ইমাম খাইর, সিবিএন:
আগামী ২৪ জুন থেকে কক্সবাজারের আবাসিক হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউস ৫০% কক্ষ বুকিংসহ শর্ত সাপেক্ষে খোলার অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন।
সোমবার (২১ জুন) জেলা প্রশাসনের সভা থেকে ঘোষণাটি আসে।
করোনার কারণে দীর্ঘ প্রায় তিন মাস বন্ধ থাকার পর খোলার অনুমতি পেয়ে বেশ কিছু আবাসিক হোটেলে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ও ধোয়ামোছার কাজ চলছে। আসতে শুরু করেছে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
মঙ্গলবার (২২ জুন) বিকালে সরেজমিন হোটেল মোটেল জোন ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন আসবাবপত্র ধুয়ে পরিস্কার করা হচ্ছে। সাজাচ্ছে রিসিপশন। তবে, বেশিরভাগ হোটেল, কটেজ খোলার লক্ষণ চোখে পড়ে নি। রয়েছে সেই আগের ‘বন্ধ’ হালতেই। শেকলবন্দি দরজায় ঝুলছে তালা।
কারণ অনুসন্ধানে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের অসন্তুষ্টির কথা বেরিয়ে এসেছে। সমুদ্রসৈকত বন্ধ রেখে শুধু আবাসিক হোটেল খোলা রাখার সিদ্ধান্তকে মানতে নারাজ কর্মরতরা।
তারা বলছে, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ রেখে শুধু হোটেল খোলা রেখে লাভ কি? খালি হোটেলে কেউ কি ঘুমাতে আসবে?
এদিকে, কক্সবাজারে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়ার দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছিল এখানে কর্মরতরা। অবশেষে তাদের দাবি, জীবন জীবিকা ও করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে হোটেল-মোটেল খোলার অনুমতি দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
এ বিষয়ে আবাসিক হোটেলে কর্মরতদের সঙ্গে কথা হয়। তারা তুলে ধরেছেন অতীত ও বর্তমানের চিত্র। ব্যক্ত করেছে নিজেদের প্রতিক্রিয়া। জানিয়েছেন আবেদন।
হোটেল আমারি রিসোর্টের ম্যানেজার মু. মনজুর আলম বলেন, সাগরপাড়সহ বিনোদনকেন্দ্রগুলো যদি খুলে দেওয়া না হয়, তাহলে তো এখানে পর্যটক আসবে না। পর্যটক না আসলে হোটেল খোলা-না খোলা সমান।
তাছাড়া ৩০ জুন পর্যন্ত ঢাকায় পুরোপুরি লকডাউন থাকলে এখানে পর্যটক আসবে কিভাবে? এভাবে যদি সারাদেশে লকডাউন থাকে, কক্সবাজারের অবস্থা খুবই সুচনীয় হয়ে পড়বে।
তিনি বলেন, কক্সবাজারে বেড়াতে আসা প্রায় ৮০ শতাংশ লোক বাইরের। বিনোদনকেন্দ্রসমূহ বন্ধ থাকলে তারা কি এমনে ঘুমাতে আসবে?
মনজুর আলম বলেন, আবাসিক হোটেলের হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী বেকার। মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের প্রতি কেউ তাকাচ্ছে না। বিষয়টি বিবেচনার জন্য প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
মঙ্গলবার বিকালে কলাতলীর আবাসিক হোটেলগুলোর দৃশ্য দেখতে গিয়ে কথা হয় ‘এ’ ব্লকের ২৭ নং প্লটে অবস্থিত গ্র্যান্ড বীচ রিসোর্টের ম্যানেজার মো. রেদওয়ানুর রহমানের সঙ্গে। জানালেন দুঃখের কথা।
তিনি বলেন, ২৪ জুন থেকে হোটেল খোলার সিদ্ধান্তকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাই। কিন্তু তাতে আমরা সন্তুষ্ট নই। প্রায় তিনমাস ধরে খুব কষ্টে, বাসায় বসে আছি। মালিকরাও হোটেল বন্ধ রেখে বেহাল অবস্থায়। এরমধ্যে বীচ বন্ধ রেখে হোটেল খোলার যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে তাতে ব্যবসার কোন পরিবর্তন হবে না। বেড়াতে না পাররে কি এখানে কেউ এমনে আসবে? গেস্ট না আসলে হোটেল খোলা রেখে লাভ কি?
রেদওয়ানুর রহমান বলেন, এমনিতেই আমরা প্রতিমাসে লক্ষ লক্ষ টাকা লোকসান দিচ্ছি। হোটেল খোলে কি আরো লস দিব? বীচ খোলে না দিলে হোটেল খোলব না। দরজায় যেভাবে তালা ঝুলছে সেভাবে তালা ঝুলানো থাকবে। সঠিক সিদ্ধান্ত নিন, প্লিজ।
ওয়েলপার্ক রিসোর্টের ম্যানেজার আরিফুল্লাহ বলেন, ২৪ তারিখ থেকে হোটেল খোলবে, শুনেছি। তাতে লাভ কি? সব পর্যটন স্পট বন্ধ। হোটেল খোলে কি হবে? আমরা যেভাবে আছি সেভাবেই থাকব।
জিয়া গেস্ট ইনের ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন জানালেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ২৪ জুন থেকে হোটেল খোলার বিষয়ে একটি নির্দেশনা পেয়েছি। তার আলোকে প্রস্তুতি চলছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মস্থলে ফিরবে। তার আগে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজগুলো সেরে নিচ্ছি।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই আমরা হোটেল পরিচালনা করব। মাস্ক, স্যানিটাইজারসহ প্রয়োজনীয় সব কিছুই আমরা রেখেছি।