বাড়িতে যাওয়া ও নগরে ফেরা মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশের টহল, চেকপোস্ট বাড়ানো হয়েছে।

র‌্যাব-৭ সিপিসি-৩ এর স্কোয়াড কমান্ডার ও অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা গণমাধ্যম সহকারী পুলিশ সুপার মো. রকিবুল হাসান বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে র‌্যাব-৭ এর পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম মহানগর ও আওতাধীন এলাকার নিরাপত্তায় টহল দেওয়া হচ্ছে। ঈদে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ চেকপোস্ট ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। গরুর বাজারকে কেন্দ্র করে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জাল টাকার বিস্তার রোধে কাজ করে যাচ্ছে র‌্যাব। সাধারণ মানুষ যাতে নিরাপদে বাড়িতে ফিরতে পারে, সেজন্য হাইওয়েতে র‌্যাব সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছে।