সিবিএন ডেস্ক:
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) মাধ্যমে ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ হচ্ছে। ৫০টির উদ্বোধনও হয়েছে। মসজিদ নির্মাণ ও যাবতীয় ব্যয় বহন করলেও মসজিদ পরিচালানার দায়িত্ব পায়নি ইফা। স্থানীয় প্রশাসনই পরিচালনা করবে মসজিদগুলো।

সূত্র জানায়, মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র পরিচালনা নীতিমালা ২০২১ অনুসারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসককে পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারাই মসজিদের জনবল নিয়োগ দেবেন।

এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, দেশের প্রতি জেলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অফিসের পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। ইসলামিক মিশন, প্রকাশনা, ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি, মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে ফাউন্ডেশনের বিভাগীয় ও জেলা অফিসেও। মডেল মসজিদ পরিচালনার সক্ষমতা ফাউন্ডেশনের রয়েছে।

জনবল নিয়োগ ও পরিচালনা সঠিক পদ্ধতিতে না হলে সরকারের এ মহৎ উদ্যোগ ব্যর্থতায় পরিণত হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন আলেমরা।

জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা নুরুল হুদা ফয়েজী বলেন, ‘মডেল মসজিদগুলোর সুফল নিশ্চিত করতে আমরা সরকারে কাছে কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরেছি। যোগ্য আলেম নিয়োগ ও নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ রাখতে আলেমদের সমন্বয়ে নিয়োগ বোর্ড গঠনের প্রস্তাব করেছি।’

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে জেলা-উপজেলায় একটি করে উন্নত মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপন (১ম সংশোধিত) প্রকল্পের জন্য ৮ হাজার ৭২২ কেটি টাকা অনুমোদিত হয়। সৌদি সরকার অর্থায়নের প্রস্তাব করলেও শেষ পর্যন্ত বরাদ্দ দেয়নি।

জেলা শহর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রতিটি মসজিদ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ কোটি ৬১ লাখ ৮১ হাজার টাকা। উপজেলা পর্যায়ে ১৩ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার এবং উপকূলীয় এলাকায় ১৩ কোটি ৬০ লাখ ৮২ হাজার টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসলামিক ফাউন্ডশেনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ‘ইফার মাঠপর্যায়ে উপ-পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তার রয়েছেন। তারা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি হিসেবে মসজিদ পরিচালনা করতে সক্ষম। প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন ও জনগণকে সম্পৃক্ত করা যেতো। মসজিদ সব খরচ হবে ফাউন্ডেশনের টাকায় অথচ পরিচালনা করবেন আমলারা। ইতোমধ্যে অনেক জায়গায় মসজিদ উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে জুতা নিয়ে প্রবেশ, ছবিযুক্ত ব্যানার মসজিদে লাগানো নিয়ে বির্তক তৈরি হয়েছে।’

পরিচালনা কমিটিতে যারা থাকছেন
নীতিমালায় বলা হয়েছে, উপজেলায় স্থাপিত মডেল মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি হবেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। স্থানীয় সংসদ সদস্য হবেন প্রধান উপদেষ্টা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হবেন উপদেষ্টা। কমিটির সদস্য হবেন- মেয়র (পৌরসভার ক্ষেত্রে), উপজেলা প্রকৌশলী, থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি), সভাপতি মনোনীত স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলিম ব্যক্তিত্ব, চেয়ারম্যান (উপজেলা পরিষদ), সভাপতি মনোনীত স্থানীয় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ/মুহতামিম, মডেল মসজিদের ইমাম, মসজিদ সরকারি প্রতিষ্ঠানের জমিতে হলে সংশ্লিষ্ট দফতরের মনোনীত প্রতিনিধি, ব্যক্তি জমিদাতা হলে তিনি বা তার প্রতিনিধি। মসজিদ কমিটির সদস্য সচিব হবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ফিল্ড সুপারভাইজর/সহকারী পরিচালক।

জেলায় স্থাপিত কমিটির সভাপতি হবেন জেলা প্রশাসক। স্থানীয় সংসদ সদস্য হবেন উপদেষ্টা। সদস্য হবেন, পুলিশ সুপার, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, পৌরসভা মেয়র, গণপূর্ত অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী, সভাপতি মনোনীত স্থানীয় ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি, সভাপতি মনোনীত স্থানীয় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ/মুহতামিম, মডেল মসজিদের ইমাম প্রমুখ।

সিটি করপোরেশন এলাকার মডেল মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি হবেন জেলা প্রশাসক। সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশনের মেয়র হবেন উপদেষ্টা। সদস্য হবেন, উপ-পুলিশ কমিশনার, গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী মনোনীত স্থানীয় অফিসের কর্মকর্তা, সভাপতি মনোনীত স্থানীয় ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি, সভাপতি মনোনীত স্থানীয় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ/মুহতামিম প্রমুখ।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রকল্পে মসজিদ নির্মাণ হচ্ছে। বেতন-ভাতা ও খরচ আমরাই দেবো। কিন্তু পরিচালনা করবে স্থানীয় প্রশাসন।’

তবে সকল মডেল মসজিদ নির্মাণ শেষ হলে এবং জনবল কাঠামো অনুমোদন হলে মসজিদগুলোর পরিচালনার দায়িত্ব ইফা পাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. মো. মুশফিকুর রহমান। -বাংলাট্রিবিউন