মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন

আমরা সবাই যে কারও ভালো সংবাদ শুনে অভিনন্দন দিই। কিন্তু এই অভিনন্দন দেওয়ার আগে আমরা কি একটু চিন্তা করে দেখেছি? এই যোগ্যতা অর্জন করতে তাকে কতই না দুঃখ কষ্ট কিম্বা গঞ্জনা সহ্য করতে হয়েছে।
একটা ছেলে কিংবা মেয়ে কি পরিমাণ কষ্ট করে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে সম্মানে ভর্তি নেয়। কোনো রকম পরিবারের সহায়তা নিয়ে সম্মান ১ম বর্ষ পাশ করে। ২য় বর্ষ থেকে পরিবার আর তেমন সহায়তা দেয় না। যারা একটু উচ্চবিত্ত পরিবারের তারা কোনো রকম চলতে পারে। কিন্তু গরিব ও মধ্যবিত্ত অনেকের হাজারো উদাহরণ আছে, যারা পেটপুরে দু’বেলা দু’মুঠো খেতে পারে না।
তবে হ্যাঁ তারা কিন্তু কাউকে বুঝতে দেয় না।

খুব সম্ভবত টিউশন পদ্ধতি যদি না থাকতো, তাহলে আল্লাহ ভালো জানতো বাংলাদেশে কত শতাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারতো? তজ্জন্যে টিউশনির অভিভাবকদেরকে হাজারো সালাম…🙏🙏
আজ আপনারা সহযোগিতা করেন বলে,
লক্ষ লক্ষ মেধাবী গরিব শিক্ষার্থী সোনার হরিণ নামক গ্র‍্যাজুয়েশন সম্পন্ন করতে পারে।

তাছাড়া ৩য় ও ৪র্থ বর্ষ থেকে শুরু হয় চাকরির চিন্তা। কিন্তু তারপরও যখন অনেক পরিশ্রম করে সেশন বাই সেশন পাশের পর সম্মান সম্পন্ন করে তখন থেকে আরও চীনের প্রাচীরের মত দুঃখ ভর করে তার উপর। এরপর থেকে শুরু হয় জীবনের সবচেয়ে কঠিন দিন গুলো। একেকটা দিন মনে হয় একেকটা বছরের মতো। প্রত্যেকটা দিন চাকরি নামক সোনার হরিণ পাওয়ার জন্য হন্যে হয়ে পড়ালেখা শুরু করে। অনেকে বছরের দুই ঈদেও বাড়ি যেতে চাই না।
কারণ সেখানে সবাই জিজ্ঞেস করে এখনো একটা চাকরি পেলি না? কি পড়ালেখা করলি! বাবা-মাও বলে আসলে তোকে দিয়ে কিছুই হবে না। তখন পৃথিবী থেকে চলে যেতে ইচ্ছে করে। ধর্মীয় আর পারিবারিক দায়বদ্ধতা না থাকলে হয়তো অনেকেই এই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতো। সত্যি বলতে কি;
কেউ তখন পাশে থাকে না। হতাশা তখন কুঁড়ে কুঁড়ে খায় প্রতিনিয়ত। কিন্তু যখনই অমানুষিক ত্যাগ তিতিক্ষা,পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সফলতা নিজ থেকে ধরা দেয়।
তখন সমাজ,প্রতিবেশী এমনকি রাষ্ট্র বাহ্বা দেয়।

মূলত আমি অভিনন্দন জানানোর বিরুদ্ধে বলছি না। কিন্তু অভিনন্দন দেওয়ার পাশাপাশি আমরা কেন তাদের বিপদের সময় পাশে থাকি না? কেন তাকে বলি না হতাশ হইও না। সফলতা আসবেই একদিন। পিঠ চাপড়ে কেন বলতে পারি না তুমি অবশ্যই পারবে।
খুব দুঃখ লাগে এই ভেবে ;
যেই সফল হইছে সেই বলতে পারে কি পরিমাণ সংগ্রামের বিনিময়ে সফলতার শিখরে পৌঁছাতে হয়েছে তাকে।
কিন্তু সমাজ তাকে নিয়ে কত উল্লাস করে অভিনন্দন জানায়। অভিনন্দন ভাইয়া,আপু,চাচা,মামা ইত্যাদি। কিন্তু যে সফল হয়েছে তার উল্লাসটা একটু ব্যতিক্রম ও ভিন্ন মাত্রার হয়। অশ্রুসিক্ত নয়নে সেজদায় পড়ে মহান রবের দরবারে শুকরিয়ায় কপাল ঠুকে।

পরিশেষে বলতে চাই, আসুন আমরা সবাই সুখের সময় যেভাবে পাশে থাকি।
ঠিক তেমনি বিপদের সময়ও পাশে থাকার চেষ্টা করি। আমাদের এই সমাজের অদ্ভুত নিয়মগুলো পরিবর্তন করি।
তেলা মাথায় তেল না দিয়ে, অর্থের অভাবে হাজারো মেধাবী শিক্ষার্থীর ঝরে পড়া রোধে তাদের পাশে থেকে সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ বিনির্মানে একযোগে কাজ করি।
কঠিন সময়ে পাশে থেকে একটি সাবলীল পদ্ধতি তৈরি করি।
যাতে আমি আপনি সবাই সম্মিলিতভাবে সুন্দর জীবন-যাপন করতে পারি।

 

মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন।
সম্মান, চতুর্থ বর্ষ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ।
কক্সবাজার সিটি কলেজ।