পেকুয়া প্রতিনিধি:

গাজী মোহাম্মদ জাফর আলম বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চুড়ান্ত স্বীকৃতি পেয়েছেন। গত ১৫ জুন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) এর ৭৫ তম সভায় ৪র্থ পর্বের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি তালিকা চুড়ান্তকরণ করা হয়। এতে দেশ ও মাতৃকার জন্য যারা সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন সেই সব জাতির গর্বিত সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চুড়ান্ত তালিকায় নাম প্রকাশ করা হয়। এ সময় পেকুয়া উপজেলার সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী মো: জাফর আলমকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চুড়ান্ত তালিকায় স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।

গাজী মো: জাফর আলমের পৈত্রিক নিবাস পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের সিকদারপাড়ায়। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার পিতার নাম মরহুম নেছার আহমদ কন্ট্রাকটর। গাজী মো: জাফর আলম সরকারী চাকুরীজীবি ছিলেন। তিনি প্রাইমারী ট্রেনিং ইনষ্টিটিউটের জেলার সুপারটেন্টেড পদবীতে ছিলেন। ২০০৭ সালের দিকে সরকারী চাকুরী থেকে অবসরে গিয়েছেন। বর্তমানে কক্সবাজার বিএড কলেজে অধ্যাপনা করছেন। স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে তিনি ওই কলেজে অত্যন্ত দক্ষতা ও নিষ্টার সহিত কাজ করছেন।

সুত্র জানিয়েছেন, গাজী মো: জাফর আলম ১৯৭০-৭১ সালের দিকে চট্টগ্রামের নাজিরহাট কলেজ ছাত্র সংসদের ছাত্রলীগ থেকে জিএস ছিলেন। সেই সময় ছাত্রলীগের রাজনীতির একজন প্রচন্ড কর্মী হিসেবে মুক্তিযোদ্ধের চেতনার পক্ষে কাজ করেন। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের সময় হানাদার বাহিনীর সঙ্গে গাজী জাফর আলমসহ মুক্তিযোদ্ধারা সম্মুখযুদ্ধে মোকাবেলা করেন। তিনি একজন দুরন্ত সাহসিক ও দেশপ্রেমিক ছিলেন। ১৯৭৩-৭৪ সনের দিকে দেশের অস্থিরতা ঠেকাতে দেশপ্রেমিক সৈনিকদের নিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রক্ষী বাহিনী গঠন করেন। গাজী মো: জাফর আলম রক্ষীবাহিনীর চকরিয়ার সমন্বয়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। সেই সময় আলবদর ও আলসামস বাহিনীর দেশীয় দোসরদের বাড়িতে অভিযান পরিচালিত হয়েছিল। অবিভক্ত চকরিয়ায় গাজী মো: জাফর আলমের সঙ্গীয় ফোর্স দেশপ্রেমিক রক্ষী বাহিনীর জোয়ানরা রাজাকারদের অনুচরদের বাড়িতে অভিযান দিয়েছেন।

গাজী মো: জাফর আলমের বর্ণাঢ্য জীবন অনেক সমৃদ্ধ। তার পরিবারও পেকুয়ায় অত্যন্ত পরিচিত। পিতা নেছার আহমদ কন্ট্রাকটর ছিলেন পেকুয়ায় একজন মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। সমাজ সেবক ও জনদরদী হিসেবে নেছার আহমদকে পেকুয়ায় সবাই চিনতেন ও জানতেন। তার ছোট ভাই শাহনেওয়াজ আজাদ পেকুয়া সদর ইউপির ৪ নং ওয়ার্ড থেকে একাধিকবার জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। আরেক ছোট ভাই সাহাব উদ্দিনও চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত। ডা: শাহাব উদ্দিনের পরিচিতিও বেশ সমৃদ্ধ। আরেক ভাই মো: কাইছারও সরকারী চাকুরীজীবি। অপর ২ ভাই মো: রফিক উদ্দিন ও শাহরিয়ারও কর্মজীবি। গাজী মো: জাফর আলম ২ সন্তানের জনক। ছেলে মো: ফরহাদ বিন জাফর বাংলাদেশ রেলওয়েতে ষ্টেশন ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। এ ছাড়াও তিনি জাতীয় শ্রমিকলীগ চট্টগ্রাম বিভাগের রাজনীতিতেও জড়িত। মেয়ে ফারজানা জাফরিন একজন প্রাইমারী শিক্ষক। কক্সবাজার শহরের হাজীপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মেয়ে ফারজানা জাফরিন। পুত্রবধূ ফাহামিদা মেরিন পেকুয়া মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। গাজী মো: জাফর আলমের সহধর্মিণী ফরিদা খানম চৌং ও একজন শিক্ষিকা। কক্সবাজার পৌরসভা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে তিনি অবসর নিয়েছেন।

এ দিকে গাজী মো: জাফর আলমকে বীর মুক্তিযোদ্ধা চুড়ান্ত স্বীকৃতি দেওয়ায় অভিনন্দন জানিয়েছেন পেকুয়া উপজেলাবাসী।