Md .Max
এই লকডাউনে বাসায় বসে কি করছেন, তার চেয়ে বরং দেখে ফেলুন , পৃথিবী বিখ্যাত কিছু চলচ্চিত্র , আমার ধারাবাহিক মুভি রিভিউতে। আগেই বলে দিচ্ছি স্পইল ওয়ার্নিং আছে কিন্তু।
১২ রাগী মানুষ আর সিনেমা প্রেমীদের চলচ্চিত্রের রুচিবোধ
পৃথিবীর অনেক দর্শক অনেক চলচ্চিত্র প্রেমী ভিন্ন ভিন্ন রকমের চলচ্চিত্রের স্বাদ উপভোগ করেন, একেকজনের রুচিবোধ একেকরকম।
কিন্তু যারা ড্রামা বা আইন জেনরার মুভি দেখেন তাদের কাছে এই ছবিটি সবার শীর্ষে।
Imdb এর জরিপে এই মুভিটা ৬ নং স্থানে।
পৃথিবীর অনেক আইন স্কুলে এই মুভিটা দেখানো হয় আর বিশ্ববিখ্যাত অনেক আইনজীবী এই মুভিটার দেখার পরে এই পেশায় এসেছেন বলে জানান তারা। সারা জাগানো এই চলচ্চিত্র নিয়ে এবারের আয়োজন, তার বিশদ ব্যাখ্যা।
এবারের চলছিত্র, ১২ এংরি মেন বা ১২ জন রাগী মানুষ।
12 angry men এর বিপরীত একটি মুভি দিয়ে শুরু করা যাক। ধরুন, true lies মুভিটি, ফাইভ স্টার হোটেল থেকে শুরু করে, বিশাল ব্রীজ ভাংগা, তারপর উঁচু অট্টালিকাতে বিমান উড্ডয়ন, আর রকমারী সব বিলাশবহুল রেস্তরা, কিন্তু অপরদিকে সম্পুর্ন একটি রুমের ভেতরে পুরা মুভির যবনিকাপাত।
কি আছে এই চলচিত্রে যেটি রীতিমত আই,এম ডি,বি র সর্বকালের সেরা ২৫০ টি মুভির মধ্যে ৬ষ্ট স্থান দখল করে বসে আছে?
সিডনি লুমেটের পরিচালনা আর হেনরি ফন্ডা ছাড়া আর কি বা আছে ছবিটিতে?
শুরুতেই বলে রাখা ভাল যে, এই মুভিটি ১৯৫৭ সালের আর সাদাকালো আর ঐ দশকগুলোতে আমেরিকার বিচার ব্যবস্থায় সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ দিয়ে জুরি বোর্ড গঠন করা হত।
যাতে রায় ঘোষনার পর যদি, ‘সন্দেহের অবকাশ’ থাকে, তখন সিদ্বান্ত বদলানো হয়।
এ ছবিতে ১২ জন জুরি নিয়ে গঠিত হল একটি বোর্ড, যারা সমাজে ভিন্ন ভিন্ন পেশায় জড়িত।
কেউ ঘড়ির মেকানিক, কেউ ফুটবল কোচ, কেউ বা ইঞ্জিনিয়ার।
ঘটনার সুত্রপাত, এক কিশোরের বিরুদ্ধে তার স্বয়ং পিতা কে খুন করার অভিযোগ আসে এবং রায়ে তার ইলেকট্রিক চেয়ারে বসিয়ে মৃতদন্ড কার্যকরের নির্দেশ আসে, এবার জুরিদের আলোচনার পালা।
প্রথমে ভোটের প্রস্তাব আসে,দোষী নাকি নিদোর্ষ তার উপরে, নিয়ম অনুযায়ী ভোট হতে হবে ১২ বনাম ০।
অধিকাংশ জুরি এতই নিশ্চিত ছিলেন যে, একতরফা রায়ে ছেলেটির সাজা হয়ে যাবে।
প্রায় সবাই একসাথে দোষী বলে হাত তুলে ফেলেন, যদিও ৯ নং জুরি কিছুটা সন্দেহ রেখে হাত তুলেন, সেটি মুভিতে খেয়াল করে দেখতে হয়।
কিন্তু সবার দৃষ্টি গিয়ে পড়ে ৮ নং জুরির দিকে যখন তিনি ছেলেটি নিদোর্ষ এর পক্ষে হাত তুলেন।
ভোট হয়ে গেল ১১/১। শুরু হয় প্রচণ্ড বাকবিতণ্ডা।
এমনিতে প্রচণ্ড গরম, আর এক জুরি বেসবল দেখার জন্যে তাড়াহুড়া করছেন।
৮ নং জুরি একে একে যুক্তি দিতে লাগলেন, ৩ নং জুরি যাকে সবচেয়ে আক্রমণাত্মক মনে হয়, কিছুতেই রাজি নয়, তিনি নিশ্চিত করেই বলছেন ছেলেটি খুনি আর তিনি খুন করা চাকুর উদাহরন টেনে আনলেন।
তাদের ধারনা এই ছুরি কোথাও পাওয়া যায়না, যখন ফন্ডা (৮ নং জুরি) হুবহু আরেকটি চাকু বের করলেন পুরু রুমেই তোলপাড় শুরু হল এবং সেই সাথে সবার মনে সন্দেহের ধানা বাধতে শুরু করল কথিত অপরাধটি নিয়ে।
শুরু হল দ্বিতীয় দফায় ভোট, ফলাফল, ১০/২।
