সংবাদদাতা:

সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে জনগণের অভিযোগই কেবল শোনা যায় । তবে তাদের মাঝে বতিক্রমও পাওয়া যায় । যারা নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে জনগণের আস্থার স্থল হয়ে ওঠে। নিজের আন্তরিকতা দিয়ে সুনামের সাথে সেবা প্রদানে হয়রানি থেকে মুক্তি দেন মানুষকে, নিজের সরকারি দপ্তরকে করে তোলেন জনবান্ধব। তেমনই একজন এসিল্যান্ড মুহা: আবলু মনসুর।

টেকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাঃ আবুল মনসুর দায়িত্ব পালনকালে  সবার কাছে জনবান্ধব কর্মকর্তা হয়ে উঠেন। বিশেষ করে তিনি সীমান্ত উপজেলা এই টেকনাফে ‘করোনা যোদ্ধা’ হিসেবে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস আক্রান্তদের হাত থেকে মানুষকে রক্ষায় গ্রামে গ্রামে গিয়ে বিদেশ ফেরতদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতের পাশপাশি পথে পথে প্রচারপত্র বিলিসহ সচেতনতা বাড়াতে  দিন-রাত কাজ করে গেছেন । পাশাপাশি সরকার ঘোষিত একাধিক লকডাউন বাস্তাবায়নে মাঠে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপালন করে গেছেন।

আজ সেই জনবান্ধব কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাঃ আবলু মনসুর-এর বিদায়। তবে সব বিদায় আবার মন খারাপেরও নয়। চাকরি জীবনের ক্ষেত্রে এই বিদায় শব্দ কমন একটা বিষয়। সেই কমন বিদায়েরই আওতায় পড়েছেন কর্মগুণে সবার প্রিয় হয়ে ওঠা আবলু মনসুর। তিনি ২০১৯ সালে এপ্রিলের মাঝামাঝি টেকনাফে যোগদান করেছিলেন। ।

বৃহস্পতিবার তার কার্যালয়ে এক আলাপকালে জানতে চাওয়া হয় ভূমি সেবা কি মানুষের দৌড় গোড়ায় পৌছেছে?

জবাবে এসিল্যান্ড মুহাঃ আবলু মনসুর বলেছেন, ‘সরকারের সকল কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন শেষ হলে সত্যিই মানুষ ঘরে বসে ভূমি সেবা পাবে। এরই অংশ হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তি ও যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্যদিয়ে এখন থেকে সেবার সুফল পাচ্ছে মানুষ।’

আমার চাওয়া, মানুষ ভূমি অফিসে এসে নিজের কাজ নিজেই করুক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মানুষ নিজের কাজ নিজে করলে, বুঝতে পারবে আসলে ভূমি অফিস কি পরিমাণ সেবা দিয়ে থাকে। আর ভূমি সেবা নিয়ে মানুষের যে একটি  চিন্তা ছিল অন্তত সেটি দূর করতে সক্ষম হয়েছি। পাশাপাশি ভূমি অফিসে মানুষের হয়রানি বন্ধে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। ’
এসিল্যান্ড বলেন, ‘বিশেষ করে জনগনের প্রত্যেকটি ফোন কল আমি গুরুত্বসহকারে নিয়ে সমস্যার তাৎক্ষনিক সমাধান করার চেষ্টা করেছি। এই করোনার সময়ে যাদের মিসকেসের শুনানি ছিল, ফোন করে তাদেরকে পরবর্তী তারিখ জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া উপজেলার রের্কড পরিমান রিভউ মিস মামলা সমাধান করা হয়েছে। যে কোন মূল্যে জনগণকে যথাযথ সেবা প্রদানে আমরা বদ্ধপরিকর।’

এসিল্যান্ড আবুল মনসুর বলেন, মুজিববর্ষকে আমরা দূর্নীতিরোধে বিশেষ সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেছি। পাশপাশি মুজিবর্বষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ভূমি ও আশ্রয়হীন মানুষদের ঘরের তালিকায় যাচাই-বাচাই করে এখন থেকে ৩৯৭ জনের নাম পাঠানো হয়েছিল। ইতোমধ্যে অনেকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়েছেন। এমন একটি মহান কাজে যুক্ত হতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি।

উপজেলা সহকারী কমিশনার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, টেকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাঃ আবুল মনসুর দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে  জনগনের সেবা দেওয়া পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব খাতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। ২০২০-২১ গত অর্থবছরে ৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করা হয়েছে। এর মধ্য সরকারি সংস্থার কাছ থেকে সাড়ে ৪ কোটি এবং সাধারণ খাতে প্রায় ৮৫ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়। পাশাপাশি মাদক বিরোধী মোবাইকোর্টসহ হাজারখানেক অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে প্রায় ২৬ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করতে সক্ষম হন। যা টেকনাফের মাদক প্রবণ এলাকায় যুব সমাজকে মাদক থেকে দূরে রাখতে সচেষ্ট ছিল। যা সর্ব মহলে প্রশংসিত হয়েছে।

দলিল লেখক মৌলভী মো. ইদ্রিস বলেন, এসিল্যান্ড স্যার দায়িত্বের বাইরেও বেশ কিছু মানবিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি। বিশেষ করে ১৯৯৮-৯৯ সালে ১৮ শতক জমি বন্দোবস্তি করেন টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের অসহায় বৃদ্ধা  ফিরোজা খাতুন। কিন্তু বিশ বছর ধরে এই নারী নামজারি খতিয়ান সৃজন করতে পারেননি। বিষয়টি এসিল্যান্ডের নজরে আসলে ফিরোজাকে ডেকে এনে তার নামে নামজারি খতিয়ান সৃজন করে দেন। বিশ বছর পর হলে এসিল্যান্ড স্যারের সহায়তায় এই অসহায় নারী নিজস্ব ঠিকানা পেয়েছেন। করোনাকালে ঝুঁকিপূর্ণ ভূমিকা ছিল উল্লেখ করার মতো। দিন-রাত সমানে চষে বেড়িয়েছেন উপজেলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। সে সময় করোনায় আক্রান্তের মৃত্যু ভয়ে ঘর থেকে কেউ বের হচ্ছিল না।