আলমগীর মানিক, রাঙামাটি
ভৌগলিক ও সামাজিক-সংস্কৃতিক পরিবেশের ভিন্ন নিয়ে প্রকৃতির উপর ভর করে চলা পার্বত্য রাঙামাটিতে ধাপে ধাপে বাড়ছে করোনাক্রান্তের সংখ্যা। প্রতিদিনই গড়ে ২০/২৫ জন করে করোনা রোগী সনাক্ত হচ্ছে রাঙামাটিতে। প্রশাসনিক নানামুখি তৎপরতা সত্বেও এই জেলায় বহিরাগতদের আগমনে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে ধারনা করছে অত্রাঞ্চলের সংশ্লিষ্ট্যরা।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, রাঙামাটিতে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে সম্মুখ সারির যোদ্ধা পুলিশ ও স্বাস্থ্যবিভাগের লোকজনের সংখ্যাই বেশি। রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোঃ মারুফ আহাম্মেদ জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত রাঙামাটিতে ২৮৮জন পুলিশ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই রাঙামাটিতে অন্তত ২৬ জন পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে জনাব মারুফ জানান, মূলতঃ অন্যত্র থেকে রাঙামাটিতে বদলী হয়ে আসা এবং ছুটি কাটিয়ে রাঙামাটির কর্মস্থলে যোগদান করা পুলিশ সদস্যরা-ই করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এখানে বসবাসকৃত পুলিশ সদস্যদের আক্রান্তের হার তেমন একটা নেই বললেই চলে।

অপরদিকে রাঙামাটির স্বাস্থ্য বিভাগের করোনা ফোকাল পার্সন ডাঃ মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন,করোনায় দায়িত্বপালনকালে চিকিৎসক-নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ প্রায় ১৬জন।

এদিকে রাঙামাটি কলেজের আবাসিক ভবনে অস্থায়ী আইসোলেশন সেন্টারে কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্স সবিতা চাকমা জানিয়েছেন প্রতিদিনই করোনাক্রান্ত রোগির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এমতাবস্থায় রাঙামাটির সার্বিক পরিস্থিতিতে করোনায় আক্রান্তদের সুচিকিৎসা নেই বললেই চলে।

প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক এক বছরের বেশি সময় আগেই জেলার হাসপাতালগুলোতে করোনা চিকিৎসার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে বলা হলেও রাঙামাটিতে সেই নির্দেশনার সিকি ভাগও এখনো পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হয়নি। বিষয়টি তেমন একটা সঠিক নয় জানিয়ে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ শওকত আকবর জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই রাঙামাটিতে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের পাইপলাইনগুলো বসানো হয়েগেছে। চলতি মাসের ২২শে জুলাইয়ের পরে মূল রির্জার্ভার রাঙামাটিতে চলে আসবে বলে ইতিমধ্যেই নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃপক্ষ।

রাঙামাটির পুলিশ সুপার মীর মোদাছছের হোসেন জানিয়েছেন, করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরেও রাঙামাটিবাসীকে নিরাপদে রাখতে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। এপর্যন্ত বেশ কিছু পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হওয়ায় তাদের নিরাপদে পৃথকভাবে রেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের জন্য দোয়াও চেয়েছেন তিনি।

এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে,মঙ্গলবার পর্যন্ত সর্বশেষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে একদিনে ১৯জন। সোমবার এই সংখ্যা ছিলো ৩০জনে। এপর্যন্ত জেলায় আক্রান্ত হয়েছে সর্বমোট ১৮৪৭ জন। সুস্থতা লাভ করেছে ১৫৯৭ জন। স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে করোনা সনাক্তের পর হতে এখন পর্যন্ত রাঙামাটিতে মৃত্যুবরণ করেছে ১৯ জন। এপর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করেছেন ১৩,৩২৮ জন এরমধ্যে নেগেটিভ এসেছে ১১,৩৭৪জন।

রাঙামাটির করোনার সার্বিক চিত্রানুসারে ক্রমান্বয়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় অত্রাঞ্চলের মানুষের মধ্যে প্রয়োজনীয় সুচিকিৎসা প্রাপ্তিতে উৎকন্ঠাভাব বিরাজ করছে। জেলায় করোনা আক্রান্তদের জন্য দীর্ঘ একবছরেও আইসিও বেড ও সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়নি। প্রার্ন্তিকজনগোষ্ঠি নির্ভর এই জেলার অর্থনৈতিক অবস্থাও বেশ নাজুক অবস্থায় রয়েছে।

শহরের উন্নত চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতে গিয়ে ব্যয়বহুল করোনা চিকিৎসা করাতো অনেক দূরের কথা? প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রাম থেকে রাঙামাটি শহরে আনতেই বর্তমান লকডাউন সময়ে ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরছ হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় করোনা আক্রান্তদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে রাঙামাটিতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ও আইসিইউ বেড স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।