পরবর্তী যুক্তি ছিল, সময়ের সাথে ট্রেনের আওয়াজ এবং স্বাক্ষীদের মিল,অমিল ইত্যাদি, সেখানেও ফন্ডা অকাট্য বক্তব্য পেশ করলেন, তখন বদলাতে শুরু করলেন জুরিদের মানসিকতার।
১১ নং জুরির সন্দেহ হল, যদি কেউ ছেলেটিকে হত্যা করতে দেখে এবং তীব্র চিৎকার দেয়,তা শুনার পর ও কেন সে চুরিটি নিতে আসবে? এই যুক্তিতে মত পাল্টাল আরো দুই জুরি, ভোট তখন ৮/৪।
ধীরে ধীরে প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হতে লাগল। সবচেয়ে সমস্যা ছিল, যে বৃদ্ধ লোকটি খুন করতে দেখলেন যার হাঁটতে সমস্যা তিনি কিভাবে এত দ্রত জানালার পাশে গেলেন, উনার দাবী অনুযায়ী ২০ সেকেন্ড, কিন্তু দেখা গেল উনার আসলে কমপক্ষে ৪০ সেকেন্ড দরকার সেখানে পৌছাতে, ৩ নং জুরি গলা ফেটে বললেন এত খুঁটিনাটি ব্যাপার কেন দরকার? জবাবে ফন্ডা জানালেন, কাউকে ফাঁসি দিতে হলে সব তথ্য সঠিক হতে হবে।
আরেকটি ভোটের আয়োজন, ফলাফল ৬/৬।
একেকজনের একেক ব্যক্তিত্ব, চেহারার ভঙ্গিমা, আর যুক্তিতর্কের এক বিশাল মঞ্চায়ন।
ছেলেটির উচ্চতার সাথে তার নিহত পিতার ক্ষতস্থান নিয়ে প্রশ্ন আসে, ৫ নং জুরি প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে, পেশাদার খুনি ছাড়া ছেলের পক্ষে খুন করা সম্ভব নয়। এতে ভোটাভোটিতে নির্দোষের পক্ষে আরো ভোট, ফলাফল ৯/৩, পাগলের মত চিৎকার করতে থাকেন ১০ নং জুরি, একে একে কেউ তার কথায় কর্ণপাত না করে সরে পরেন।
অপরদিকে ৭ নং জুরি যখন, তার ভোট পরিবর্তন করে ফেলেন , তখন তাকে কারণ দেখাতে বলা হয়, যদি খেলায় দেরী বিদায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন তিনি ?
শেষের দিকে ৪ নং জুরি পুরু নিশ্চিত হতে পারছিলেন না, এসময়ে তিনি তার চশমা টা খোলার প্রাক্ষালে ৯ নং জুরি একটি ব্যাপার খেয়াল করে বসেন।
৪ নং জুরির চোখের নীচে দাগ, যে মহিলাটি প্রতক্ষ্যদর্শী তিনি আদালতে হাজির হওয়ার সময়ে খুব সাজগোজ করে আসেন, তার ও চোখের নীচে চশমার দাগ স্পষ্ট, বুঝাই গেল তিনি দূরের বস্ত ঝাপসাই দেখেন।
১১ নং জুরিত বলেই ফেললেন, মহিলাটিকে ৬০ ফুট দূর থেকে রাতের বেলায় খালি চোখে স্পষ্ট দেখতে হতে হবে, পুরু হলের মধ্যে তখন থমথমে অবস্থা, অনেক্ষন ছেচাম্যাচির পরে অবশেষে ৩ নং জুরি ও স্বীকার করতে বাধ্য হলেন ছেলেটিকে নির্দোষ ঘোষণা করতে।
অদ্ভুত ব্যাপার, ১১/১ থেকে ভোট হয়ে গেল ১২/০।
অনেকের ধারনা , ৩ নং জুরি তার নিজের ছেলের প্রতি বিদ্বেষ থেকেই উল্টা পাল্টা সব বলতেই থাকেন, এক পর্যায়ে ৬ নং জুরি তাকে রুম থেকে বের করে দিতে চেয়েছিলেন ।
এমনকি নিজের অজান্তেই ৩ নং জুরি বলে ফেলেন, এত বুড়ো বয়সে স্বাক্ষীর কি এত কিছু মনে থাকে? তাই ২ নং জুরি জানতে চেয়েছেন , কিভাবে এত সন্দেহ থাকার পরেও ছেলেটির মৃতদন্ড সম্ভব?
১ নং জুরি ত মজা করে বলে ফেললেন , এ যেন ফুটবল খেলায় কয়েক গোলে পিছিয়ে পরে উল্টা জয় পাওয়া।
আগেই বলেছি যে পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত আইনজীবি, এই ছবি দেখে নাকি এ পেশায় আসেন, আর অনেক দেশে এখনো, আইনের ছাত্রদের উৎ সাহ দেওয়ার জন্যে এই ছবিটি দেখানো হয়।
আজ এই পর্যন্ত, আরেকটি বিখ্যাত চলচিত্র নিয়ে আসছি পরের সপ্তায়।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।