বদরুল ইসলাম বাদল:
২৪ এডভোকেট আমজাদ হোসেনের মৃত্যু বার্ষিকী। কক্সবাজার আদালত প্রাঙ্গনে পেশাদায়িত্ব পালনকালে ২৪ জুন ২০১৯ কক্সবাজার সদর হাসপাতালে সিকিত্সাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।তিনি কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি। চকরিয়া পৌর সভার প্রথম প্রশাসক ছিলেন। বিনম্র শ্রদ্ধা এবং ভালবাসা। আল্লাহ উনাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের বাসিন্দা করুন।
কক্সবাজারের সাবেক জেলা ও দায়রা জজ খন্দকার হাসান মোহাম্মদ ফিরোজ সাহেবের ভাষায় ” কক্সবাজার আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট আমজাদ হোসেন ছিলেন একজন বহু গুণাবলী সম্পন্ন সর্বজন শ্রদ্ধেয় মানুষ। তার বিশাল ব্যক্তিত্ব নৈতিকতায় মানুষ মুগ্ধ হতো। মানুষকে আপন করে নেওয়ার তাঁর সদিচ্ছা ও সদাচারণ মানুষ চিরদিন মনে রাখবে। (সভা -ফুল কোর্ট রেভারেন্স)
ইতিহাসের বাঁকে ক্রান্তিকালীন সময়ে কিছু ঐতিহাসিক চরিত্র মানুষের মনে জায়গা করে নেয়। যা পরবর্তি প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার আলোক বর্তিকা হয়ে থাকে। চেতনার উত্স হয়ে সাহস যোগায়।সৃষ্টিশীল সেই মানুষেরা তাদের নিজস্ব সৃষ্টিজাত অবস্থানে আলোকিত হয়ে থাকে ।এডভোকেট আমজাদ হোসেন এই জনপদের রাজনীতির আকাশের তেমনি এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। পচাত্তরের আগস্টের পর বাংলাদেশের
রাজনীতির ইতিহাস মহা দুর্যোগের।স্বৈরশাসক জেনারেল জিয়া এবং তার পরবর্তী সময়ে এরশাদ ক্ষমতা জবর দখল করার পর রাজনীতিবিদের জন্য রাজনীতি করার পথ কঠিন হয়ে যায়। টাকা দিয়ে নানা প্রলোভন দেখিয়ে নেতাদের চরিত্র হরণ কিংবা ভয় দেখিয়ে দলে বিড়ানো নিত্যকার হঠকারী কৌশলে রাজনীতিবিদদের ইমেজ নষ্ট করে ফেলে ।জেল জুলুম নির্যাতন অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা। বঙ্গবন্ধুর নাম নেয়া এক প্রকার নিষিদ্ধ। ,আওয়ামী লীগের নামে যত অপপ্রচার। সেনা শাসকের ভয়ে জনগণ রাজনীতি বিমুখ।সারাদেশে আওয়ামী পরিবারের রাজনীতি নির্বাসিত।কারফিউ তন্ত্রের সাধনরীতিতে মানুষের রাজনৈতিক অধিকার খাঁচায় বন্দী। সেই সময়ে সাহসী ভূমিকা নিয়ে উপ শহর চকরিয়ায় আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করার জন্য সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসেন তরুণ আইনজীবী আমজাদ হোসেন। কঠিন সময়ে কয়েক জন নিবেদিত প্রান নেতা সাথে নিয়ে শুন্যের কোটায় নেমে যাওয়া সংগঠনকে একটি শক্তিশালী দৃষ্টিনন্দন সংগঠনে পরিণত করেন তিনি।,নিঃস্বার্থ বঙ্গবন্ধু আদর্শের একজন আপোষহীন নেতা ছিলেন এড আমজাদ হোসেন ।চিন্তা চেতনায় স্বচ্ছতাএবং আদর্শবোধ জীবন দর্শন নিয়ে চকরিয়া তথা কক্সবাজারের রাজপথের তিনি তাই পরম শ্রদ্ধেয়।
সমাজ কিংবা রাজনীতির মধ্যে সবাই নেতা হয়ে সকলের প্রিয় জন হয়ে উঠে আসা সহজ কোন কাজ নয়।নিজের প্রতিভা এবং ক্যারিশমাটিক উপস্থাপনা দিয়ে সময়কালের উল্লেখ যোগ্য স্থান দখল করে নিতে পারে কিছু সংখ্যক মানুষ। কানাডিয়ান লেখক রবিন শর্মার মতে “নেতৃত্ব কোন টাইটেল বা পদ নয়,নেতৃত্ব হল একজন মানুষের অন্যদের প্রভাবিত ও অনুপ্রাণিত করার ক্ষমতা”। সেই নিরিখে এই জনপদের শীর্ষ নেতৃত্বের অন্যতম এডভোকেট আমজাদ হোসেন।
আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে বেড়ে উঠা আমজাদ বদ্দা ভিন্ন দলের নেতা কর্মীদের কাছে ও পরম প্রিয়ভাজন ছিলেন। পরম আত্মীয়ের মতো সব দলের নেতা কর্মীদের তিনি সমানে সম্মান করতেন,তাই পেয়েছেন দলমত নির্বিশেষে সবার অকৃত্রিম ভালবাসা। মনে হয় আমজাদ বদ্দার অনুপস্থিতিতে উনার পরশ রয়েছে সবার অন্তরে। ভালবাসায়,অনুভবে, স্মৃতিতে আজীবন।কারণ তিনি দিয়ে গেছেন নিরহংকার, নির্লোভ সুস্থির রাজনীতির পাঠদান। তাই তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সকল কর্মীদের মাঝে বেচে থাকবেন চিরকাল।
এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের কারানির্যাতিত নেতা তিনি। স্বৈরশাসন এবং বি এন পি জামাত জোট সরকারের সময়ে অত্যাচারীত নেতা কর্মীদের শক্তি ও সাহসের অনুপ্রেরক হয়ে আগলাইয়া রাখতেন ।আইনি সহায়তা দিয়ে নেতাকর্মীদের সহযোগিতা করতেন ইতিবাচক মানসিকতার রাজনৈতিক গুনের অধিকারী আমজাদ বদ্দা সকলের সব সময় খবরাখবর রাখতেন।
দলনেত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই বলে থাকেন, অর্থ উপার্জন ব্যক্তিগত সুখ -সমৃদ্ধির, লাভের জন্য তিনি রাজনীতি করেন না,তিনি দেশ এবং জনগণের সমৃদ্ধির জন্য রাজনীতি করছেন, কাজ করে যাচ্ছেন।” রাজনীতি হল দেশের জন্য মানুষের জন্য সেবা করার একটি প্রতিষ্ঠান। কি পেলাম সেটা বড় কথা নয় কি করতে পারলাম সেটাই আসল”। দল দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকায় হাজার সুযোগ থাকার পরও আমজাদ হোসেন অনৈতিক সুবিধা নেয় নাই। সত্, নিবেদিত বঙ্গবন্ধু কর্মী হিসেবে কাজ করে গেছেন। একজন নির্লোভ নিরহংকারী আপাদমস্তক বঙ্গবন্ধু প্রেমী রাজনীতিবিদ হিসেবে তাই তিনি বিতর্কের উর্ধ্বে সবার আস্তার ঠিকানা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ উন্নয়ন অব্যাহত হলেও রাজনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে বলে মনে হয় না।গনতান্ত্রিক দেশের কাঠামোতে আওয়ামী লীগ সরকারই শেষ সরকার মনে করা টিক নয়।রাজনীতিতে অতীত ভুলতে নাই।আজ হতাশা ভুল বুঝাবুঝি অবিশ্বাস তর্কনির্ভর রাজনৈতিক সংস্কৃতি অতীতের সব ঐতিহ্যে গৌরব মর্যাদা হারিয়ে যাচ্ছে।রাজনীতিতে আদর্শের চর্চা,চিন্তা বিমুখ।শুধু প্রচার ও গতানুগতিক বক্তৃতার মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাই রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাত ছাড়া হয়ে ব্যবসায়ী,মধ্যস্বত্বলোভী দের হাতে চলে গেছে।
তাই এখন সময় হয়েছে সতর্ক হবার।মুজিব বর্ষে বঙ্গবন্ধু চর্চার করি।নৈতিকতার, রাজনৈতিক শিক্ষা গ্রহণ করি।সেই ধারাবাহিকতায় সফল নেতাদের পাশাপাশি এডভোকেট আমজাদ হোসেন ও রাজনৈতিক পাঠ এই জনপদের।
“আমজাদ হোসেন তোমাকে আজ বড় প্রয়োজন। তুমি এস আমাদের মাঝে সংযমের বেশে আত্মসমালোচনার আয়না নিয়ে আর হতাশা ব্যথিত হ্নদয় ঝেড়ে একনিষ্ঠ ঐক্যের ঐক্যবদ্ধ জাগরণের বংশিবাদক হয়ে”। কবির ভাষায় —
“তোমার ত্যাগের মন্ত্র আমরা আবার নবো যে দীক্ষা
তোমার দেখানো পথেতে হা্ঁটবো নিয়ে তোমারই শিক্ষা।”
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

লেখক
বদরুল ইসলাম বাদল
কলামিস্ট, নব্বই দশকের সাবেক ছাত্র নেতা
badrulislam2027@gmail.com