zতাওহীদুল ইসলাম নূরী:
মরহুম আল্লামা মুজাহের আহমদ (রহ:)। একটি নাম, একটি ইতিহাস। আজ ৮ জুলাই তাঁর ১৬ তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৫ সালের এই দিনে ৯৩ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন।

প্রচার বিমুখ এই বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী মানুষটি ১৯১২ সালের ডিসেম্বর মাসের ২৭ রমজান পবিত্র কদরের রাতে ককসবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার শাহারবিল গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন।

প্রখর মেধার আধিকারী ছিলেন তিনি । প্রাইমারী স্তর থেকে প্রতিটি পরিক্ষায় প্রথম হতেন । ১৯৩৩ সালে আলিম পরিক্ষায় অবিভক্ত বাংলায় ১ম বিভাগে ৩য় স্থান লাভ করেন। ১৯৩৫ সালে ফাযিল পরিক্ষায় ১ম বিভাগে ২য় স্থান লাভ করেন। ১৯৩৭ সালে কলিকাতার আলীয়া মাদ্রাসা থেকে টাইটেল (কামিল) পরিক্ষায় ১ম বিভাগে ১ম স্থান অর্জন করেন। এতে বিগত ১২ বছরের রেকর্ড সংখ্যক নম্বর পাওয়ায় ভারত সরকারের কাছ থেকে “ভাইসরয়” স্বর্ণপদক লাভ করেন।

কলকাতায় কর্ম জীবন শুরু করলেও ১৯৪৩ সালে দেশে ফিরে আসেন তিনি। দেশে ফিরে নিজ গ্রাম শাহারবিল আনোয়ারুল উলুম কামিল মাদ্রাসায় সুপার হিসাবে যোগ দান করেন এবং ১৯৫২ সালে ককসবাজারের প্রাচিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হাশেমিয়া আলীয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপালের দায়িত্ব নেন। তাহার অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সুযোগ্য নেতৃত্বে মাদ্রাসাটি দাখিল,আলিম ও ফাযিল পর্যন্ত অনুমোদন পায়। ১৯৭৩ সালে তিনি অবসরে গেলে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদনে রেক্টর পদ অলংকৃত করেন। ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি রেক্টরের দায়িত্ব পালন করেন।

সরকারী আমন্ত্রণে মরহুম আলহাজ্ব মাওলানা মুজাহের আহমদ ইরাক, ইরান, সৌদী আরব, কুয়েত,দুবাই ও জর্ডানসহ বিভিন্ন দেশের সেমিনারে অংশ নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন।

ইরাক এবং ইরান উভয় দেশের সংসদে বক্তব্য রেখেছেন তিনি। দু দেশের সংসদেই তার বক্তব্য আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ইরাকের সংসদে বক্তব্যের পর আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি তাঁকে “আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ বাংলাদেশ” উপাধি দিয়েছিল। অন্যদিকে, ইরানের সংসদে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনসহ উপস্থিত সকলেই তার বক্তব্যের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। সাদ্দাম হোসেন তখন মরহুম মাওলানা মোজাহের আহমদ ইরাকী কি না জিজ্ঞেস করেছিলেন।

বহুল আলোচিত ইরাক-ইরান যুদ্ধ বন্ধে বিশ্বের গুটিকয়েক যে কয়জন ব্যক্তিত্ব অবদান রেখেছিলেন তার মধ্যে মরহুম মাওলানা মোজাহের আহমদ অন্যতম।

সৌদি সরকারের রাজকীয় অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে বেশ কয়েকবার পবিত্রও হজ্বও পালন করেন তিনি।

একাধারে মুহাদ্দিস,মুফাসসির ও মুফতি ছিলেন এই জ্ঞানী ব্যক্তিত্ব আরবী,বাংলা,উর্দু,ফার্সী,হিন্দি,ইংরেজীসহ বিভিন্ন ভাষায় পারদর্শী ছিলেন।

হাদিস,তাফসীর ও ফিকাহ শাস্থে প্রচুর বইও রচনা করেছেন তিনি রয়েছে। তার রচিত বইয়ের মধ্যে ইমাম মালিক,ফিকাহ শাস্থের উৎপত্তি,মোজাহেরুল ইতকান ফী উলুমিন ফোরকান,মোজহেরুল ফতওয়া, ইজাহুল বুখারী উল্লেখযোগ্য।

শিক্ষক,প্রশাসক,বিচারক,মুফতি ও কোরান হাদিসের যুগোপযোগী ব্যাখ্যা দানকারী এই মহান পুরুষকে স্বাধীনতা বাংলাদেশের দুই সরকার ধর্মমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু, তিনি উভয় সরকারকেই অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন।

২০০৫ সালের ০৮ জুলাই ইন্তেকাল করেন তিনি। আজ তিনি নেই। বছরের পর বছর রয়ে গেছে তার কীর্তি। তাই তো জীবিত অবস্থায় যেমনটি তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠন কর্তৃক সম্মানিত হয়েছেন, আজ মৃত্যুর ১৫ বছর পরও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠন কর্তৃক মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান করা হয় তাকে। তার ভক্ত শিষ্যরা আশা করেন এই ধারা অব্যাহত থাকবে যুগের পর যুগ, শতাব্দী থেকে শতাব্দী।

এদিকে, প্রতি বছর তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা হলেও এবার চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে কোন ধরনের কর্মসূচি হাতে নেয়া হয় নি জানিয়েছেন তার পরিবার।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে আল্লাহ যেন এই মহান ব্যক্তির জীবনের সকল গোনাহ ক্ষমা করে তাকে জান্নাত দান করেন তার জন্য সকলের আন্তরিক দোয়া করেছেন তার দুই সুযোগ্য সন্তান আবু সালেহ মোহাম্মদ ইলিয়াস ও আবু ইউসুফ মোহাম্মদ ইয়াহিয়া।