নিজস্ব প্রতিবেদক,

কোভিড-১৯ মহামারীকে প্রতিহত করার অংশ হিসেবে প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা ঘরের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সেচ্ছাসেবী সংগঠন ব্র‍্যান্ডিং কক্সবাজার। কক্সবাজার অক্সিজেন ব্যাংক পয়লা জুলাই থেকে এ সেবা দেওয়া আরম্ভ করবে।

সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ‘ব্র‍্যান্ডিং কক্সবাজার’র সৌজন্যে যুবনেতা ইশতিয়াক আহমেদ জয়ের উদ্যোগে নগরীর ১২ টি ওয়ার্ডের যেকোন বাসিন্দা বিনামূল্যে এ সেবার আওতাধীন আসতে পারবে।

রোববার (২৭জুন) সকালে ব্র‍্যান্ডিং কক্সবাজারের প্রতিষ্ঠাতা ইশতিয়াক আহমেদ জয় সাক্ষরিত এক বিবৃতিতে ও স্যোশাল মিডিয়ার বরাতে এ ঘোষণা দেন।

ব্যান্ডিং কক্সবাজার এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক,অক্সিজেন ব্যাংকের নির্বাহী কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহমেদ জয় বলেন, সেবাপ্রত্যাশী এবং সংশ্লিষ্ট সকলের স্বার্থ বিবেচনায় রেখে আমরা কক্সবাজার ‘অক্সিজেন ব্যাংক কতৃপক্ষ’ অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার নীতিমালা প্রনয়ণ করেছি।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক মহামারী কোভিড -১৯ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে পুরো বিশ্ব যখন বিপর্যস্ত তখন আমাদের দেশেও এর ভয়াবহতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এই পরিস্থিতি সামনে হয়তো আরও প্রকট হতে পারে।

আমরা জানি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সব রোগীর ক্ষেত্রে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয় না। করোনা আক্রান্ত রোগীর এক পর্যায়ে শ্বাস-প্রশ্বাসে ব্যাপক সমস্যা দেখা দিলে এসময় কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য অক্সিজেন গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে। শুধু করোনা আক্রান্ত রোগী নয়, অন্যান্য রোগীর জন্যও অক্সিজনের প্রয়োজন হতে পারে।

এসময় তিনি আরও বলেন— এমতাবস্থায় অক্সিজেন মজুদ করা ও এর মূল্য বেশী হওয়ায় রোগী তাৎক্ষণিকভাবে অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারছে না।

এই অবস্থা হতে উত্তরণের জন্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ব্র্যান্ডিং কক্সবাজারের উদ্যোগে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা প্রদানের লক্ষে প্রাথমিক ভাবে ৬ টি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে “কক্সবাজার অক্সিজেন ব্যাংক”র আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করি।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইশতিয়াক আহমেদ জানান, আপনাদের সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমরা অবশ্যই এই করোনাকাল অতিক্রম করতে সক্ষম হবো।

ইতোমধ্যে অক্সিজেন ব্যাংক ৬ টি নীতিমালা প্রকাশ করেছেঃ

১.)
অক্সিজেন সেবা গ্রহন করার প্রথম শর্ত হলো চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র। চিকিৎসকের লিখিত পরামর্শ ব্যতীত আমরা কোনো ভাবেই অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারবো না। অক্সিজেন সিলিন্ডার নেওয়ার সময় অবশ্যই রোগীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নিয়ে আসতে হবে।

২.)
অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহারের জন্য কতৃপক্ষকে কোন ফি দিতে হবে না এবং কোন জামানতও জমা দিতে হবে না।

৩.)
যেহেতু আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে সেহেতু আমরা কেবল জরুরী প্রয়োজনে দিতে চাই। আমরা মুমূর্ষু রোগীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এই উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। যেহেতু তাৎক্ষণিক ভাবে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় না, তাই প্রাথমিক সাপোর্টের জন্য আমরা এই উদ্যোগ গ্রহণ করি। অক্সিজেন প্রদান করার পর প্রাথমিক ভাবে রোগীর কাছে ২৪ঘন্টাই সিলিন্ডারটি থাকবে। এর মধ্যে রোগীর অবস্থার পরিবর্তন না হলে আরও অক্সিজেন সর্বরাহ করা হবে।

৪.)
কতৃপক্ষ সিলিন্ডার এবং সম্পূর্ণ সেট বুঝিয়ে দেবে। আমাদের উদ্যোগে স্বেচ্ছাসেবী ভলান্টিয়ার এবং ইন্টার্ন ডাক্তাররা প্রয়োজনে সঠিকভাবে অক্সিজেন দেয়া এবং ফ্লো-নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে পরামর্শ দিবেন।
অথবা আপনি নিজস্ব ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেটি লাগাতে পারেন।

৫.)
প্রাথমিকভাবে সেবাটি কক্সবাজার পৌরসভার আওতাধীন ১২ টি ওয়ার্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।

৬.)
ব্যাবহারকারী রোগীর ভূলে কোনো দুর্ঘটনা হলে তার দায়ভার কতৃপক্ষ নেবেনা। এই মর্মে একটি অঙ্গীকারনামা স্বাক্ষর করতে হবে।

সেচ্ছাসেবী সংগঠনটির পরিচালক আরও বলেন, সবার সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে এই কার্যক্রম আমরা চালিয়ে যেতে চাই।
আমরা সবাই আগের মতন একটি সুস্থ্য স্বাভাবিক পৃথিবীতে ফিরে যেতে চাই। সকলের সচেতনতা ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় আমরা করোনা মহামারিকে পরাজিত করব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।