প্রেস বিজ্ঞপ্তি:
কক্সবাজারের রামু উপজেলা পরিষদ ভবনকে পেছনে ফেলে সামনে মার্কেট নির্মাণকে কেন্দ্র করে এলাকার সচেতন মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এ মার্কেট নির্মাণ করা হলে ঐতিহ্যবাহি ও দৃষ্টিনন্দন রামু উপজেলা পরিষদ ভবন এর সৌন্দর্য ভূলুন্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি এলাকাটি হাটবাজারে পরিনত হবে। এতে উপজেলায় সেবা নিতে আসা লোকজনকে ভোগান্তি পোহাতে হবে।
সচেতন মহলের দাবী, উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন সরকারের প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র। সম্পুর্ন সরকারী অর্থায়নেই এগুলো পরিচালিত হচ্ছে। সরকারের গুরুত্বপুর্ণ উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনে এমন কোন অর্থ সংকটে পড়েনি যেখানে পুরো ভবনকে আড়াল করে সামনে মার্কেট নিমার্ণ করে দিতে হবে। এ ছাড়াও আরো নানান সমস্যার আশংকা করে সম্প্রতি রামুুর শতাধিক বিশিষ্ট নাগরিক জরুরী ভিত্তিতে এ মার্কেট নির্মাণ বন্ধের দাবী জানিয়ে কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল এর কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে- কক্সবাজার জেলায় শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ক্রীড়ার প্রাণকেন্দ্র রামু উপজেলা। পুরো জেলায় রামু উপজেলার গৌরবোজ্জ¦ল ইতিহাস রয়েছে। এরকম একটি ঐতিহ্যবাহি উপজেলার প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র মার্কেটের আড়ালে ঢাকা থাকবে বিষয়টি ভাবতেই আমাদের অবাক লাগছে। এছাড়াও উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি ওই স্থানে অবস্থিত। এরকম গুছানো, পরিপাটি একটি পরিবেশে প্রধান সড়কের পাশ ধরে মার্কেট নির্মাণ করা হলে প্রশাসনিক এ এলাকাটি ঘিঞ্জি পরিবেশে পরিনত হবে। এতে উপজেলার সৌন্দর্য্য হানির পাশাপাশি সেবা নিতে আসা সাধারণ লোকজনকে ভোগান্তি পোহাতে হবে।
আবেদনে আরো উল্লেখ করা হয় সরকারের অতি গুরুত্বপুর্ণ উপজেলা পরিষদ এলাকা ঘিরে মূলত শিল্পকলা একাডেমী, ক্রীড়া কমপ্লেক্স, প্রেসক্লাবসহ এলাকার ইতিবাচক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে দৃষ্টিনন্দন ভাবে এরকম প্রতিষ্ঠানগুলোই থাকা উচিত। কিন্তু ইতিবাচক চিন্তার বাইরে এসে মার্কেট নির্মাণের সিদ্ধান্তের বিষয়টি আমাদের কাছে দুরভিসন্ধিমূলক আচরণ বলে মনে হচ্ছে। আমরা ধারনা করছি, দায়িত্বশীলরা আর্থিক ফায়দালুটার জন্য এ রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সম্প্রতি রামু উপজেলা পরিষদের সামনে প্রধান সড়কের পাশে বিআরডিবি অফিস সংলগ্ন একটি ছোট হোটেল (শেরাটন)কে আরো বড় পরিসরে নতুন ভাবে নির্মাণ করে। জানা গেছে, বিআরডিবি কর্তৃপক্ষসহ উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে হোটেলের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়।
এর কয়েকদির পরই দেখা যায়, উপজেলা পরিষদের জমিতে আরো তিনটি পাকা দোকানঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। নিয়ম বহির্ভুত ভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ড্রাইভার, উপজেলা চেয়ারম্যানের কম্পিউটার অপারেটর ও এলজিইডির এক কর্মচারি সরকারি জায়গায় এ দোকান গুলো তৈরী করছিলো বলে জানা গেছে।
কিন্তু দোকান নির্মাণ কাজ চলাকালীন সময়ে রাতের আঁধারে কে বা কারা নব নির্মিতব্য দোকানের দেয়ালের একাংশ ভেঙ্গে দেয়। এতে ক্ষুব্দ হয় উপজেলার কর্তাব্যক্তিরা। এ ঘটনার জের ধরে পরপরই গত ১৪ জুন কক্সবাজারের স্থানীয় পত্রিকায় এক হাজার টাকা সিডিউল, ৫০ হাজার টাকার পে-অর্ডার ও ৫ লক্ষ টাকা জামানতসহ বিভিন্ন শর্তে ২০টি দোকান বরাদ্ধের দরপত্র আহবানের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে উপজেলা পরিষদ। রামু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোহেল কাজল দোকান বরাদ্ধ কমিটির সভাপতি হিসেবে এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তিতে ২৪ জুন পর্যন্ত উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর কার্যালয়ে দোকান বরাদ্দের ফরম জমা দেয়ার শেষদিন ছিল।
উপজেলা পরিষদের সরকারি জমিতে মার্কেট নির্মাণ বিষয়ে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে রামু উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাধারণ সম্পাদক তপন মল্লিক জানান, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সরকারের এমন কোন অর্থসংকট নেই, যেখানে উপজেলা পরিষদের মতো গুরুত্বপূর্ন কার্যালয়কে আড়াল করে মার্কেট নির্মানের আয় দিয়ে উপজেলা পরিষদ চালাতে হবে। এটি সরকারকে হেয় প্রতিপন্ন করার সামিল।
তিনি বলেন, সরকার বা উপজেলা পরিষদ নয়, শুধুমাত্র উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের ব্যক্তিগত ভাবে আর্থিক লাভবানের জন্য এ অ-সুন্দর কাজটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা অবিলম্বে মাননীয় সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসক এর কাছে এ মার্কেট র্নিমাণ বন্ধের জোর দাবী জানাচ্ছি।