সিবিএন ডেস্ক:
করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহীদের জন্য ফের শুরু হচ্ছে নিবন্ধন কার্যক্রম। আগামী বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) ফের অনলাইনে সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মে এই নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হবে। এবারে এই নিবন্ধনের জন্য সর্বনিম্ন বয়সসীমা রাখা হচ্ছে ৩৫ বছর।

সোমবার (৫ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশিদ আলম এবং অধিদফতরের অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিচালক ও মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ডিজি হেলথ ডা. খুরশিদ আলম বলেন, কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের মজুত শেষের পথে থাকায় ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহীদের নিবন্ধনের সুযোগ বন্ধ ছিল। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে আবার সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মে নিবন্ধন করতে পারবেন সবাই।

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তিরা করোনার ভ্যাকসিন প্রাপ্তির জন্য নিবন্ধন করতে পারছেন। এটি এখন কমিয়ে আনা হয়েছে। ৩৫ বছরের ব্যক্তিরা নিবন্ধন করতে পারবেন। রোববার (৪ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনার এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

সুরক্ষায় নিবন্ধনের জন্য আগের মতোই শর্ত থাকছে কি না— জানতে চাইলে ডা. রোবেদ আমিন বলেন, এর আগে ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য ন্যূনতম ৪০ বছর বয়স প্রয়োজন হতো। এখন ৩৫ বছরের বেশি বয়সী যে কেউ ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন। এ ছাড়া শিক্ষার্থী ও প্রবাসীসহ অন্য যাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে, তারাও নিজ নিজ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনের জন্য উন্মুক্ত করে সুরক্ষায় নিবন্ধন করতে পারবেন।

যেভাবে নিবন্ধন করা যাবে:
করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পেতে আগ্রহীরা সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে গিয়ে অথবা মোবাইলে অ্যাপ ডাউনলোড করে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন।

অ্যাপটি ফ্রি ডাউনলোড করা যাবে (www.surokkha.gov.bd)। নিবন্ধনের পর সেখান থেকেই জানা যাবে, কবে কখন টিকা নিতে হবে।

পরিচয় যাচাইয়ে এই অ্যাপে বেশ কয়েকটি ক্যাটাগরি আছে। যার একটি সিলেক্ট করার পর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে নিবন্ধন শুরু করতে হবে।

জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর যাচাই করে সব ঠিক থাকলে স্ক্রিনে নিবন্ধনকারীর নাম দেখানো হবে বাংলা ও ইংরেজিতে। সেখানে একটি ঘরে একটি মোবাইল ফোন নম্বর চাওয়া হবে, যে নম্বরে তাকে পরবর্তীতে ভ্যাকসিন সংক্রান্ত তথ্য এসএমএস করা হবে।

কেন্দ্রে গিয়ে নিতে হবে ভ্যাকসিন:
প্রথমে ভ্যাকসিন কার্ড সংগ্রহ করতে হবে। সুরক্ষা ওয়েব পোর্টাল বা অ্যাপের ‘টিকা কার্ড সংগ্রহ’ বাটনে ক্লিক করে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, জন্মতারিখ দিয়ে ‘যাচাই করুন’ বাটনে ক্লিক করতে হবে। এরপর নিবন্ধনের সময় দেওয়া মুঠোফোনের নম্বরে এসএমএসের মাধ্যমে ওটিপি (ওভার দ্য ফোন) কোড দিয়ে ‘ভ্যাকসিন কার্ড ডাউনলোড’ বাটনে ক্লিক করলে টিকা কার্ড ডাউনলোড হবে।

এসএমএসের মাধ্যমে পাওয়া টিকা গ্রহণের তারিখে নির্দিষ্ট টিকাকেন্দ্রে সশরীরে উপস্থিত হয়ে টিকা নেওয়া যাবে। এ সময় টিকা কার্ড ও জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। কোভিড-১৯ টিকার দুটি ডোজ নেওয়ার পর সুরক্ষা ওয়েব পোর্টাল থেকে টিকা সনদ সংগ্রহ করা যাবে।

সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৭২ লাখ ৮২ হাজার ৮৬৯ জন।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৫ নভেম্বর দেশে সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার কাছ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার তিন কোটি ডোজ করোনা ভ্যাকসিন আনতে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হয়। বাংলাদেশ সরকার, বেসরকারি ফার্মাসিউটিক্যালস বেক্সিমকো ও ভারতের ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী সিরামের সঙ্গে এই চুক্তি সই করা হয়। পরে ১৩ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত ক্রয়চুক্তি সই করে সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছে পাঠানো হয়।

৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার ভ্যাকসিন কেনার জন্য ৫০৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটকে। চুক্তি অনুযায়ী ৫ জানুয়ারি আসে সিরামের কাছ থেকে সরকারের কেনা ভ্যাকসিনের প্রথম চালান। এই চালানে ভ্যাকসিন আসে ৫০ লাখ ডোজ। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ছয় মাসে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন বাংলাদেশের পাওয়ার কথা ছিল। তবে এরপরে ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আসলেও সিরাম থেকে আর বাংলাদেশে ভ্যাকসিন পাঠানো হয়নি।

২১ জানুয়ারি সকাল ৮টা ২৮ মিনিটে মুম্বাই থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা এয়ার ইন্ডিয়ার এআই১২৩২ নম্বর ফ্লাইটে ২০ লাখ ৪ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন সকাল ১১টা ২০ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। এগুলো ভারত সরকারের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে আরও ৩২ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দেশে এসে পৌঁছায়।

এরপরে ২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৬ জনকে পরীক্ষামূলকভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। এদিন ভ্যাকসিন কার্যক্রমে নিবন্ধনের জন্য ওয়েব প্ল্যাটফর্ম ‘সুরক্ষা’ চালু করা হয়।

৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় সারাদেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম। দেশে দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয় ৮ এপ্রিল থেকে। তবে এ সময় ভারতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ বাড়তে থাকে। এমন অবস্থায় নিজ দেশে ভ্যাকসিনের চাহিদা মেটাতে সে দেশের সরকার সিরাম ইন্টারন্যাশনালকে করোনার ভ্যাকসিন রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এর ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করা ভ্যাকসিন আর তাদের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

ভ্যাকসিন না আসার কারণে দেশে ২৬ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত জানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পরবর্তীতে নিবন্ধনও বন্ধ রাখা হয়।

তবে ধীরে ধীরে ভ্যাকসিনের সংকট কাটতে শুরু করে। চীন থেকে ভ্যাকসিন আনার উদ্যোগ নেয় সরকার। একই সঙ্গে রাশিয়া থেকেও ভ্যাকসিন আনার উদ্যোগ নেয় সরকার। চীন সরকারের উপহার হিসেবে দেশে প্রায় ৩১ লাখ ভ্যাকসিন দেশে এসে পৌঁছায়। একই সঙ্গে কোভ্যাক্সের আওতায় দেশে ফাইজারের এক লাখ ৬০০ ডোজ ভ্যাকসিন আসে। সর্বশেষ কোভ্যাক্সের আওতায় মডার্নার ২৫ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দেশে এসে পৌঁছায়।

এরইমধ্যে দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মেডিকেল শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন নার্সিং ইনস্টিটিউট ও ম্যাটসের শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করে সরকারিভাবে। একই সঙ্গে প্রবাসীদের ভ্যাকসিন প্রয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। তাছাড়া সরকারিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন আবাসিক হলে থাকা শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।