সিবিএন ডেস্ক:
‘বাবা, মা ও বোনকে খুন করেছি, তাদের উদ্ধার করুন। আপনাদের আসতে দেরি হলে স্বামী এবং মেয়েকেও খুন করবো।’ ৯৯৯-এ ফোন করে এভাবেই বলছিলেন মেহজাবিন। শনিবার (১৯ জুন) সকাল আটটার দিকে এ কল করেন তিনি। পরে কদমতলী থানা-পুলিশ তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে। অসুস্থ অবস্থায় মেহজাবিনের স্বামী শফিক ও তার মেয়েকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এমনটা ঘটার পেছনে অন্যতম কারণ-বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক। বিশেষ করে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক সময় না দেওয়াটাই তৈরি করেছে বড় দেয়াল। নিজেদের মধ্যে আস্থার অভাব তৈরি হয়েছে দিনে দিনে। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক কিংবা অন্য কোনও অনৈতিক সম্পর্ক যখন জানাজানি হয়ে যায়, তখনই ভুক্তভোগীদের মধ্যে এক ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যার প্রভাবে ব্যক্তি হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত ঘটাতে পারে।

সম্প্রতি বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে বেশকিছু হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ডক্টর জিয়া রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আস্থার অভাব তো আছেই, তারপরও সম্পর্কগুলো যখন জনসম্মুখে চলে আসে তখন এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়। নিরাপত্তাহীনতা ও হিংসাত্মক মনোভাবের কারণেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো ঘটছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ধরনের সম্পর্কগুলো যখন সমাজের সামনে চলে আসে তখন আরও অনেক মানুষ এতে জড়িয়ে পড়ে।’

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার মেখলা সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি এমন নয় যে, বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক আগে ছিল না। তবে সম্প্রতি এটি প্রকাশ হচ্ছে বেশি। দাম্পত্য সম্পর্কে যখন কোনও সমস্যা হয়, তখন বিষয়টি জানাজানি হলে তা মানসিক চাপ বাড়ায়। অনেকেই তা সহ্য করতে পারেন না। তখনই ব্যক্তি হিতাহিত জ্ঞান হারায় ও হত্যার মতো ঘটনা ঘটায়। আবার ক্রাইম সিরিয়ালগুলোও এ ধরনের হত্যাকাণ্ডে উস্কানি দেয়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সম্প্রতি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আস্থার অভাব বেশি দেখা যাচ্ছে। এতে আন্তরিকতা কমে যাচ্ছে। এ ছাড়া দেখা যাচ্ছে স্বামী বিভিন্ন সময়ে কাজের কারণে বাইরে থাকছে। স্ত্রী বাসায় একা। একাকিত্বের সুযোগে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আবার একইভাবে দেখা যাচ্ছে স্বামীরাও জড়িয়ে পড়ছেন বিভিন্ন বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের দিকে। একটি পরিবার কিংবা দাম্পত্য পরিচালনা করতে যে মানসিক ও সামাজিক দক্ষতা উপলব্ধির প্রয়োজন, নিজেদের প্রস্তুত করার প্রয়োজন, ওই জায়গায় মোটা দাগে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।’