এম.এ আজিজ রাসেল:
সাতদিনের কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে জেলাব্যাপী ব্যাপক কর্মতৎপরতা চালাচ্ছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। লকডাউনের প্রথমদিন থেকে রবিবার পর্যন্ত ৮ উপজেলায় চারদিনে মোট ১৪৩টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের নির্দেশনায় এসব অভিযানের নেতৃত্বে দেন স্ব স্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইএনও), সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ।

অভিযানে বিধিনিষেধ না মানায় ৭৯১টি মামলার বিপরীতে ৮৭৫ জনকে ৫ লাখ ৯৮ হাজার ৬৬০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি ৩ জনকে কারাদগু দেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং সহকারী কমিশনার ইমরান জাহিদ খান ও সাদিয়া সুলতানা।

জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা যায়, লকডাউনের প্রথমদিনে পর্যটন শহরসহ ৮ উপজেলায় ৫০টি অভিযান পরিচালনা করা হয়।
জরিমানা করা হয়। অভিযানে ১৬১টি মামলায় ১৭২ জনকে জরিমানা করা হয় ৯১ হাজার ৬৬০ টাকা। দ্বিতীয়দিনে অভিযান পরিচালিত হয় ৩০টি। অভিযানে ২১৮ জনকে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৩৫০ টাকা জরিমান করা হয়। এসময় মামলা হয় ২১৪টি। কঠোর লকডাউনের তৃতীয়দিনে ৩৩টি অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ২২৫ জন ব্যক্তিকে জরিমানা করা হয় ১ লাখ ৫৪ হাজার ৫০ টাকা। এসময় মামলা হয় ২০৯টি। এদিন ও ব্যক্তিকে কারাদগু দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ লকডাউনের চতুর্থদিনে ৩০টি অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে ২১৪ জন ব্যক্তিকে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬০০ টাকা জরিমানা করা হয়। এসময় মামলা দেওয়া হয় ২০৭টি।

জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, করোনা সংক্রণ বৃদ্ধি হওয়ায় সারাদেশের ন্যায় কক্সবাজারেও কঠোর লকডাউন চলমান রয়েছে। লকডাউন বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে সমন্বতিভাবে কাজ করা হচ্ছে। লকডাউন বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যরা জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছেন। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হলে পথে পথে চেকপোস্টে জবাবদিহি করতে হচ্ছে। জনসচেতনা বৃদ্ধিতে সবাইকে মাস্ক ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে উদ্ধুদ্ধ করা হচ্ছে। পাশাপাশি যারা বিধিনিষেধ মানছে না তাদের সতর্কতা সরূপ জরিমানা ও কারাদণ্ড দেয়া হচ্ছে। তিনি লকডাউন বাস্তবায়নে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

গত বৃহস্পতিবার থেকে কঠোর লকডাউন চলছে। লকডাউন বাস্তবায়নে শহরজুড়ে কঠোর অবস্থানে ছিল জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ ও পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান। পাশাপাশি কাজ করছে সেনাবাহিনী, নৌ—বাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, আর্মড পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে চেকপোস্ট বসিয়ে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, সিএনজি, টমটম, অ্যাম্বুলেন্স ও মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। যানবাহন থামিয়ে ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
লকডাউনের চতুর্থদিনে রোববার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তায় যানবাহন ও মানুষের উপস্থিতি অনেক কম। সকাল থেকে টানা বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দুর্ভোগ এড়াতে অনেকেই যানবাহন নিয়ে বের হননি। যারা বের হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই জরুরি কাজে বেরিয়েছেন। এর মাঝেও কেউ কেউ ফাঁকা রাস্তা পেয়ে প্রয়োজন ছাড়াও বের হয়েছেন। তাদের মধ্যে তল্লাশি জরিমানার মুখে পড়ছে অধিকাংশই। তারমধ্যে সরকারি—বেসরকারি কর্মকর্তা—কর্মচারী, চিকিৎসক—নার্স, বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা—কর্মচারী, রোগী ও তাদের স্বজনরাও রয়েছে।