সোয়েব সাঈদ, রামু:
রামুতে মাদকের আখড়া হিসাবে পরিচিত হাইটুপির চেরাংঘাটা এলাকায় এবার দিন দুপুরে ক্ষেমানী বড়ুয়া নামের ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধাকে ছুরিকাঘাত করে স্বর্ণের অলংকার, মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে। এ সময় সন্ত্রাসীরা ওই বৃদ্ধের গলা, কাঁধ ও হাতসহ শরীরের কয়েকটি স্থানে ছুরিকাঘাত করে। বর্তমানে আশংকাজনক অবস্থায় তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
শুক্রবার (২৫ জুন) বেলা আড়াইটার দিকে এ মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যায় রামু থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ছুরিকাহত বৃদ্ধা ক্ষেমানী বড়ুয়া (৭০) রামুর পূর্ব রাজারকুল বড়ুয়ার পাড়ার অমিয় বড়ুয়ার স্ত্রী। পেশায় দুধ বিক্রেতা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, পাশ্ববর্তী ফুলনীর চর গ্রামের মো. নুর কবিরের ছেলে এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারী ও সন্ত্রাসী মো. সুমনের (৩০) নেতৃত্বে তিন-চারজন এ ঘটনা ঘটিয়েছে। পরে স্থানীয় লোকজন অজ্ঞান অবস্থা থেকে ওই বৃদ্ধকে উদ্ধার করে প্রথমে রামু হাসপাতাল পরে সেখান থেকে কক্সবাজার সদর হাসসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তবে ছুরিকাঘাতে আহত বৃদ্ধার অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া। তিনি বলেন, ওই বৃদ্ধার শ্বাসনালীর ওপরে,বাম কাঁধে এব বাম হাতে তিনটি ছুরিকাঘাত হয়েছে। গলার আঘাতটি শ্বাসনালী পর্যন্ত গেছে বলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছে। অবস্থা সংকটাপন্ন বলে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিশ্চুক প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা আড়াইটার দিকে হাইটুটি বাবুল কোম্পানীর পুরাতন স’মিলের (করাতকল) পাশে ক্ষেতের মধ্যে ওই বৃদ্ধার চিৎকার শুনতে পেয়ে তারা এগিয়ে যান। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের ধারনা টাকা ও স্বর্ণ লুটের জন্য এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
বৃদ্ধার পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, বৃদ্ধার কোমরে বাঁধা কাপড়ের জালির মধ্যে স্বর্ণের হার (কন্ডির ছড়া), নগদ সাত হাজার টাকা এবং হাতে একটি পুরনো মোবাইল ছিল। এসব লুট করেছে।
রাজারকুল ইউপি সদস্য রিটন বড়ুয়া বলেন, ওই বৃদ্ধাকে কক্সবাজার হাসপাতালে দেখতে গিয়েছি। গলায় ও কাঁধে ছুরিকাঘাত এর ফলে তার অবস্থা বর্তমানে সংকটাপন্ন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) সদস্য বিজন বড়ুয়া জানান, তিনজন যুবক বৃদ্ধাকে ছরিকাঘাত করে সর্বস্ব লুট করে। ছিনতাইয়ে জড়িতরা এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ি এবং সন্ত্রাসী। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে।
রামু থানার নবাগত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ারুল হোসাইন জানান, খবর পাওয়ার সাথে সাথে আমি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা জানা গেছে। এটা নিয়ে পুলিশ কাজ করছে। ওসি বলেন, ওই এলাকায় এটি ছাড়াও আরও কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সুমন একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারী। সুমন ও তার সহযোগিরা নাইক্ষ্যংছড়ি ও সোনাইছড়ি থেকে বাংলা মদ এনে দীর্ঘদিন ধরে চেরাংঘাটা মাদকের আঁখড়ায় পাইকারী মূল্যে সরবরাহ করে আসছে। এমনকি গত এক সপ্তাহে চেরাংঘাটা এলাকায় অন্তত পাঁচটি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে এই সুমন। মাদক ব্যবসার পাশাপাশি সুযোগ পেলেই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটায় এই সুমনসহ আরও একাধিক সংঘবদ্ধ চক্র। তাদের উৎপাতে অতিষ্ট এলাকাবাসী।